কুমিরা যুদ্ধের নায়ক ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া

28

মিয়া জামশেদ উদ্দীন

২৬ মার্চ, কুমিরার প্রথম সন্মুখযুদ্ধ ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। এ যুদ্ধের মহানায়ক ছিলেন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের জোয়ান ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া। ওই যুদ্ধে এক পাক বিগ্রেডিয়ার জেনারেলসহ ১৫২ জন পাকসৈন্য প্রাণ হারায়। ১৪ জন স্বাধীনতাকামী বীর জওয়ানও শহীদ হন। রীতিমত পাকসৈন্যরা নাস্তানাবুদাদ হয়ে পাক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইকবাল সফিসহ বেঁচে যাওয়া অবশিষ্ট সৈন্য কুমিরার পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়। ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকসৈন্যরা নির্বিচারে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালির উপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এদিকে দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্রখালাসকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। এর মধ্যে অস্ত্র খালাসের নামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বেশ কিছুসংখ্যক জওয়ানকে হত্যা করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা চট্টগ্রামের ২নম্বর গেইট, দেওয়ানহাট, বাদামতলী, সল্টগোলায় গাছের গুড়ি, ইট-পাথর দিয়ে রোড অবরোধ করে Ñ যাতে করে বাঙালি জওয়ানদের অস্ত্রখালাস করার নামে হত্যাযজ্ঞ চালাতে না পারে পাকসৈন্যরা। ইতিমধ্যে শহরে অবস্থান করছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন অলীসহ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানরা। ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ইপিআর জওয়ানরাও হালিশহর ক্যাম্পে সতর্ক অবস্থান রয়েছে।
২৫ মার্চ কালো রাতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হতে এক বিশাল পাক কনভয় চট্টগ্রামের দিকে ধেয়ে আসে। এটি ছিল পাক ২৪তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স-রেজিমেন্ট এবং ৮৮তম মর্টার ব্যাটারি। ব্রিগেডের কমান্ডিংয়ে পাক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইকবাল সফি। এসকল দানবসম পাক সৈন্যদের রুখতে জীবন-মরণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। সর্বপ্রথম স্বাধীনতাকামীরা প্রতিরোধ-যুদ্ধের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে শুভপুর ব্রিজটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেন। তাতেও সম্ভব না হলে সীতাকুÐের কুমিরা এলাকায় সন্মুখযুদ্ধে প্রতিরোধ করার পরিকল্পনা নেন। কুমিরা অঞ্চলটি অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ইউ আকৃতি। পাহাড় ও সমুদ্র কাছাকাছি অবস্থিত। ট্রাঙ্করোড ও রেললাইন একশ’ গজের মধ্যে, উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি। মধ্যখানে হালকা হালকা জনবসতি। সবমিলে সন্মুখযুদ্ধের উপযুক্ত স্থান। এখানে পরপর তিনটি সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
এদিকে ২৫ মার্চ রাতে ৮ বেঙ্গল রেজিমেন্টের শতাধিক সৈনিক আহত অবস্থায় কুমিরা স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান নেন। জওয়ানদের বিবস্ত্র অবস্থায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। থানা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক ডা. আখতারুজ্জামান তাদের চিকিৎসাসহ সকল প্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে আসেন। স্থানীয় সৈয়দ ফোরখ আহম্মদ, সৈয়দ হারেছ আহম্মদ, বাদশা ওসমান গণি, নাট্যকার কামাল কাদের, ছাত্রনেতা নাজিম উদ্দিন, কামাল উদ্দিনসহ স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতা জড়ো হন। এলাকাবাসীরা যার-যা কিছু আছে, পুরনো কাপড়চোপড় ও খাবারদাবার নিয়ে আহত সৈন্যদের সেবাশুশ্রƒষায় এগিয়ে আসেন। এর মধ্যে ওইরাতে হালিশহর ক্যাম্প থেকে আরো কিছু ইপিআর জোওয়ান পালিয়ে আসে। তাদের জন্যও খাবারে ব্যবস্থা করা হয়। এরপরও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা ‘সোয়াত জাহাজ’ থেকে পাক বাহিনী রাতভর অস্ত্র খালাস করে, এসব অস্ত্রশস্ত্র চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে মজুদ করতে থাকে। এর মধ্যে সোয়াত জাহাজ থেকে রাত ১টা কী দেড়টার দিকে ৩ লরি গোলাবারুদ কৌশলে কুমিরায় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হন স্বাধীনতাকামীরা। কুমিরা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র তাহের, নুরুল, জামালসহ উৎসুক স্থানীয় যুবকরা রাতভর এসব অস্ত্র খালাস করে এবং কিছু অস্ত্র ডা. আখতারুজ্জামানের বাসায়, কিছু কুমিরা স্কুলসংলগ্ন খালের ঝোপঝাড়ে মাটিতে পুঁতে রাখে। ডা. আখতারুজ্জান, নাট্যকার কামাল কাদের, সৈয়দ ফোরখ আহম্মদ ও সৈয়দ হারেছ আহম্মদের উপস্থিতিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক এমআর সিদ্দিকী’কেও (এমএনএ) টেলিফোনে ওইরাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি অবহিত করেন।
২৫ মার্চ বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান খানিকটা অগ্রবর্তী হন। তিনি ৩২ কিলোমিটার অদূরে সীতাকুÐের মফস্বল এলাকায় অবস্থান নেন। সঙ্গে সীতাকুÐ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. এখলাছ উদ্দিন ও ছাত্রলীগ নেতা এসএম হাসানের সাথে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর সদর সীতাকুÐ পোস্ট অফিসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। তখন পোস্ট অফিসে কর্মরত উপ-সহকারী পোস্টমাস্টার পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য। জননেতা এমএ হান্নান স্বাধীনতা ঘোষণা-বার্তা বিষয়ে পোস্টমাস্টারকে অবহিত করেন। ঠিকই ওইরাতে পাক কনভয় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে চট্টগ্রামের দিকে মার্চ করে। আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (এমএনএ)-এর নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামীরা রাতভর চেষ্টা চালিয়ে ফেনী নদীর ওপর অবস্থিত শুভপুর ব্রিজটি আংশিক বিকল করতে সক্ষম হয়। এর পূর্বে সীতাকুÐের বাড়বকুÐস্থ চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের সম্মুখে ট্রাঙ্করোডের ব্রিজটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয়। ব্রিজটি বিস্ফোরণের প্রচÐ শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এরপর থেকে ব্রিজটিতে ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সকালের দিকে পাক কনভয় শুভপুরের বিকল ব্রিজটি আংশিক মেরামত করে এবং পাক কনভয় বিকল্প পথে চট্টগ্রাম অভিমুখে এগিয়ে আসে। ২৬ মার্চ সকাল ১১টার মধ্যে বারৈয়ারহাট এলাকায় পৌঁছে।
পাক কনভয় প্রতিরোধের সর্বাত্মক ডাক দিলেন সীতাকুÐ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মসজিদ্দা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ মামুন, কুমিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফায়েল আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিকসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহম্মদ হোসেন সওদাগর। তাঁরা ছোট কুমিরা বাইক্কা পুলের পশ্চিম-লাগোয়া এবং নবাব মিয়া চৌধুরী বাড়ির সন্মুখের শতবর্ষী অশ্বত্থ বৃক্ষটি কেটে রোডে ব্যারিকেড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
২৬ মার্চ ভোর থেকে গাছটি কাটা শুরু হয়। বিশাল আকৃতির অশ্বত্থ বৃক্ষটি পাঁচ জনের হাতের সমান বেড়। এটি কাঁটার জন্য বলিষ্ঠ দু’ কাঠুরিয়াকে খুঁজে নেন। তাদের একজন কুমিরা হিঁঙ্গুরী পাড়ার কোব্বাত আলীর ছেলে শাদু মিয়া প্রকাশ শদুবলী, অপর জন নুর হোসেন। তারা বৃক্ষটি কর্তন করতে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেয়। বিশেষ করে শদুবলী ব্রিটিশ ফেরা নাবিক। তার শারীরিক গঠন ছিল অনেকটা বিদ্যুতের খাম্বার মতো এবং পুষ্টপেশীর অধিকারী। ওই স্বপ্নময়পুরুষ দীপ্তিময় চেতনা নিয়ে নির্ভয়ে কুড়ালের গুম গুম আঘাতে গাছটি কেটেই চললেন। সঙ্গে উৎসুক গ্রামবাসীরা যোগ দেয়। দুপুর ২টা নাগাদ গাছটা আঁছড়ে ফেলে। যেন শতাধিক হাতিসম একটি মরা নীলতিমি পড়ে আছে রাস্তাজুড়ে।
শদুবলী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি গাছটিতে বাসাবেঁধে থাকতো সাপ ও ঈগল। ঈগল কিয়ক্-কিয়ক্ ডেকে নীল আকাশে উড়ে যায় ডানা মেলে… বিষধর সাপ গাছের কুঠরিতে ডিমে তা দেয়…
২৬ মার্চ সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা খায়ের হোসেন ছুটিতে আসা এক বাঙালি জওয়ানকে ডেকে পাঠান। সুবেদার আবুল মুনছুর নামে ওই জোওয়ানের বাড়ি মুরাদপুর ইউনিয়নের গুপ্তাখালি গ্রামে। তিনি দেশের চলমান পরিস্থিতি দেখে কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি দেননি। সুবেদার আবুল মুনছুর ডাক্তার আখতারুজ্জামানের বাসায় গিয়ে এসব অস্ত্র সচক্ষে দেখলেন এবং নিজেই ২০-২৫ কার্টুন গোলাবারুদ, শতাধিক রাইফেল ও এসএমজি পৃথক করেন।
এদিকে সকাল ১০টার দিকে বাড়বকুÐস্থ গাড়ির কারখানা গানধারায় এক অপ্রতিকর ঘটনা ঘটে। ওই অবাঙালিদের কারখানায় স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা হামলা চালায়। একপর্যায়ে কিছু স্থানীয় ব্যক্তিকে কারখানায় আটকে রাখে। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে ছুটিতে আসা (ইপিআর) ইস্টবেঙ্গল সৈনিক নুরুল আলম তাঁদের উদ্ধার করতে এগিয়ে যান। এতে করে পুনরায় সংঘর্ষ বাধে মিলটির সিকিউরিটি গার্ডের সাথে। ওই ঘটনায় নুরুল আলমসহ হাতিলোটা এলাকার আব্দুল হক নিহত হন। আহত হন ওসমান আলী ও আবুল কালাম। শহিদ নুরুল আলম ৪নং মুরাদপুর ইউপি’র পূর্বমুরাদপুর দেওয়ান ভূঁইয়ার বাড়ির আনোয়ার বেগের বড় ছেলে।
অপরদিকে সকাল ১০টার দিকে ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া এক ইপিআর জওয়ানকে নিয়ে চট্টগ্রাম হতে কুমিরায় এসে পৌঁছেন। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে থানা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক ডা. আখতারুজ্জামানসহ স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। একপর্যায়ে মোটর সাইকেলযোগে সম্ভাব্য সন্মুখযুদ্ধের স্পট দেখে নেন তিনি।
কুমিল্লা থেকে ধেয়ে আসা পাক কনভয় পথে পথে মুক্তিকামীদের অসংখ্য ছোটখাটো বাধা ডিঙিয়ে চট্টগ্রাম অভিমুখে এগিয়ে আসতে থাকে। পাক কনভয় দীর্ঘ ১৩৫ কিলোমিটার পথ অনেকটা বিনা বাধায় অতিক্রম করে ২৬ মার্চ দুপুর ১টায় সীতাকুÐের দারোগাহাট এলাকায় পৌঁছে। স্থানীয় স্বাধীনতাকামী জনতা প্রতিরোধে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও লোহার রড জড়ো করে ট্রাঙ্ক রোডে অবস্থান নেন। সীতাকুÐ থানা ছাত্রলীগ নেতা এসএম হাসান, একেএম সালাহউদ্দীন, শামছুল আলম টিপু ও তাহের হোসেন স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠনে জড়ো হয়ে নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে হাতবোমা তৈরি করে স্বাধীনতাকামী ছাত্র-জনতাকে সরবরাহ করতে থাকে।
দুপুর ২টার দিকে পাকসৈন্যরা সীতাকুÐ বাজার অতিক্রম করে। পাকসৈন্যরা নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে গিয়ে শেখপাড়াস্থ আহমদ ডাক্তারের বাড়ি’র জনৈক কৃষক নুরুল হকের খোঁয়াড়ে বাঁধা ষাঁড় লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ষাঁড় দুটি মারা পড়ে। এ নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয় Ñ পাকদের হাত থেকে নির্বোধ প্রাণীও রক্ষা পাচ্ছে না; সাধারণ জনগণের কাছে তা দিব্যি প্রতীয়মান হয়।
সীতাকুÐ বাজারের ব্যবসায়ীরা বঙ্গবন্ধুর আহŸানে সকাল থেকে দোকানপাটে কালো পতাকা উড়ায়। সৈন্যরা একপর্যায়ে বাজারে নেমে উড্ডয়ন কালো পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দিতে থাকে। বিক্ষুব্ধ সৈন্যরা গোবিন্দ বিশ্বাসের বড়ছেলে মধু বিশ্বাসকে পতাকা উত্তোলন এবং অমলেন্দু সেনকে অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন ও বিক্রয়ের খোঁড়া অভিযোগে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় কানধরে ওঠবস করায়। আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এখলাছ উদ্দিনকে রাস্তায় ধরে এনে চড়থাপ্পড় দিয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁর চেম্বারের সম্মুখের ড্রেনের ময়লা ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে নির্দেশ দেয়। সৈন্যরা মাওলানা আব্দুল আওয়াল সিরাজিকেও অহেতুক পাছায় লাথি ও চড়থাপ্পড় দেয়।
এদিকে পাক কনভয় প্রতিরোধে স্কুলছাত্র শামছুল আলম টিপু পেট্রলবোমা নিয়ে বাজারস্থ সিঅ্যান্ডবি অফিস লাগোয়া আমগাছটির ডালে চড়ে বসে। ওই ছাত্রের উদ্দেশ্য ছিল পাক কনভয় পথ অতিক্রমকালে পেট্রলবোমা ছুঁড়ে মারার। কিন্তু কনভয়ের বিশালতা দেখে বোমা ছোঁড়া বন্ধ রাখে। আরো এক কিরো মিটার দক্ষিণে হাজিবাড়ি ও দোয়াজীপাড়া রাস্তার সামনে স্বাধীনতাকামী জনতা সকাল থেকে ট্রাঙ্ক রোডের দু’ পাশে অবস্থিত বিশাল আকৃতির দু’টি শিমুল গাছ কেটে রোড ব্যারিকেড দিতে জোর প্রচেষ্টা চালায়। তাদের সাথে ছাত্রলীগ নেতা এসএম হাসান, আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ আলী ও ফোরকান যোগ দেন। ওই স্বল্পসময়ে তারা গাছ দু’টি কেটে কুলিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে পাক কনভয় সন্নিকটে এসে যাওযায় স্বাধীনতাকামীরা দ্রæত সরে পড়েন। আরো দেড় কিলো মিটার দক্ষিণে রহমতনগর এলাকায় স্থানীয় স্বাধীনতাকামী লোকজন দুপুর ১২টার দিকে অপর একটি অশ্বত্থবৃক্ষের ডালপালা কেটে রাস্তায় স্ত‚প দিয়ে যানচলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেয়। তাঁরা ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে ব্যারিকেডে একটি ট্রেন আটকা পড়ে। পরে ট্রেনচালকের অনুরোধে স্বাধীনতাকামীরা রেললাইনের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়। কিন্তু ট্রাঙ্করোডে প্রতিবন্ধকতা থেকেই গেল। ঠিকই পাক কনভয় ওইপথে আটকা পড়ে। সেনারা টপাটপ নেমে ডালপালা ছুড়ে ফেলে সমানে এগিয়ে যায়।
দুপুর সোয়া ২টায় বাড়বকুÐস্থ চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের সন্মুখের বিধ্বস্থ ব্রিজটিতে আটকা পড়ে পাক কনভয়। পরে সৈন্যরা ছনের আঁটি পুঁতে ধীরগতিতে ভাঙা ব্রিজের ওইপথ পার হয়। সৈন্যরা বাড়বকুÐ বাজারের দোকানের সামনে পত্ পত্ করে উড়তে থাকা কালো পতাকা নামিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় স্বাধীনতাকামী যুবক বদিউল আলম প্রকাশ বাদশা মিয়া পাক কনভয় লক্ষ্য করে রাসায়নিকপদার্থ ভর্তি একটি বোতল ছুঁড়ে মারে। কিন্তু বোতলটিতে রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে পানি যে ভর্তি করা ছিল তা জানতেন না; এতে করে পরিকল্পনা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এতেও ওই বীর ক্ষান্ত হয়নি। একপর্যায়ে দুই পাকসৈন্যকে জাপটে ধরে! অতঃপর বেয়নেট খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওই স্বাধীনতাকামী বীর জোওয়ানকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সীতাকুÐে শহিদ বদিউল আলম বাদশা হলেন পাকসৈন্যদের হাতে প্রাণহারনো প্রথম শহিদ। ওই বীর বাড়বকুÐ ইউপি’র দক্ষিণ মাহমুদাবাদ গ্রামের সাদাকাত উল্লাহর পুত্র। ইউপি’র নজির আহম্মদের পুত্র স্বাধীনতাকামী যুবক আতাউল হক গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পাকসৈনারা আরো ৪ কিলো মিটার অর্থাৎ ১৫০ কিলো মিটার পথ অতিক্রম করে বিকেল আড়াইটার দিকে ছোট কুমিরা বাজারস্থ মসজিদ্দা স্কুলের সম্মুখে পৌঁছে। তারা রাস্তার ওপর স্তূপীকৃত পাথর ও গাছের গুঁড়ি সরিয়ে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। বাজারের লোকজন হঠাৎ যুদ্ধাংদেহী পাক সৈন্যদের উপস্থিতি দেখে হতচকিত। তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে দিগি¦দিক দৌড়তে থাকে। এর মধ্যে স্বাধীনতাকামী যুবক আবু তাহের সৈন্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে। সৈন্যরাও তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ঘটনায় স্বাধীনতাকামী যুবক গুলিবিদ্ধ হয় এবং রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়ে বাজারসংলগ্ন এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। এর পূর্বে পাক কনভয় বাজার অতিক্রমকালে অবাঙালি এক সিকিউরিটি গার্ড পাকসৈন্যদের থামিয়ে পরিস্থিতি অবহিত করে। ওই সিকিউরিটি অফিসার অবাঙালিদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুল আহম্মদ জুট মিলে কর্মরত ছিলো।
এদিকে রাস্তাজুড়ে পড়ে থাকা বিশাল আকৃতির অশ্বত্থ বৃক্ষটির সামনে পাক কনভয় আটকা পড়ে। দীর্ঘসময় ধরে অশ্বত্থ বৃক্ষটি সরানোর সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হল সৈন্যদের। উপায়ান্তর না পেয়ে অশ্বত্থ বৃক্ষটির উপর চালিয়ে দেয় গাড়ি বহর! এতে করে অস্ত্রভর্তি একটি লরি উল্টে বিস্ফোরিত হয়। দীর্ঘ এ পথ নির্বিঘেœ পাড়ি দেয়ার পর প্রথম বারের মতো পাক কনভয়টি বড় ধরনের ধাক্কা খেল অর্থাৎ স্বাধীনতাকামীরা বড় ধরনের একটি ধাক্কা দিতে পেরেছে। স্বাধীনতাকামীরা আমজনতা সকাল থেকে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে বৃক্ষটি কেটে রোডব্যারিকেড দেয়। শেষতক সৈন্যরা রাস্তার উত্তরপাশ লাগোয়া খাদে ছনের আঁটি পুঁতে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে। প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পাকিরা বিপজ্জনক পথ পার হয়। স্থানীয় আলম মিয়া চৌধুরী প্রকাশ আলম মেম্বার ওই স্তূপকৃত ছনের মালিক। বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ওখানে ছন রেখেছিলেন।
এ দুর্ঘটনায় পাকিরা সতর্ক হয়ে ওঠে। তারা বাইক্কারপুল পার হয়ে শাহ আলম চৌধুরীর ব্রিকফিল্ডে কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি করে। (চলবে)
লেখক: কলামিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক
পুনরায় ম্যাপে এলাকাটির অবস্থান ও রাস্তাঘাট পরখ করে দেখে নেয়। সেনাদের এমন মনোভাব দেখে সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। ‘কী হতে চলেছে, কী হতে চলেছে।’ পাকিরা সম্ভবত রণকৌশলে কিছুটা পরিবর্তন আনে। তারা দু’ ভাগে ভাগ হয়ে কিছু ট্রাঙ্করোড, কিছু রেললাইন ধরে এগিয়ে চলে।
আরেকটু দক্ষিণে ট্রাঙ্করোডের বামঘেঁষেই যাদুর বিলটি অবস্থিত। যাদুর বিলের বুক চিড়ে চলে গেছে য²া-সংক্রামকব্যাধি হাসপাতালের রোড। তারই একশ’ গজ দক্ষিণে স্টেশনরোড ও পরির রাস্তা। আরেকটু সামনে ট্রাঙ্ক রোডের বামে উম্মেদ আলী ফকির পুকুর। পুকুরের পূর্ব ও দক্ষিণে অর্থাৎ ট্রাঙ্করোড ঘেঁষে পূর্বপাশে কামাল ড্রাইভারের বাড়ি। বাড়িটির উত্তরে যাদুর বিল। যাদুর বিলের ফাঁকা মাঠে ঐতিহাসিক কুমিরার প্রথম সন্মুখযুদ্ধ সংঘঠিত হয়।
সেবারও যাদুর বিলে শীতকালীন সব্জি চাষ করে কৃষকরা। শসা-খিরা ও টমেটোর ফলন ভালো হয়। ক্ষুধার্ত সৈন্যরা কৃষকের টমেটো দু’ হাত ভরে কাঁচা কাঁচা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে। ছোট কুমিরার বাজার থেকেও কয়েক টুকরি টমেটো গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। এ দৃশ্য দেখে কৃষকরা হতবাক। তারা রা-শব্দ করতে সাহস পেলো না। উল্টো প্রাণের ভয়ে দৌড়ে পালালো।
কুমিরা খালের উত্তরপ্রান্তে পাক কনভয়। দক্ষিণপ্রান্তে স্বল্পসংখ্যক স্বাধীনতাকামী আনসার, ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু জওয়ান অবস্থান নেন। সাথে গুল আহমদ জুট মিল থেকে পালিয়ে আসা আরো কয়েকজন স্বাধীনতাকামী আনসার যোগ দেয়। জোড়আমতল এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা রাজা মিয়া ড্রাইভার, তরুণ বিমানসেনা রুস্তম আলী, আনসার কমান্ডার সৈয়দ হারেছ আহমেদ, আনসার সদস্য নিয়ামত আলী, কোরবান আলী, জাফর আহমদ চৌধুরী, স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম, সোনাইছড়ি আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, তাঁর ছোটভাই ইউসুফ আলী, ছাত্র কামাল উদ্দিন, গাজী সেকান্দর, নাজিম উদ্দিন, থানা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক ও সোনাইছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আখতারুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান চৌধুরী, ইসলামাবাদী, মুজাফ্ফর উল্যাহ, বদিউল আলম সওদাগর, সেকান্দর সওদাগর, নুরুল আলম চৌধুরী, আনুমিয়া কন্ট্রাক্টর, তাজ মুহাম্মদসহ গ্রামবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাকামী বীর ইপিআর জওয়ানদের উৎসাহ ও সাহস দিতে থাকে।
এদিকে শ্রমিকনেতা এটিএম নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে বাড়বকুÐ এলাকায় পাক কনভয় প্রতিরোধে সকল প্রচেষ্টা ক্ষীণ হয়ে ওঠে। তিনি দ্রæত অবসরপ্রাপ্ত (ইপিআর) আর্টিলারি বিভাগের সদস্য ছাবের আহম্মদ ও স›দ্বীপের মনতাজুল করিম হাবিলদারকে সঙ্গে নিয়ে দ্রæত কুমিরায় অবস্থান নেয়। ছাবের আহম্মদের কাছে একটি এলএমজি রয়েছে। যা থেকে প্রতি মিনিটে ২৮টি বুলেট বের হয়। তিনি অস্ত্র সহকারে কুমিরার সম্মুখযুদ্ধে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
অপরদিকে ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী ইপিআর জওয়ানরা কয়েকটি খোলা ট্রাকে করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী হতে যুদ্ধের ময়দান কুমিরার দিকে অগ্রসর হন। তখন স্বাধীনতাকামী জনতা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বাংলা’ ধ্বনি ও করতালি দিয়ে তাঁদের সাহস ও উৎসাহ দিতে থাকে। স্বাধীনতাকামী জওয়ানরা চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক মিয়া এমপি ও সীতাকুÐ থানা সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়ক ডা. আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে কয়েক ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে।
স্বাধীনতাকামী ইপিআর জওয়ানরা প্রথমে কুমিরা বাজার লাগোয়া খালের দক্ষিণ প্রান্তে শতবর্ষীয় তুলাগাছটির পাশঘেঁষে একটি, ছয়টিলা-টিবিহাসপাতালের সম্মুখে একটি, ডালচালমিয়া মসজিদের পেছনেসহ কমিউনিটি সেল্টারে আরো ২টি মেশিনগান উত্তরমুখি শত্রæর নিশানা বরাবর তাক করে।
তৎক্ষণাৎ পাক কনভয়ের রণকৌশলে পরির্বতন দেখে স্বাধীনতাকামীরা অগ্রবর্তী ডিফেন্স সরিয়ে দ্বিতীয় দফা উম্মেদ আলী ফকির মসজিদ পুকুরপাড়ে একটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বপাশে কামাল ড্রাইভারের নির্মাণাধীন মাটিরগুদাম ঘরে একটি এবং রেললাইনের পূর্বপাশে চিরাপাহাড়ের উপর একটি ডিফেন্স স্থাপন করে। মূলত সোনাইছড়ির ঘোড়ামরা খালটিকে পেছনে রেখে উত্তরমুখি ডিফেন্স নেন স্বাধীনতাকামীরা। খালটির জলধারা ফকিরহাটসংলগ্ন পাহাড় হতে নেমে ঘোড়ামরা ও জোড়ামতল গ্রামের বুক চিড়ে স›দ্বীপ চ্যালেনে গিয়ে মিলিত হয়।
আবারো স্বাধীনতাকামীরা রণকৌশলে কিছু পরিবর্তন আনে। ত্বরিৎ পাকসৈন্যদের ফাঁদে ফেলতে যাদুরবিল সংলগ্ন ট্রাঙ্করোডের উপর ডালপালা ও ইটের স্তূপ দিয়ে হালকা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে, যেন পাক কনভয়ের গতিপথ কিছুটা থামানো যায় এবং ওই ব্যারিকেড সরাতে এলে প্রতিরোধের মোক্ষম সময়টা বেছে নিতে পারেন। স্বাধীনতাকামীদের কমান্ডিংয়ে রয়েছেন তরুণ ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া। তিনি ফোর্সকে ৩টি প্লাটুনে ভাগ করেন। একজন সুবেদার, একজন নায়েক সুবেদার ও একজন হাবিলদারকে কমান্ডিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা দেখতে পেলেন, সামনে নিশানা বরাবর শত্রæদের গাড়িবহর ধেয়ে আসছে। উৎসুক জনতা এমন দৃশ্য উপভোগে আগেভাগে উঁচুস্থান বেছে নেন। কেউ কেউ গাছের ডালে ও বিল্ডিংয়ের ছাদে আবার অনেকে পাহাড়ের টিলায় অবস্থান নেন।
মাগরিবের নামাজের পরপর অর্থাৎ সন্ধ্যা সাড়ে ৬-৭টার দিকে পাকসৈন্যরা স্টেশন রোড ও পরিররাস্তা ক্রস করতেই স্বাধীনতাকামী বীর জওয়ানদের মেশিনগান গর্জে ওঠে। ঝড়েরগতিতে শত্রæর নিশানায় গুলি বিঁধতে থাকে। এমন ভয়াবহ অবস্থায়ও এক পাক ঊর্ধ্বতন সেনা হামাগুড়ি-ক্রলিং করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ধ্বংস করার মানসে। আর সেখানে রয়েছে এক দুঃসাহসী বাঙালি ইপিআর জোওয়ান। উম্মেদ আলী ফকিরের পুকুরের উত্তর-পূর্বপাড় বেয়ে উঠতেই মেশিনগানটি তাক করা হলো। শত্রæ নিশানায় নিখুঁত আঘাত হানে। চোখের পলকে পাক হাবিলদার মেজর ঝাঁড়রা হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
দিগি¦দিক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে পাক সৈন্যরা। গোলাবারুদ ভর্তি দুটি লরি প্রচÐ শব্দে বিস্ফোরিত হয়। দাউ দাউ জ্বলে ওঠে আগুন। সারি-সারি পাকিদের লাশের স্তূপ। তার মধ্যে পাক কমান্ডিং অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেন্যারেল জামিল ও এক লেফট্যানেন্ট কর্নেলসহ বিভিন্ন পদের ১৫২ জন সৈন্য মারা পড়ে এবং শহিদ হন স্বাধীনতাকামী বাঙালি বীর ১৪ জওয়ান। এর মধ্যে কিছু পাকসৈন্য মুক্তি ইপিআরদের অ্যাম্বুশ ভেদ করে দক্ষিণে ঘোড়ামরা রেলওয়ের ডিপোতে আটকা পড়ে এবং কিছু সৈন্য নিয়ে পাক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল শফি পাহাড়ের অরণ্যে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হন। থেমে গেল পাক কনভয়ের অগ্রযাত্রা! স্বল্পসংখ্যক বাঙালি ইপিআর জওয়ানদের হাতে ধরাশায়ী দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন পাক ফৌজ।
(তথ্যসূত্র: স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস: সীতাকুÐ অঞ্চল ও ‘৭১’- গ্রন্থ, লেখক- জামশেদ উদ্দীন)
লেখক: কলামিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক।