কিয়ামতের দিন সাতশ্রেণির লোক আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে

1913

এস এম ফখরুল ইসলাম নোমানী (মোরশেদ)

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবতার মুক্তির দূত, সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতামুননাবিয়ীন হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে আল্লাহ ছোবাহানাহু তায়ালা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনীর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁর প্রতিটি কথা, কাজ, অনুমোদন, নির্দেশনা, আদেশ, নিষেধ ও উপদেশ দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণের বার্তাবাহী। তিনি গোটা মানব জাতির শিক্ষক। তাঁর সে কালজয়ী আদর্শ ও অমিয়বাণী দ্যুাতি ছড়িয়ে পথপদর্শন করেছে যুগ যুগান্তরে, আলোকিত হয়েছে মানবমÐলী।
প্রতিটি মাখলুককেই কাল কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কিয়ামতের ময়দানের সেই কঠিন মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মানবমÐলীকে লাল শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না। (বুখারি ও মুসলিম)
কিয়ামতের দিনটি প্রচÐ উত্তপ্ত থাকবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, সমস্ত মানুষ থাকবে পেরেশান, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনুসমান, কারো হাঁটুসমান, কারো কোমরসমান, কারো মুখসমান। (মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৪৮৩)
প্রত্যেক মানুষই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে সবাইকে উপস্থিত হতে হবে। সেই মহান উপস্থিতির দিনকেই বলা হয় কেয়ামত দিবস বা বিচার দিবস। সেদিন সূর্য মানুষের মাথার উপরে থাকবে। যার ফলে অনেক পাপাচারীর মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা যারা, তারা থাকবে সম্পূর্ণ নিরাপদ। আল্লাহ তায়ালার আরশের নিচে ছায়া পাবে তারা। তারাই হবে সম্মানিত।
সাত প্রকারের লোককে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন। সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবুহুরাইরা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, সাত ধরনের লোককে কিয়ামতের দিন পরম যতনে আল্লাহ তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন। যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতিত আর কোন ছায়াই থাকবেনা। চলুন জেনে নেয়া যাক, কারা সেই মহাসৌভাগ্যবান মানুষ :
তারা হলো— ১) ন্যয়পরায়ণ শাসক। ২) এমন যুবক, যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর ইবাদতে। ৩) ঐ ব্যক্তি যার হৃদয়টা সর্বদা লেগে থাকে মসজিদের সাথে। ৪) এমন দু’ব্যক্তি, যারা গ্রেফ আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, কিংবা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ৫) এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী উচ্চবংশীয়া রমণী আহŸান করল ব্যভিচারের প্রতি, প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। ৬) এমন ব্যক্তি, যে এতটা গোপনীয়তার সাথে দান-সাদাকা করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে টের পায় না। ৭) এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দুচোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা।
১. ন্যায়পরায়ণ বাদশা বা শাসক : এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ওই মুসলিম শাসক, যে শরয়ি পদ্ধতিতে নির্বাচিত এবং শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জনগণকে পরিচালিত করেন। মানবরচিত বা প্রবৃত্তি-উদ্ভূত কোনো আইন নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া ইনসাফপূর্ণ আইন বাস্তবায়ন করেন। ন্যায়পরায়ণতা বলতে প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তায়ালার বিধান অনুসরণ করাকে বুঝানো হয়েছে। ন্যায়ের বিপরীত হলো অত্যাচার বা অনাচার। মহান আল্লাহ এই শ্রেণির লোকদের ভীষণ ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। (সূরা হুজরাত, আয়াত : ৯) ষ আর যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে করবে। (সূরা নিসা : ৫৮)
২. দীনদার যুবক : বৃদ্ধ বয়সে তো প্রায় প্রতিটি মানুষই ইসলামের দিকে ধাবিত হয়, কিন্তু তখন হয়তো দীনের কঠিন আমল, যেমন দীনবিজয়ের কাজ, জিহাদ ও হিজরত করা সম্ভব হয় না, তাই এখানে বিশেষভাবে ওই যুবকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তাদের যৌবনকালটাকে, তারুণ্যের উদ্যমতাকে কাজে লাগিয়েছে দীনের জন্য। যৌবন মহান আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তারাই সফল হয়। সাধারণত যৌবন মানুষকে বেপরোয়া বানিয়ে দেয়, যৌবনের তাড়নায় কেউ কেউ ডুবে যায় পাপের সাগরে। এই যৌবনকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তারা কঠিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে।
৩. মসজিদে পড়ে থাকে হৃদয়টা যার : আজকের সমাজে অধিকাংশ মানুষ তো মসজিদের সাথে কোনো সম্পর্কই রাখে না। সপ্তাহান্তে একদিন মসজিদে গেলেও কখন খুতবা শেষ হবে, কখন বাসায় ফিরবে এই চিন্তাই শুধু মাথায় ঘুরপাক খায়। অথচ যারা মসজিদের সাথে লেগে থাকবে, একবার নামাজ শেষে কখন আজান হবে আর মসজিদে যাবে সেই চেতনা মনে জাগ্রত রাখবে, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, মসজিদের প্রয়োজনগুলো পূরণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাদেরকে হাশরের কঠিন দিনে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা দ্বারা উদ্দেশ্য, মসজিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে মসজিদে পড়া। সার্বক্ষণিক মসজিদে বসে থাকা নয়। (উমদাতুল কারি : ৫/২৬১) পানির মধ্যে মাছ যেমন প্রশান্তি পায় মু’মিন তেমনি মসজিদে প্রশান্তি পায়। আর খাঁচার মধ্যে পাখি যেমন ছটফট করে মুনাফিক তেমনি মসজিদের মধ্যে ছটফট করে।
৪. আল্লাহর জন্য সম্পর্ক স্থাপনকারী : আল্লাহর ভালোবাসার ভিত্তিতেই যারা একে অপরকে ভালোবেসেছে কিংবা ঘৃণা করেছে তারই জন্য। আল্লাহর ভালোবাসাই তাদের উভয়ের মাঝে গড়ে দিয়েছে সখ্যতা ও বন্ধুত্ব, পার্থিব কোন প্রতিবন্ধকতা এ ব্যাপারে তাদের মাঝে আড়াল তৈরি করতে পারেনি। মৃত্যু পর্যন্ত তাদের উভয়ের মাঝে বন্ধনের একমাত্র সূত্র হল আল্লাহর ভালোবাসা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, সেসব মানুষ কোথায়, যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেব। আজকের দিনটা এমনই যে আজ আমার ছায়া ছাড়া কোথাও কোনো ছায়া নেই। (মুআত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৭১৮)
৫. ব্যভিচার থেকে যে দূরে থাকে : আজকের সমাজ একদিকে বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছে, অন্যদিকে ব্যভিচারকে সহজ করে দিয়েছে। আইটেম গান, নাটক, মুভি, ওয়েব সিরিজ, পর্ন সাইটসহ আরও অসংখ্য উপকরণ দিয়ে যুবসমাজকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে যারা সমাজের এই সমস্ত জাহিলিয়াত থেকে নিজেদেরকে নিষ্কলুষ রাখবে, ঈমান ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে স্থান দিবেন। সে ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহŸান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। সেই সব মুত্তাকিকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ (আ) মিসরের আযীয পত্নী যুলায়খার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে জেলখানাকে উত্তম বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করেছেন যা পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফে বিধৃত হয়েছে।
৬. গোপনে দানকারী : আজকাল মানুষ তো একটাকা দান করলে ১০ টাকার প্রচার করে। ত্রাণের চেয়ে বেশি সময় যায় ফটোসেশনেই। মানুষ চায় লোকে তাকে দানশীল বলুক, তার নাম মাইকে ঘোষণা হোক। কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সা.) বলছেন, যারা এমনভাবে দান করবে যে, ডান হাতে দান করলে বাঁ হাতও টের পায় না, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না। এর দ্বারা উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান-সদকাকারীকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন।
৭. নির্জনে যে অশ্রু ঝরায় : আজকে আমরা যাই একটু-আধটু ইবাদত করি, সেটাও অনেক ক্ষেত্রেই রিয়া বা লোকদেখানো আমলে পরিণত হয়। কতকিছুর জন্যই আমরা অশ্রæ ঝরাই। প্রিয়জনের বিয়োগব্যথায়, জীবনের চরম কোনো মুহূর্তে। কিন্তু একটু নির্জনে, রাতের অন্ধকারে, যখন কেউ দেখার নেই আল্লাহ ছাড়া, তখন কি আমরা চোখের পানি ঝরাতে পারি? যারা আল্লাহর ভয়ে, নিজ পাপসমূহ স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে অঝোরে কাঁদে, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন।
উপরোক্ত গুণগুলো একজন খাঁটি মুত্তাকির মধ্যেই পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন!
হাদিসের শিক্ষা
উপরোক্ত হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ:
ক. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়সহ সকল পর্যায়ে ন্যায়নীতি ও ইনসাফ অবলম্বন করা সর্বোত্তম ইবাদত। এর বিপরীতে রয়েছে অন্যায়, অনাচার, অত্যাচার যা জঘন্য অপরাধ এবং পরলোকে তা শুধুই অন্ধকার আর অন্ধকার।
খ. ইবাদত জীবনের সকল স্তরে গুরুত্বপূর্ণ হলেও যৌবন কালের ইবাদতের মর্যাদা বেশি। কারণ এ সময়ে মানুষের কুরিপু এবং প্রবৃত্তি দমন অন্য বয়সের তুলনায় কষ্টসাধ্য।
গ. মু’মিনের অবস্থান যেখানেই হোক, যে কাজেই সে লিপ্ত থাকুক তার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে এবং মসজিদই হবে তার আত্মার ঠিকানা।
ঘ. মু’মিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা, বিদ্বেষ, হাদিয়া প্রদান, হাদিয়া গ্রহণ, সুসম্পর্ক বজায় রাখা, পারস্পরিক সহযোগিতার হাত বাড়ানো ইত্যাদি সকল কর্মই হবে আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। এ সকল বৈশিষ্ট্য ঈমানের পূর্ণতার লক্ষণ।
ঙ. আল্লাহ্ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য নির্জনতা সর্বোত্তম কৌশল এবং মু’মিনের চোখের পানি আল্লাহ্ তায়ালার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ও প্রিয়।
চ. প্রতিকূল পরিবেশে প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের সম্ভ্রম বজায় রাখা সর্বোত্তম ইবাদত।
ছ. নফল দান খয়রাত করার সময় সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা ও আত্মপ্রচার থেকে নিজেকে দূরে রাখা মু’মিন চরিত্রের সর্বোত্তম ভূষণ।
ভাগ্যবান এই সাত ব্যক্তি থেকে আমরা কোথায়: উক্ত হাদীসে উল্লেখিত সাত শ্রেণীর ব্যক্তি তাদের উল্লেখিত আমলের মাধ্যমে কিয়ামতের কঠিন মুহূর্তে মহান আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়ায় স্থান লাভের মাধ্যমে সে দিনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবেন, পরিশেষে জান্নাত লাভে হবেন ধন্য। কি মহৎ ছিল তাদের আমল! যারা পৃথিবীতে ক্ষমতা লাভের পর দাম্ভিকতা প্রদর্শন না করে প্রতিষ্ঠা করেছেন ন্যায়ের শাসন। যৌবনের উম্মাদনাকে পদ্দলিত করে যৌবনকে অতিক্রম করেছেন আল্লাহর দাসত্ব ও গোলামীর মাধ্যমে, যাদের হৃদয় দুনিয়ার ব্যস্ততাকে এড়িয়ে ছুটে যেত মসজিদের পানে। যারা একে অপরকে ভালবাসতেন দুনিয়ার কোন স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়; বরং শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তেই। যাদেরকে সভ্রান্ত বংশের সুন্দরী নারী অশ্নীলতার দিকে আহবান জানালেও তাকে প্রত্যাখ্যান করে মহান রবের ভয়কে প্রাধান্য দেয়। যারা তাঁরই নিমিত্তে অতি সংগোপনে তার পথে দান করে। যারা তাকে অতি প্রেম ভরে স্মরণ করে এবং নিরবে নিভৃতে অশ্র“ ঝরায় দু’নয়নে। অথচ আমরা আজ কোথায়? আমরা কি তাদের মত হতে পেরেছি? আরশের ছায়াতলে কি আমার স্থান মিলবে? কোন সে আমল আমি তার জন্য করেছি? উক্ত সাতটি আমলের কোন একটিও কি আমি পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করতে পেরেছি? আমি কি এখনও অপরাধের সময় আমার রবকে স্মরণ করে পরিত্যাগ করি। যদি তাই না হয় তাহলে এখনি তওবা করে নেই। বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার দিকে সকল প্রকার অপরাধ বর্জন করে ফিরে যাই। তাহলে তাঁর আরশের ছায়ায় আশা করা স্বার্থক হবে।
মহাপ্রলয় সৃষ্টিকারী কিয়ামত দিবসে নিরাপত্তা পেতে হলে উপরোক্ত সাতটি গুণে গুণান্বিত হওয়ার বিকল্প নেই। বিশেষত: সাতটির যে কোন একটিও যদি উল্লেখযোগ্যভাবে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় তাহলে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরশের ছায়াতলে নিরাপদে অবস্থান করা সম্ভব হবে। বস্তুত: এই সাতটি গুণের প্রতিটি গুণই ছিল উল্লেখিত সাত ব্যক্তির বিশেষ আমল, যার ওয়াসিলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতবাসী করবেন। সুতরাং প্রতিটি মুমিনের সকল সৎ আমলের পাশাপাশি একটি বিশেষ আমল থাকা অবশ্যই জরুরি, যা হবে একশতভাগ ইখলাস সহকারে। আর সেই গুণ যদি হয় উপরোক্ত গুণাবলীর একটি তবেই কিয়ামতের ভয়াল চিত্রের সম্মুখীন হতে হবে না; বরং আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরশের নিচে ছায়া দানের মাধ্যমে সকল প্রকার ভয় থেকে নিরাপত্তা দান করবেন এবং পরিশেষে জান্নাত দান করবেন। “ আল্লাহ্ তাআ’লা আমাদেরকে এই সাত শ্রেণীর সৌভাগ্যবান মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন, সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন, দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদেরকে কামিয়াব করুন..” পরিশেষে কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ লাভ এবং সুখী সমৃদ্ধ জাতি গঠনে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ দ্বারা মু’মিনদের চরিত্র গঠনে আল্লাহ্ তায়ালার অনুকম্পা লাভের প্রত্যাশায় মুনাজাত করছি। আমিন! ছুম্মা আমিন!!

লেখক : হেড অব ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস
এপিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড