কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে কৃষাণ-কৃষাণীর জুঁইর

16

হাটহাজারী প্রতিনিধি

কালের বিবর্তনে যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার কৃষাণ-কৃষাণীর ঐতিহ্যবাহী জুঁইর। বাঁশ, বেত ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি মাথাসহ শরীর ঢাকার অন্যতম মাধ্যম জুঁইর এর কদর দিনদিন কমে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। যদিও এক সময় বর্ষা মৌসুমে ধুমধাম করে এ গৃহসামগ্রী জুঁইর তৈরি করে বিক্রির জন্য হাটে-বাজারে নিয়ে আসত এর নির্মাতা গ্রামীণ কারিগররা। তখন তারা ব্যস্ত সময় পার করলেও এখন আর সেই কারিগরদের ব্যস্ততা নেই। প্রামাঞ্চলে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে বলে এসব গ্রামীণ কারিগরেরা অনেকটা বেকার সময় পার করছেন। হাতেগোনা দু-একজন জেলে ও কৃষকের বাড়িতে বাঁশ ও বেতের তৈরি বৃষ্টি থেকে বাঁচার অন্যতম সম্বল প্রাচীনতম বর্ষাতি জুঁইর এখনও মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে। উপজেলার গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের হালদা পাড়ের আশীতি বৃদ্ধ আবদুর সবুর জানান, এক সময়ে জুঁইর খুব কদর ছিল। কিন্তু এখন কয়েক গ্রাম খোঁজ করেও একটি জুঁইর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ জুঁইর বিলুপ্তির পথে। বাপ-দাদাদের ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী জুঁইর স্মৃৃতিস্বরূপ ঘরে রেখে দিয়েছি দীর্ঘসময় ধরে। এদিকে, হাটহাজারী বাজারে জুঁইর কিনতে আসা পৌরসভার চন্দ্রপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, ভারী বৃষ্টির সময় জুঁইর মাথায় দিয়ে জমিতে কাজ করতে অনেক সুবিধা। তাই একজোড়া জুঁইর কিনতে বাজারে এসেছি। তবে দোকানি জুঁইরের নাম বেশি চাচ্ছে। হাটহাজারী থানার ব্রিজ সংলগ্ন ভাই ভাই কুটির শিল্প নামে এক দোকানের মালিক আবু ছৈয়দ জানান, বর্ষাকাল আসলে জুঁইর বিক্রি তার সংসার চলত। বর্তমানে এর ব্যবহার কমে যাওয়ায় এ ব্যবসা এখন আর তেমন চলে না। তারমধ্যে লকডাউনে তিনি অনেকটা বেকার সময় পার করছেন। এসব জুঁইর পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বিবির হাট এলাকায় তৈরী হয়। একটি জুঁইর ১৮০-২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে প্রতিটিতে ২০-৩০ টাকার মতো লাভ হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য জুঁইর এক সময়ে খুবই প্রয়োজনীয় একটি শিল্প ছিল। কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ও যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় এখন আর জুঁইর দেখা যায় না। জুঁইর বললে এখনকার নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা চিনবেও না।