কালো টাকা দিয়ে ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা সফল হবে না

20

স্বৈরশাসকরা যুগে যুগে জনগণের ঐক্য বিনষ্ট করতে কালো টাকা ও সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহারের চেষ্টা করলেও তা সফল হয় না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির বিষয়ে এক আলোচনা সভায় বিএনপিকে নিয়ে গঠিত সরকারবিরোধী জোটের প্রধান নেতা এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই ঐক্য গড়ার চেষ্টা করি, তখনই কালো টাকা দিয়ে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে সামনে আনা হয়। কিন্তু জনগণ এগুলোকে প্রশ্রয় দেয় না বলে সরকার সফল হয় না। সরকার চেষ্টা করে সংকীর্ণ দলীয় বক্তব্য দিয়ে এবং কালো টাকা ব্যবহার করে অনৈক্য সৃষ্টির। কিন্তু তারা কোনো দিনও সফল হয়নি। যখনই আমরা ঐক্যের ডাক দিয়েছি, তখন মানুষ সরকারের এই নেতিবাচক চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠেছে। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে যতগুলো চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে হয়েছে, আমরা সেটা করেছি। এবারও সেটা করতে হবে’।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের উদ্যোগে ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট সমাধানে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি হয়। খবর বিডিনিউজের
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল বলেন, ‘জনগণকে ক্ষমতার মালিকের ভূমিকা রাখতে হবে, আমাদেরকে একত্রিত হতে হবে। সেজন্য আমাদের এই ঐক্যের ডাক, ঐক্যের রাজনীতির ডাক। অতীতে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি, সফল হয়েছি। এবারো আমরা ঐক্যের ডাক দিয়ে নেমেছি, মানুষের সাড়াও পড়ছে। আমরা বিশ্বাস করি, ঐক্যের ডাকের গুরুত্বটা জনগণ উপলব্ধি করছেন’।
এজন্য পাড়া-মহল্লা-গ্রামে ঐক্যের ডাক নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঐক্যকে আরো সুসংহত করে আমরা আগামীতে দেশকে জনগণের নিয়ন্ত্রণে আনব। ঐক্য সৃষ্টি হলে স্বৈরশাসনের সম্ভাবনা থাকে না, স্বৈরশাসন টিকে থাকতে পারবে না। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে মানুষকে বুঝাতে পারি দেখেন, আমাদের শক্তি উৎস জনগণ, তাদের সাড়া আমরা সব সময় পেয়েছি। আমাদের সবাইকে মাঠে লেগে থাকতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে’।
ড. কামাল বলেন, জনগণের শাসন হবে প্রত্যেক স্তরে কেন্দ্রতে, জেলায় জেলায়, স্থানীয় পর্যায়ে সবখানে। এটা হলে কার্য্কর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো অর্জিত হবে।
সভায় ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের প্রসঙ্গ টেনে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘সম্রাট সাহেবের ইনটেরোগেশনটা জাতি শুনতে চায়। কাকে কাকে টাকা দিয়েছেন? কেন ২৫ দিন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে দেরি হলো? বাজারে গুজব, অনেক মন্ত্রীর নাম আছে। আমাদের দেশের মানুষকে সন্দেহের মধ্যে রাখবেন না, বিষয়টা পরিষ্কার করুন। সম্রাট বলুক সে কারে কারে টাকা দিতো- এটা আমরা জানতে চাই’।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বিদেশের কাছে ‘পানি, গ্যাস, সীমান্ত’ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য যে চুক্তি হয়েছে, সেটার প্রতিবাদ করে ফেসবুকে আবরার একটা পোস্ট দিয়েছিল, সেজন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। আবরারকে শুধু হত্যা করা হয়নি, বাংলাদেশটাকে হত্যা করা হবে, পুরো জাতিকে হত্যা করা হবে, আমাদের অস্তিত্বকে বিলিন করে দেওয়া হবে, আমাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে হত্যা করা হবে’।
ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘মনে রাখুন, ঢাকায় আসাদ গেটের নাম আইয়ুব গেট ছিল। আসাদের মৃত্যুর পরে এর নাম দিয়েছি আসাদ গেট। সেই আইয়ুব খানও চলে গেছে আসাদ হত্যার কারণে, আবরার হত্যার কারণে আপনাদেরকেও চলে যেতে হবে। সেইদিন বেশি দূরে নয় অপেক্ষা করেন’।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের জাতীয় সমন্বয়ক এ আর শিকদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য মহসিন রশিদ, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আবু লায়েস মুন্না ও সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য দেন।