কেন বারবার জামিন আবেদন খারিজ শাহরুখ-পুত্রের

10

পূর্বদেশ ডেস্ক

মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলেই দিন কাটছে বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খানের। জামিন আবেদন বারবার খারিজ হচ্ছে আদালতে। সাথে রয়েছেন আরো পাঁচ অভিযুক্তও।
অন্য দিকে, শাহরুখ পুত্রের মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে ক্রমেই জল ঘোলা হচ্ছে বলিউডে। বলিউডের একটি অংশ প্রশ্ন তুলছে, তা হলে কি রাজনীতির দাবা খেলায় চালের ঘুটি হয়ে গেলেন শাহরুখ পুত্র। তাদের দাবি, এর পিছনে রয়েছে রাজনীতির খেলা। আদানিদের বন্দরে ৩ হাজার কেজি তালিবানি-মাদকের থেকে নজর ঘোরাতে শাহরুখ এবং তার পরিবারকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে, সহজ নিশানা তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি নেতার ছেলের হাতে কৃষকদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেও যে এই মামলা লম্বা হচ্ছে, তা পরিষ্কার। কেউ কেউ এনসিবি-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
আরিয়ান-কান্ডে বলিউডের বাদশার পাশে দাঁড়িয়ে সঙ্গীত পরিচালক বিশাল দাদলানির বিস্ফোরক অভিযোগ, গৌতম আদানির সংস্থার মুন্দ্রা বন্দরে ৩ হাজার কেজি মাদক উদ্ধারের কাহিনি ধামাচাপা দিতেই শাহরুখের ছেলেকে নিয়ে টানাটানি।
প্রমোদতরীতে মাদক-কান্ডে শাহরুখের ছেলে আরিয়ানের ধরা পড়ার পর নেটমাধ্যমে ঘুরছিল একটি টুইট। যার মর্মার্থ, শাহরুখের সঙ্গে যারা যারা কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে কত জন আজ তার পাশে আছেন? এই টুইটকে রিটুইট করে সঙ্গীত পরিচালক লিখেছেন, যদি সঙ্গীত পরিচালকদের কথা বলেন, আমি আছি। শাহরুখ এবং তার পরিবারকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। আদানিদের বন্দরে ৩ হাজার কেজি তালিবানি-মাদকের থেকে নজর ঘোরাতে তাদের সহজ নিশানা তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি নেতার ছেলের হাতে কৃষকদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেও যে এই মামলা লম্বা হচ্ছে, তা পরিষ্কার।
শুধু বিশালই নন, মাদক-কান্ডে শাহরুখের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেতা শেখর সুমনও। তিনি টুইটে লিখেছেন, আমার ১১ বছরের সন্তানের মৃত্যুর সময় একমাত্র শাহরুখই পাশে ছিল। আমি জানি, একজন বাবার উপর দিয়ে এ রকম পরিস্থিতিতে কী যায়।
বিশাল যেমন আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন বন্দরে ধরা পড়া বিপুল পরিমাণ মাদকের প্রসঙ্গ এবং লখিমপুর-কান্ডের কথা সরাসরি তুলে ধরেছেন, তেমনই মহারাষ্ট্রের প্রভাবশালী এনসিপি নেতা নবাব মালিক এই ঘটনায় এনসিবি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
এই প্রেক্ষিতেই বলিউডের একটি অংশ প্রশ্ন তুলছে, তা হলে কি রাজনীতির দাবা খেলায় চালের ঘুটি হয়ে গেলেন শাহরুখ পুত্র? কেন তারা এ কথা বলছেন, তার পক্ষে একাধিক যুক্তিও খাড়া করছেন শাহরুখপন্থী বলে পরিচিতরা। তাদের দাবি, এর পিছনে রয়েছে রাজনীতির খেলা। কঙ্গনা রানাউত থেকে অক্ষয় কুমার, যেমন প্রকাশ্যে মোদী সরকারের সমর্থক, শাহরুখকে সেই পংক্তিতে ফেলা যায় না। এই প্রসঙ্গে তারা উল্লেখ করছেন একটি ঘটনার কথা। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষক আন্দোলন নিয়ে আমেরিকার পপ তারকা রিহানার করা একটি টুইটের সূত্র ধরে টুইট করেছিলেন দেশের তাবড় তারকারা। সব কটি টুইটের বিষয়বস্তু ছিল, বিদেশি হয়ে কেন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছেন রিহানা। কোহলী থেকে সচিন, কঙ্গনা থেকে লতা মঙ্গেশকর, অক্ষয় কুমার— সকলেই ছিলেন সেই তালিকায়। বাদ একমাত্র শাহরুখ।
এই প্রেক্ষিতে আদানি গোষ্ঠীর বন্দরে কয়েক হাজার কেজি মাদক উদ্ধার কিংবা বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের গাড়ির তলায় চাপা পড়ে ৪ কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে শাহরুখের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে গোটা বিষয়টি থেকে নজর ঘোরানোর অভিযোগ করলেন সঙ্গীত পরিচালক বিশাল।
এদিকে চরম দুঃসময় চলছে বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের। এমন বিপদে আগে কখনো পড়েননি। মাদককান্ডে কারাগারে অন্তরীণ ছেলে আরিয়ানের জামিনের জন্য শুটিং ফেলে হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী সতীশ মানেশিন্ডেকে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু জামিন মেলেনি।
আর্থার রোড জেলে দিন কাটছে আরিয়ান খানের। ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স’ (এনসিপিএস) আইনের আওতায় একাধিক ধারায় অভিযুক্ত আরিয়ান এবং তার সঙ্গীরা। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কেন বারবার জামিনের আবেদন খারিজ হচ্ছে আরিয়ানের?
নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারক নেরিলকার জানিয়েছেন, কোনও অপরাধের জন্য তিন বছরের বেশি শাস্তি ধার্য থাকলে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সেই অপরাধের জামিনের আবেদন দ্রুত মঞ্জুর করতে পারে না।
নেরিলকারের বক্তব্য, আরিয়ান এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে মাদক সংগ্রহ, বিক্রি এবং ব্যবহারের অভিযোগ হয়েছে। যে কারণেই সহজে জামিন মিলছে না শাহরুখ-পুত্রের। ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক স্বার্থে মাদক ব্যবহার হয়েছে প্রমাণিত হলে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে তাদের।
গত শনিবার মুম্বই থেকে গোয়াগামী একটিপ্রমোদতরী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরিয়ান-সহ কয়েক জনকে। পরোয়ানায় লেখা হয়, ১৩ গ্রাম কোকেন, ২১ গ্রাম চরস, ২২টি এমডিএমএ বড়ি এবং নগদ ১,৩৩,০০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে প্রমোদতরীর টার্মিনালে। এনসিবি-র পেশ করা অভিযোগ পত্রে দাবি করা হয়, নিষিদ্ধ মাদক নিয়েই প্রমোদতরীতে ওঠেন আরিয়ান। তার বন্ধুর জুতো থেকেও মেলে মাদক। অনুমান, খুব সহজে বাড়ি ফিরছেন না শাহরুখ-পুত্র। সূত্র আনন্দবাজার পত্রিকা।