কুম্ভ মেলা : পুণ্যস্নানের আকাক্সক্ষায় গঙ্গা-যমুনা সঙ্গমে কোটি মানুষ

119

গঙ্গা ও যমুনার সংযোগস্থলে স্নানের মাধ্যমে পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে কোটি কোটি মানুষ ভারতের এলাহাবাদে সনাতনধর্মীদের পবিত্র কুম্ভ মেলায় জড়ো হচ্ছেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম বড় এ সমাবেশের প্রথম দিন মঙ্গলবারই অন্তত দেড় কোটি মানুষ পুণ্যস্নান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাত সপ্তাহের এ মিলনমেলায় এবার ১২ কোটির বেশি দর্শনার্থীর দেখা মিলবে বলে আশা আয়োজকদের। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কুম্ভ মেলার সময়ে পবিত্র দুই নদী গঙ্গা ও যমুনার পানিতে গোসল করলে পাপ মুছে যায়, মেলে পরিত্রাণ।
বিবিসি বলছে, পুণ্যলাভের আশায় ‘সঙ্গম’ নামে পরিচিত দুই নদীর মিলনস্থলে মঙ্গলবার ভোর থেকেই ছিল ভক্ত-অনুসারীদের ভিড়। গায়ে ছাই মেখে স্নানে নামা সাধুদের কণ্ঠে শোনা যায় ‘হর হর গঙ্গা’ ধ্বনি। নাগা সাধুরা থাকলেও উত্তরাঞ্চলীয় শহর এলাহাবাদের এ উৎসবের মূল আকর্ষণ- লাখ লাখ পর্যটক; নারী-পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সপ্রাণ উপস্থিতি। ২০১৩ সালে প্রথমবার নারীরা এ মেলায় পুণ্যস্নানের অনুমতি পেয়েছিলেন। অন্যদিকে এবার উৎসবের প্রথম দিন মঙ্গলবার সকালেই কয়েকশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নদীর পানিতে শরীর ভেজায়। প্রতিবারের মতো এবারও দশ লাখের বেশি পর্যটক এ মিলনমেলায় হাজির হবেন বলে আশা প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাজীব রাইয়ের। তিনি এবং অন্যান্য আয়োজকরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেলার প্রস্তুতিতে কাজ করেছেন।
“শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। সকল ধর্মীয় অংশকে তাদের গোসল ও রীতি-নীতি পালনের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। হট্টগোল যেন না বাধে সেজন্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানান পরিকল্পনা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গন পথচারীদের জন্যই কেবল উন্মুক্ত থাকবে,” বলেছেন তিনি। পুণ্যার্থীরা বলছেন, তারা এসেছেন ‘গঙ্গা মায়ের ডাকে সাড়া দিতে’। “আমরা বিশ্বাস করি এখানে গোসল করলে সব পাপ ধ্বংস হয়ে যাবে,” বলেন পুণ্যস্নানে আসা কৃষক প্রমোদ শর্মা। শাবজি রাজা নামের আরেক সনাতন ধর্মাবলম্বী বলছেন, এখানকার পানির সঞ্জীবনী ক্ষমতা আছে। “এখানে গোসল আপনার অসুস্থতা নিরাময় করতে পারে, পারে পথের সব বাধা সরিয়ে নিতে,” মন্তব্য তার। এলাহাবাদে শত শত বছর ধরে এ কুম্ভ মেলা চললেও গত দুই দশক ধরে এটি বিরাট উৎসবে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বছরের মাঝামাঝি লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবারের মেলায় তুলনামূলক বেশি জমায়েত করবে বলেও মনে করা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে এলাহাবাদ শহরজুড়ে শোভা পাচ্ছে মোদীর ছবি দেওয়া অসংখ্য বিলবোর্ড; বড় বড় কার্ডবোর্ড কাট-আউটগুলো এমন স্থানে বসানো হয়েছে, যেন পুণ্যস্নানের সময়ও সেগুলোই আগে চোখে পড়ে। মেলায় আগতদের থাকার জন্য ১২ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু শহর।
বানানো হয়েছে কয়েকশ কিলোমিটারের নতুন রাস্তা। মেলা উপলক্ষে হাসপাতাল, ব্যাংক ও দমকলের পাশাপাশি বসানো হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টয়লেটও। পুণ্যার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে দেওয়া হয়েছে কয়েকশ বিশেষ ট্রেন; ভিড় সামলাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর ৩০ হাজারেরও বেশি সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর একদিন আগে লাখ লাখ সনাতনধর্মী ‘সঙ্গমে’ স্নান করে গঙ্গায় ফুলসহ মাটির প্রদীপ ভাসিয়ে দেবতাদের আরাধনা করেছেন।