কুরআনের মাস সিয়ামের মাস

11

আমাদের করণীয়

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দীন কাদেরী কুরআনের বিশুদ্ধ প্রতিচ্ছবি হচ্ছে হাদিস। কুরআন মাজীদকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য হাদিসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই, জীবনঘনিষ্ট কিছু হাদিস, নবী-রাসূল ও সাহাবাচরিত অধ্যয়ন করে নিজেদেরকে তাঁদের আয়নায় দেখে আসি।
মনে রাখা দরকার যে, ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবীর (স.) উপর প্রথম প্রত্যাদেশ এসেছে- ‘ইক্বরা’- ‘পড়’। হাদিসে রাতে এক ঘণ্টা অধ্যয়ন করাকে সারা রাত জেগে ‘ইবাদত করার চেয়ে শ্রেয় বলা হয়েছে। তাই, সকল নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো জ্ঞান চর্চা করা।সালাতুত ত্রাভীহ ও ক্বিয়ামুল লাইল
ফরয নামাযের সাথে নফল নামাযের কোনো তুলনা চলে না। হাজার ওয়াক্ত নফল নামায এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের সমান হবে না। তাই, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে সালাতুত তারাভীহ ও তাহজ্জুদের নামায পড়ার চেষ্টা করতে হবে। রাক’আত সংখ্যা নিয়ে বিতর্কে না জড়িয়ে হযরত উমার (রা.) এর শাসনামলে জামা’আতের সহিত ২০ রাকা’ত তারাভীহ পড়া বিভিন্ন সূত্রে প্রমাণিত এবং সমসাময়িক সাহাবীগণ কর্তৃক সমর্থিত। অধিকন্তু, আমাদের দেশে সুদীর্ঘকাল থেকে এ আমল চলমান। সুতরাং এ বিষয়ে অশালীন বিতর্ক , দলাদলি করা বড় গোনাহের কাজ বৈ আর কিছু নয়। সুন্নাত আমল নিয়ে উম্মাতের মধ্যে মতভেদ থেকে দলভেদে পরিণত করা কবীরাহ গুনাহের শামিল।
স্মরণ করুন হযরত মুসা (আ.) যখন আল্লাহর নির্দেশে ত্বুর পর্বতে গিয়েছিলেন তাঁর ভাই হারুন (আ.) কে দায়িত্ব দিয়ে। তখন মুসা সামিরি নামক জারজ সন্তান স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে গোবাছুর বানিয়ে তার মধ্যে জিব্রাইলের (আ.) ঘোড়ার পায়ের নীচের মাটি দিলে তা হাম্বা হাম্বা আওয়াজ করলে বনী ইসরাঈলের লোকেরা গোবাছুর পূজা শুরু করে। চল্লিশ দিন পর মুসা (আ.) প্রত্যাবর্তনের পর এ দৃশ্য দেখে রাগে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন হারুন (আ.) দাঁড়ি ও চুল ধরে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আমার অবাধ্য হয়ে গেছো? তখন হারুন (আ.) বললেন- হে আমার সহোদর, তুমি আমার চুল-দাড়ি ধরিওনা আমি ভয় করেছি তুমি এ কথা বলবে যে, ‘তুমি বনী ইসরাঈলকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিয়েছ’।
আধুনিক ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন- হযরত হারুন (আ.) উম্মাতের দ্বিধাবিভক্তির ভয়ে মুসার (আ.) প্রত্যাগমন পর্যন্ত শির্কের উপর অপেক্ষা করা থেকে বোঝা যায় যে, উম্মাতের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি শির্কের চেয়ে বড় পাপ। তাই, এ বিষয়ে আমরা বিতর্ক এড়িয়ে চলি। তা ছাড়া ক্বিয়ামুল লাইল হিসাবে রাসুলুল্লাহ (স.) রামাদান বা অন্য মাসে বিতরসহ ১১ রাকাত বা ১৩ রাকাতের বেশি পড়তেন না বলে সহীহ হাদিসসমূহে বর্ণিত আছে। সুতরাং যারা ৮ রাকাত বা ১০ রাকাত পড়ছেন তারা ও সহীহ হাদিসের অনুসরণ করছেন। তবে, তাঁরা ৮ রাকাত পড়ে মসজিদের বাহিরে গিয়ে আড্ডায় লিপ্ত না হওয়া শ্রেয়।
লেখক : প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, চবি