কালুরঘাট সেতু তবুও আশা- হবে একদিন

22

দিগন্তজুড়ে আশার আলো। নদী, পাহাড়, বন-জঙ্গল আর সাগরের ঢেউ’র কলতান ভেদ করে রেল যাবে দরিয়া নগর কক্সবাজারে। চন্দনাইশের দোহাজারি জংশন থেকে কক্সবাজার পধপর্যন্ত রেল লাইন প্রায় প্রস্তÍুত। দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার রেল স্টেশন বলে দিচ্ছে কক্সবাজার রেলভ্রমণ যাত্রীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। সময বেশি নেই, আগামী সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন যাবে কক্সবাজারে। এ সুখবর ভ্রমণপিপাসুদের উৎফুল্ল করবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বুকভরা আশায় কিছুটা হতাশার মেঘ বেঁধেছে আবারও। সেই কালুরঘাট সেতু। এ কালুরঘাট সেতু একসময় দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর অতিপ্রয়োজনীয় পারাপার মাধ্যম হলেও এখন কিন্তু রাষ্ট্রের প্রয়োজন। কারণ এটি না হলে সরকারের মেগা প্রকল্প কক্সবাজার রেল যোগাযোগ অসার হয়ে পড়বে। সঙ্গতকারণে আমরা আশা করেছিলাম রেল কর্তৃপক্ষ সহসাত নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করবে। আর এ দাবি আর আশা নিয়েই চট্টগ্রামের ৮ আসনের দুজন সংসদ সদস্য ইহজগত ত্যাগ করেছেন। সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনেও প্রার্থীদের প্রধান প্রতিশ্রæতি ছিল কালুরঘাট সেতু। এরপরও সহসাত হচ্ছেনা নতুন কালুরঘাট সেতু। তবে- হবে! ২০২৮ সালে। এর আগে পুরনো সেতু সংস্কার করা হবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংস্কার শেষ করে এ পুরনো সেতুর নতুন লেপনের উপর রেল যাবে কক্সবাজারে। আপাতত এমনটি সুখবর দিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির। তিনি গত শনিবার চট্টগ্রামে এসে সার্কিট হাউজে আয়োজিত এ সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় কালুরঘাট সেতু নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় বোয়ালখালীর বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের ক্ষোভ ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আপনারা জনপ্রতিনিধি, আপনাদের জবাবদিহি করতে হয়, এটি আমরা বুঝি। আপনাদের শুনতে হয় নিশ্চয়- অনেকদিন তো শুনলাম ব্রিজ হবে, ব্রিজ কই? সংস্কার হলে নতুন ব্রিজ আর হবে কি না, একথা শুনতে হচ্ছে আপনাদের। আমি আপনাদের বলছি- নতুন সেতু হবেই। এটা চ‚ড়ান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একঘণ্টা সময় দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর মেসেজ হচ্ছে, সেতু হবেই। এখন আপনাদের যে মেসেজ সেটা আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব’। রেলসচিব বলেন, ‘কথা খুব পরিষ্কার, কালুরঘাট সেতুর সবকিছু ফাইনাল হয়ে গেছে। প্রথম নকশায় কিছু সমস্যা ছিল। আবার নকশা করা হয়েছে। সেটির চ‚ড়ান্ত অনুমোদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই দিয়েছেন। রোড কাম রেলব্রিজ হবে। এটি তো এখন সিঙ্গেল লেইনে আছে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা ডাবল লেইন করছি। কারণ, ভবিষ্যতে যখন ডাবল লেইনের প্রয়োজন হবে তখন তো আমরা আরেকটা ব্রিজ বানাতে পারব না’। কালুরঘাট সেতু নির্মাণে অগ্রগ্রতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন কিছু চুক্তির বিষয় আছে। আমরা সময় নিচ্ছি, চুক্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, তিনমাস পর সেতুর কাজ শুরু হলে যে খরচ, চারমাস পর শুরু হলেও একই খরচ। সুতরাং সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে দ্রæততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে। আর ২০২৮ সালের মধ্যে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে’। উল্লেখ্য যে, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মিত হয়। ২০০১ সালে ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ কালুরঘাট সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার সেতুটি সংস্কার করা হলেও ভারী ট্রেন চলাচল সম্ভব হয়নি। এই সেতুর কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দোহাজারি রেললাইনটিও সংস্কার হয়নি। বর্তমানে কালুরঘাটের জরাজীর্ণ সেতুটি ব্যবহার করে বোয়ালখালী, পটিয়ার প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। পাশাপাশি বোয়ালখালী অংশে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার ভারী যানবাহন চলাচল করে। যে কারণে সেখানে নতুন সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এ বছর ট্রেন চলাচল শুরু করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের প্রতিবেদন অনুসারে শতবর্ষীয় পুেরানো কালুরঘাট সেতুর শক্তি বৃদ্ধিতে কারিগরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টার্গেট হলো, কালুরঘাট সেতুর সংস্কার ও শক্তিবৃদ্ধির মাধ্যমে সেতুটিকে ভারী ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে কাঙ্ক্ষিত রেল যোগাযোগ চালু করা। এ সংস্কার কাজ জুন মাসে শুরু হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, আপাতত শক্তিশালী করা সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল শুরু করা হবে। পাশাপাশি এখানে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি প্রাক্কলিত খরচে সড়কপথে চলাচলকারী যানবাহন এবং ট্রেন চলাচল করতে পারে এ রকম একটি নতুন বহুমুখী সেতুও নির্মাণ করা হবে। এই নতুন সেতুটি কর্ণফুলী নদীর পানির সারফেস থেকে সাড়ে ১২ মিটার উঁচু করে নির্মাণ করা হবে, যাতে সেতুটির নিচ দিয়ে নানা ধরনের নৌপথে চলাচলকারী নৌযান, ট্যাংকার অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রুটের ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রামের অংশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, অবশিষ্ট ২৫ কিলোমিটারের কাজ আগস্টের মধ্যে শেষ করা যাবে। সূত্রটি আরো জানায়, কালুরঘাট সেতু মেরামতের সময় সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বিকল্প উপায়ে যানবাহন পারাপারে সেতুর নিচে ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। যেভাবেই হোক সরকার নতুন কালুরঘাট সেতুর কাজ শিগগিরই শুরু করে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর কষ্ট লাঘবে আন্তরিক হবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।