কুকুরের উপদ্রব, বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

70

হাটহাজারীর আলিপুরের বাসিন্দা শিশু জোহা (৩) গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খেলছিল বাসার সামনে। সেসময় একটি কুকুর অতর্কিত তাকে কামড় দেয়। এতে শিশুটির মুখের একপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ৯ জুন হাটহাজারীর মেখল এলাকায় কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন নারী-শিশুসহ পাঁচজন।
সম্প্রতি হাটহাজারীর মতো পুরো চট্টগ্রামে শিশু থেকে বুড়ো; সব বয়সীরা কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
নগরের একাধিক জায়গা ঘুরে দেখা যায়, দল বেঁধে কুকুরের অবাধ বিচরণের চিত্র। কাউকে একা পেলে এরা হয়ে উঠছে হিংস্র। বিশেষ করে রাতের বেলায় কুকুরের অবাধ বিচরণে পথচারীরা ভুগছেন আতঙ্কে। খবর বাংলানিউজের
চট্টগ্রামে সরকারিভাবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয় আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে। পাশাপাশি আক্রান্ত অনেকে বেসরকারিভাবে টিকা গ্রহণ করেন।
জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) কুকুরের কামড়ে আহত ১১ জন টিকা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ২০১৯ সালের প্রথম পাঁচ মাসে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে হাসপাতাল থেকে টিকা গ্রহণ করেছেন এক হাজার ৯০৩ জন। তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। কারণ নিজস্ব খরচে অনেকে টিকা গ্রহণ করেন।
চান্দগাঁও ফরিদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ছেলেকে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। তার হাত ও পায়ে কুকুর কামড় দেয়। এজন্য দুই ধরনের টিকা দিতে হয়েছে।
জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আক্রান্তের ধরনের ওপর নির্ভর করে- রোগীকে কেমন টিকা দিতে হবে। তবে সাধারণ কামড়ের জন্য অন্তত চারবার টিকা দিতে হয়। র‌্যাবিস নামে একটি প্রতিষেধক রোগীর শরীরে দিতে হয়। সেটি বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। যদি কামড়ে শরীর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে এআরজি নামে আরেকটি প্রতিষেধক দিতে হয় রোগীকে। সেটি সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় রোগীর পক্ষ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
দেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু হয়েছে।
২০১১ সাল থেকে সারাদেশে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে চলতি বছর এখনো টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে বেড়েছে পাগলা কুকুরের উপদ্রব।
সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে জলাতঙ্ক রোগ হয়। এটি একটি মরণব্যাধি।
‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কার্যক্রম চালায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ টিকা সরবরাহ করে। মূলত কুকুরকে টিকা দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরে সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা প্রশাসন এ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে চলতি বছর চট্টগ্রামে এখনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি।
নগরে কুকুরকে টিকা দেয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে এবার এখনো নির্দেশনা পাইনি।