কাল থেকে কমতে পারে বৃষ্টি

71

‘তালপাকা’ ভাদ্রের শেষ সপ্তাহে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু দুর্বলতা কাটিয়ে প্রবল হয়ে ওঠায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তবে, আগামীকাল শনিবারের মধ্যেই বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলবর্তী দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একশ’ চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের এলাকায়। এছাড়া, দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলে ইতিপূর্বে জারি করা তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, মৌসুমী বায়ু সল্ডিয় থাকার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। তবে, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী আটচল্লিশ ঘন্টা বা দু’দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পাবে।
অধিদপ্তরের রেকর্ডকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় দেশের সবকটি বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন অঞ্চলেই তুলনামূলকভাবে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। চট্টগ্রামের বাইরে রাজশাহীর বদলগাছীতে ৭৬ এবং খুলনা সদরে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর ও কুতুবদিয়া ছাড়া বিভাগের আওতাধীন স›দ্বীপে ৫০ মিলিমিটার, সীতাকুন্ডে ৫৮, রাঙামাটিতে ৪৯, কুমিল্লায় ৩০, নোয়াখালীতে ৬৭, ফেনীতে ৫২, হাতিয়ায় ২৪ এবং কক্সবাজারে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে। এর প্রভাবে রংপুর, বরিশাল, কুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী দু’দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত পয়লা সেপ্টেম্বর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠক শেষে জানানো হয়েছিল, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ভারী মৌসুমি বৃষ্টির কারণে এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে দুটি মৌসুমী নিম্নচাপ। সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য পরিমাণের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৭৮ মিলিমিটার হলেও ২৫০ থেকে ৩০৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। একইভাবে ময়মনসিংহে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫২ মিলিমিটার হলেও তা ৩১৫ থেকে ৩৮৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩১৭ মিলিমিটার হলেও তা ২৮৫ থেকে ৩৮৫ মিলিমিটার, সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০৭ মিলিমিটার হলেও তা ৩৬৫ থেকে ৪৫০ মিলিমিটার; রাজশাহীতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩১৫ মিলিমিটার হলেও তা ২৮৫ থেকে ৩৪৫ মিলিমিটার; রংপুরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৭ মিলিমিটার হলেও তা ৩৭৫ থেকে ৪৬০ মিলিমিটার, খুলনায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৭ মিলিমিটার হলেও তা ২৫০ থেকে ৩০৫ মিলিমিটার এবং বরিশালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩১৬ মিলিমিটার হলেও তা ২৮৫ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।