কুতুবদিয়ায় পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ

37

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব ও অমাবশ্যার জোয়ারে কুতুবদিয়া দ্বীপে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। গত শুক্রবার ও শনিবার ছয় ইউনিয়নে ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার ভাঙা বাঁধের ২০টি পয়েন্ট দিয়ে এসব পানি প্রবেশ করে। এতে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঐসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের কয়েকশ বাড়িঘর জোয়ারে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি ঘরবাড়ির লোকজন পার্শ্ববর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা প্রশাসন। বর্তমানে ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে জোয়ারের সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়ঘোপ ইউনিয়নের দক্ষিণ অমজাখালী, মুরালিয়া গ্রামের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে আর অমাবশ্যার জোয়ারের নোনাপানি ঢুকে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই ইউনিয়নের আজম কলোনি এলাকায় জোয়ারের পানিতে এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে চরধুরুং ও ফয়জনির বাপেরপাড়া, কাইছার পাড়া কুইলারটেক সহ ১৭টি গ্রাম, দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের বাতিঘর পাড়া এলাকায় ৫টি গ্রাম, লেমশীখালী ইউনিয়নের সতর উদ্দিন পেয়ারাকাটা, নয়াকাটা, দরবার ঘাট এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে ১০টি গ্রাম, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে পরান সিকদার পাড়া, মহাজনপাড়া, মতিরবাপের পাড়া, মলনচরসহ ৮টি গ্রাম, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে কুমিরারছড়া জেলেপাড়া, আনিচের ডেইল, পূর্ব তাবলরচর, পশ্চিম তাবলরচর, বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা, হায়দার বাপের পাড়া, কাহারপাড়া, কাজিরপাড়াসহ ১২টি গ্রামে অমাবশ্যার জোয়ারে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এ জোয়ারে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এসব এলাকার শত শত পরিবারের লোকজন গৃহহারা হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে প্রচন্ড গরম অনুভূত হয়। গত দুইদিন ধরে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আর বৈরী আবহাওয়ায় অমাবশ্যার জোয়ার একত্রিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। এ দুর্গন্ধের কারণে পানি ও বায়ু বাহিত রোগ ও চর্ম রোগ ছড়াতে পারে এলাকায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল টিম গঠন করেছে। তার সাথে প্রত্যেক কমিউনিটি ক্লিনিকে খোলা হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। পল্লী চিকিৎসক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ নাজিম উদ্দিন লালা বলেন, প্লাবিত এলাকায় জোয়ারের নোনাপানি ঢুকে পুকুরের পানির সাথে মিশে এক ধরনের জীবানু সৃষ্টি হয়ে ভাইরাস ছড়াচ্ছে। এতে প্লাবিত এলাকার শিশু ও মানব দেহে পানিবাহিত রোগ ডায়েরিয়া দেখা দিচ্ছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার রায় জানান, জোয়ারের সময় ভাঙা বাঁধ দিয়ে নোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে শত শত ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এসব পানি সরানোর জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষের স্লুইচ গেট গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক স্লুইচ গেটে দরজা না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারেও নোনা জল ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হয়।
কৃষক আবু সুফিয়ান বলেন, তার ফসলের ধান আধা পাকা থাকায় কেটে ঘরে উঠাতে পারেননি। তার ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছে।