কৃষকের সার অন্যত্র বিক্রি করে দিলেন ডিলার

12

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

রাঙ্গুনিয়ার কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪ মেট্রিকটন ডিএপি ও ৩০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বিসিআইসি’র গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর এসব অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন ডিলার। এ ঘটনায় রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের রাসেল এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল তালুকদারকে শোকজ করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার। তিনি জানান, গতকাল মো. রাসেল তালুকদার ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চেয়ে শোকজের জবাব দিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী গুদামে সার তোলার পর সঠিক বন্টনে উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবহিত করতে হয়। এছাড়া উত্তোলনকৃত সার স্ব-স্ব ইউনিয়নের খুচরা সার ডিলার এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু রাসেল তালুকদার ৪ মেট্রিকটন ডিএপি ও ৩০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার গুদাম থেকে উত্তোলন করলেও উপজেলা কৃষি অফিসকে অবহিত করেননি।
এ ব্যাপারে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তার কাছে জানতে চাইলে রাসেল তালুকদার ডিএপি সার অন্যত্র বিক্রি করেন বলে জানান। এরপর কৃষি অফিস খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ৪ মেট্রিকটন ডিএপি ও ৩০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার উত্তোলন করেন রাসেল তালুকদার। তার মধ্যে ১০ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার ইউনিয়নের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে দেন। বাকি সার তিনি রাঙ্গুনিয়ায় না এনে অন্যত্র বিক্রি করে দেন। এ ঘটনায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে শোকজ করেন কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার।
তিনি জানান, আমনের ভরা মৌসুমে সারের ব্যাপক চাহিদার পরও সার উত্তোলন করে বেশি লাভের জন্য উপজেলার বাইরে বিক্রি করে দেয়ায় কৃষিবান্ধব সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। যা সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। রাসেল তালুকদারকে শোকজ করা হলে তিনি সোমবার শোকজের জবাব দিয়েছেন। জবাবে রাসেল তালুকদার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ নিয়ে রাসেল তালুকদার বলেন, সার গুদামেই তোলা হয়েছিল। তবে কৃষি অফিসকে জানাতে গেলে উপজেলা কৃষি অফিসার অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি খেয়াল করেননি। তবে গুদামে উত্তোলনকৃত সার লালানগর ইউনিয়নের খুচরা ডিলার এবং নিজ ব্যবস্থাপনায় সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করেছি। এছাড়া লালানগর ইউনিয়নের কৃষকরা সার পাননি এবং খুচরা বিক্রেতাদের বিতরণ রেজিস্ট্রারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
এদিকে লালানগর ইউনিয়নের সহস্রাধিক আমন আবাদকারী কৃষকরা ইউনিয়নের ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সার না পেয়ে পাশের ইউনিয়নগুলোর দোকানে দোকানে ধর্ণা দিচ্ছেন।
লালানগর ইাউনিয়নের ঘাগড়া খিলমোগল গ্রামের কৃষক নুরুল আজিম জানান, সরকার কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি দিয়ে সঠিক সময়ে সার পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু অসাধু ডিলাররা সার উত্তোলন করে চড়া দামে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গুমাই বিলের কৃষক আবদুস সালাম জানান, রাঙ্গুনিয়ায় রয়েছেন সারের পাইকারি ডিলার ১৫ জন ও খুচরা বিক্রেতা ৬৩ জন। অনেক ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে তাদের বিরুদ্ধে।
কৃষকদের অভিযোগ, শুধুমাত্র নোটিশ দিয়েই দায় সারেন উপজেলা কৃষি অফিস। এতে সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। তাই বাড়তি দামে সার কিনতে বাধ্য হন কৃষকরা।