কাল থেকে নগরীতে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম

33

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। জ¦র হলেই ডেঙ্গু হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। প্রয়োজন জনসচেতনতা সৃষ্টি। ঢাকায় ডেঙ্গু যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সে তুলনায় এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থান থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসলে ডেঙ্গু আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। সেজন্য বাস-ট্রেন স্টেশন ও বিমানবন্দরে মশা নিধন ওষুধ ছিটাতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডেঙ্গুমুক্ত চট্টগ্রাম গড়তে এডিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একযোগে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হবে।
গতকাল সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে ‘এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ’ শীর্ষক মহানগর ও বিভাগীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ সম্পর্কিত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন এ সভার আয়োজন করে।
মেয়র বলেন, ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। মসজিদ, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মিডিয়াকর্মীদেরকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে এডিস মশা আর জন্ম নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কারণে মানুষ সচেতন হচ্ছে। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি, বড় বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করে সফল হয়েছি, ডেঙ্গু প্রতিরোধ করেও জয়ী হতে পারবো। এ জন্য জনগণের সহযোগিতা দরকার। কলকাতা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১৯ বছর সময় নিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, বাসা-বাড়িসহ সব জায়গায় একযোগে মশা নিধন অভিযান চালালে বেশি সুফল মিলবে। শুধু সিটি কর্পোরেশনের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। সকলকে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই দেশ ডেঙ্গু মুক্ত হবে।
সভায় সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেক ওয়ার্ড ও মহল্লায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে বিশেষ হেলথ কমিটি গঠন, ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, এডিস মশা নির্মূলের ওষুধ সহজে পাওয়ার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ কর্নার স্থাপন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া মেয়রের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন, নির্মাণাধীন ভবনে, গরুর বাজারে জমে থাকা পানি দ্রæত অপসারণসহ বন্ধের দিনগুলোতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, মানুষের চলাফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে কাজ করতে হবে। আমাদের কাছ থেকে অনেক দেশ দুর্যোগ মোকাবেলার পদ্ধতি শিখে। তারা শিখতে চায়। দ্রæততার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবো আশা করি। আমরা দিনরাত আন্তরিকতার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি। একযোগে কাজ করতে হবে। এ বছরটা কাজে লাগালে মেয়র আগামী বছর চট্টগ্রামকে মশামুক্ত নগরী ঘোষণা করতে পারবেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সকল কর্মচারী জনগণের সেবায় সর্বদা সচেষ্ট থাকতে বাধ্য। ডেঙ্গুর বিষয়টি সারাদেশে দুর্যোগ হিসেবে দেখা দেয়ার কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ও তাদের ছুটি থাকবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অত্যন্ত সর্তক রয়েছে। আশা করি ৮/১০ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে। ঘরে যদি এডিস মশা থাকে তাহলে বাইরে নিরাপদ রেখে কোনো লাভ নেই। আমরা সকলে নিজের কর্মস্থল, বাড়ি-ঘর ও আঙ্গিনা নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে ডেঙ্গু রোধ করা সম্ভব হবে। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, এডিস গৃহপালিত মশা। পাওয়ারফুল ওষুধে এডিস মরবে কিনা জানি না কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি হবে না। সারা বছর সমন্বিতভাবে মশা নিধনে কাজ করলে সুফল মিলবে।
ষ্কেু নিয়ে যারা ব্যবসা করছে, ৫০০ টাকার ফি হাজার টাকা নিচ্ছে, ১২৫ টাকার ক্রিম ৫০০ টাকা নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা করতে হবে। চসিককে বাসা বাড়িতে স্বচ্ছ পানি জমলে, অপরিষ্কার করলে জরিমানা করতে হবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু একটি হুমকি। ডেঙ্গু রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়াকে জরুরি ভূমিকা রাখতে হবে। জ্বর আসলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা জরুরি নয়। চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দেবেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করা দরকার কিনা। কোথাও ২৪ ঘণ্টার বেশি পানি স্থির না থাকলে এডিস মশা জন্মানোর সুযোগ নেই।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আত্মতুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের শপথ নিতে হবে, নিজের আঙিনা নিজে পরিষ্কার করবো।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, বিভাগীয় পরিচালক (স্থানীয় সরকার) দীপক চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মো. জাফর আলম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর স্বপন কুমার চৌধুরী, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অঞ্জন কুমার নন্দী, সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, চমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম হোসেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন, চউক সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম, চসিক’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, অপরাজেয় বাংলাদেশ’র ইনচার্জ মাহবুব উল আলম প্রমুখ।