কোদালা চা বাগানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭৫ কেজি

329

কর্ণফুলী নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে দৃষ্টি নন্দন, সবুজ সমতল আর উচু পাহাড় ঘিরে কোদালা চাবাগানের মনমাতানো দৃশ্য যেকাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। ১৮৬৪ সালে চাবাগনটি প্রতিষ্ঠালাভ করে। দেশের চা বাগানের মধ্যে কোদালা চাবাগানই সর্ব প্রথম। বর্তমানে গুণগত মান বজায় রেখে দেশের চা শিল্পে ৩ নং স্থানে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে অপারপর চা বাগান গুলো থেকে সুনাম ও গুণগত মান বজায় রেখে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। দেশের প্রথম চা বাগান হিসেবে তার ্ঐতিহ্য ও গুণগত মান বজায় রেখে সম্ভাবনাময় চা বাগান হিসেবে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। গুণগতমান ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোদালা চা-বাগান ব্র্যাক নেওয়ার পর বছরের পর বছর লাভের মুখ দেখে আসছে। গত ২/৩ মাস ধরে বন্য হাতির আক্রমনে কোদালা চা বাগানকে লন্ড ভন্ড করে দেয়। ইতিমধ্যে ১২ হাজার আগর চারার মধ্যে বন্য হাতির দল পায়ে পিষ্ট করে কমপক্ষে ৭ হাজার চারা বিনষ্ট করে। সরকার এ বাগান থেকে বছরে বড় ধরনের রাজস্ব পায়। অপর দিকে নগর জীবনের একপেশে ক্লান্তিময় জীবনকে মুহুর্তে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলার জন্য অবাক করা এক পর্যটন কেন্দ্রের নাম রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগান। একদিকে পাহাড় ঘেরা সবুজের সাথে মেঘের লুকোচুরির অপূর্ব সন্ধির দৃশ্য অন্যদিকে চা বাগানের পাশ ঘেঁষে লুসাই কন্যা কর্ণফুলীর মন মাতানো ঢেউ যে কাউকে মুহুর্তে সতেজ করে দেবে। এছাড়াও চা বাগানের দৃষ্টি নন্দন ্িব্রটিশ বাংলো,পাখির খিঁচিমিচির শব্দ আর চা শ্রমিকদের প্রতিদিনকার ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞ বিনোদন প্রেমিকদের স্বপ্ন দেখাবে রূপকথার অজানা এক রাজ্যের। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নে গড়ে উঠা এই চা বাগানটি দেশের প্রথম ও শীর্ষ চা-বাগান গুলোর মধ্যে অন্যতম। উৎপাদন ছাড়াও চা বাগানটি ইতিমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পর্যটন র্স্পট হিসেবে। প্রতিদিনকার শত শত পর্যটকদের আনাগোনা আর বাগানের আর্কষনীয় মনোরম দৃশ্য ধারণ করতে ছুটে আসছে বিভিন্ন ইলেকট্রন্ক্সি চ্যানেল টেলি ফিল্ম, চলচ্চিত্র নির্মাতারা। বাংলাদেশের চলচিত্রে চাবাগানের মনোরম দৃশ্যের অংশ নিয়ে সফল সিনেমা নির্মিত হয়েছে। কোদালা চাবাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক রাশেদ মাহমুদ রুবেল জানান, ২০১৮-১৯ সালে কোদালা চা বাগান কর্তৃপক্ষ বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ কেজি। তার ধারবাহিকতায় চা উৎপাদনের কাজ প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে। পুরো বাগান আধুনিক পদ্ধতিতে সেচ ব্যবস্থা স্থায়ী ইরিগেশেন সিষ্টেমের আওতায় নিয়ে আসায় বাগানে পানির সংকট নিরসন হয়েছে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ এর সার্বিক সহযোগিতায় চা বাগানের সেচ ব্যবস্থা সার্বিক ভাবে এগিয়ে চলেছে। চা বাগানের ভিতরে যাতায়াতের সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্নক সমস্যা সৃষ্টি করছে। বর্তমান শীত মৌসুম আসতেই এই চা-বাগানে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছে। জানা যায়, ১৯৭৬ সালে তৎকালীন সরকার ব্যক্তিমালিকানায় লিজ দিয়ে চা-বাগানগুলো ছেড়ে দেন। এর মধ্যে প্লান্টাস বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কোদালা চা-বাগান পরিচালনা করে আসছে। লোকসানের কবলে ১৯৯৩ সালে প্লান্টাস বাংলাদেশ থেকে আনোয়ার গ্রুপ চা-বাগানটি লিজ নিয়ে নেন। আনোয়ার গ্রুপও লাভের মুখ দেখতে না পাওয়ায় ২০০৪ সালে ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্র্যাক কোদালা চা বাগানের লিজ নেন। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতায় কোদালা চা বাগান সরকার থেকে লিজ গ্রহণ করে ব্র্যাক ২৬শ একর জায়গা। তার মধ্যে ৮শ একর জায়গায় চা বাগান হচ্ছে। বর্তমানে ব্র্যাক বাংলাদেশ ৮শ ৭২ একর জায়গায় চা চাষ ৯শ একর জমিতে রাবার চাষ করেছেন। পরীক্ষামূলক ৫একর জায়গায় আগর চাষ হচ্ছে। এছাড়া চা ও রাবার বাগানের পাশাপাশি নানা প্রজাতির গাছের চারা বনায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও নিম ও মুলি বাঁেশর চাষও করা হচ্ছে। জানা যায়, প্লার্ন্টাস বাংলাদেশ ও আনোয়ার গ্রুপ কোদালা চা বাগান করে লাভের মুখ না দেখলেও ব্র্যাক কোদালা চা বাগান লিজ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষ পরিচালনায় চাবাগানটি এখন ব্র্যাকের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দেশের চা শিল্পে কোদালা চা বাগানের চা গুনগত মান ও শীর্ষ চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। কোদালা চা বাগান সূত্রে জানা যায়, কোদালা চাবাগানে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৮শ জন। ২শ জন অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করে। শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি সপ্তাহে সাড়ে আটা, শ্রমিকদের শ্রমিক বস্তিতে ঘর নির্মান করে দেওয়া, চিকিৎসা ভাতা ফ্রি। চাবাগানের ভিতরে কমিউনিটি প্রাইমারী স্কুলে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য চা বাগানের ভিতরে এমবিবিএস ডাক্তারদের সমন্নয়ে একটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে চা শ্রমিকদের পরিবার পরিজন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। কোদালা চা বাগানের চা শ্রমিক শ্রমিক শৈলেন রায় (৫৫) জানান, আমরা অশিক্ষিত লোকেরা চা বাগানে পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। অন্যান্য চা বাগানের তুলনায় কোদালা চা বাগানের পরিবেশ খুবই ভাল। মালিক শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক একই পরিবারের মত। প্রতিদিন বন্য হাতির দলের আক্রমনের ভয়ে চা বাগানে কাজ করতে হচ্ছে। সরকারীভাবে চা বাগানে বন্য হাতীর আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য কার্য্যকরী পদক্ষেপ নিলে চা বাগানের উৎপাদন ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাবে। কোদালা চাবাগানের ব্যবস্থাপক আবদুল লতিফ জানান, ব্র্যাক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কোদালা চা বাগান চা উৎপাদনে গুনগত মান বজায় রেখে চা উৎপাদন করে আসছে। ব্রাকের নানা পরিকল্পনা রয়েছে এই চাবাগানকে ঘিরে। সার্বিকভাবে কোদালা চা-বাগানের পরিবেশ দেশের অন্যান্য চাবাগানের চেয়ে উন্নত। শ্রমিক-মালিক এক হয়ে চা বাগানের প্রতিদিনের কর্মকান্ড সম্পন্ন করা হয়। হাতির আক্রমন রক্ষা করতে পারলে চা উৎপাদনের কাজ ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাবে।
এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে বৃটিশরাকর্নফুলী নদী দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা চা বাগানের বির্স্তীণ জায়গা দেখে চাবাগান করার উদ্দ্যেগ গ্রহণ করে সেই থেকে কোদালা চা বাগান গড়ে উঠে। বাগানের সর্বত্র আধুনিক উপায়ে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদর রহমান জানান, কোদালা চা-বাগানের পরিবেশ খুবই উন্নতমানের। চা-পাতার গুনগত মানও খুবই ভাল। চা বাগানটির নানা মূখি কর্মকান্ডে দেশের পর্যটন প্রেমিকদের ব্যাপক ভাবে আর্কষন করতে সক্ষম হয়েছে।