কালীপুরের গাছে গাছে ঝুলছে রসালো লিচু

86

মৌসুমি ফল লিচুর সুবাসে ভরে উঠছে বাঁশখালীর জনপদ। সেখানকার বিখ্যাত কালীপুরের লিচুতে ভরপুর প্রতিটি বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে লাল রঙের টসটসে লিচু। ঝুপড়ি গাছগুলোর শাখা-প্রশাখায় লিচু আর লিচু। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এসব লিচু বাজারে আসবে। করোনার প্রকোপে এ অঞ্চলে পাইকারদের আনাগোনা কম থাকায় লিচু গাছতলায় বেশি সময় ব্যয় করছেন বাগান মালিকরা। প্রকৃত বাজার দর পাওয়া নিয়েও বাগান মালিকদের শঙ্কা রয়েছে। খুচরা বাজারকে টার্গেট করেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে বলে ধারণা করছেন চাষীরা।
বাঁশখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু সালেক পূর্বদেশকে বলেন, এবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৬শ হেক্টর জমিতে লিচু গাছ আছে। এখানকার লিচুর চাহিদা প্রচুর। চাষীদের মধ্যে দর পাওয়ার দুশ্চিন্তা থাকলেও খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মনে হচ্ছে। কারণ বাজারে পুরোদমে লিচু আসতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। রোজার শেষ দিকে বাজারে বেশি লিচু আসবে। তখন দামও ভালো মিলবে।
বাঁশখালী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পুঁইছড়ি, চাম্বল, জলদী, কালীপুর, বৈলছড়ি, সাধনপুরে সাড়ে ৬’শ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে কালীপুরেই ৩০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২৪৭টি করে গাছ রয়েছে। ব্যবসায়ীকভাবে উৎপাদনে চায়না-থ্রি ও চায়না-টু জাতের লিচু বেশি বিক্রি হলেও বাঁশখালীতে স্থানীয় জাতের লিচু চাষ হয় বেশি। যে কারণে কালীপুরের লিচুর চাহিদাও আছে দেশজুড়ে। চায়না থ্রি জাতের লিচুর শাঁস বড় কিন্তু বিচি ছোট। ফলনও আসে দেরিতে। এখানকার স্থানীয় জাতের লিচুর শাঁস ও বিচি ছোট হলেও আগেভাগেই ফলন আসে।
কালীপুরের সবচেয়ে বড় বাগানের মালিক জালাল উদ্দিন ঝিনুক। তিনি বলেন, আমাদের তিনটি বাগানে প্রায় এক হাজার লিচু গাছ আছে। গহীন পাহাড়ে সৃজিত বাগানগুলোতে প্রচুর লিচু ধরেছে। সপ্তাহ খানেক পর লিচু বাজারে আসবে। লকডাউনের কারণে বাইরের পাইকার না আসায় স্থানীয় পাইকারদের কাছেই বাগান লাগিয়ত করা হয়েছে। প্রতিবছর দুটি বাগান লাগিয়ত করে ৪-৫ লক্ষ টাকা পাওয়া গেলেও এবার দুই লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি।
পাইকার লিচু ব্যবসায়ী আবু তালেব পূর্বদেশকে বলেন, আগেভাগেই কিছু লিচু বাগান নিয়েছিলাম। দেশের এমন পরিস্থিতিতে লিচু এবার বাইরে বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কায় আছি। ভাবছি খুচরা বাজারেই এবার সব লিচু বিক্রি করবো। লিচু বাগান নেয়ার পর বাগান পাহারায় শ্রমিক দিতে হয়েছে। আনুসাঙ্গিক কিছু খরচও বাড়বে। সে হিসেবেই বাজার দর নির্ধারণ করা হবে। বিগত বছরে ছোটবড় হিসেবে প্রতিশত লিচু ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এবারো আশা করছি একই দর থাকবে।
কালীপুরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নয়ন বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, কালীপুরে ৩০০ হেক্টরজমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সামান্য আবাদ বেড়েছে। প্রতি শতকে একটি গাছ অনুপাতে এক হেক্টরে ২৪৭ গাছ আছে। এখানে চায়না থ্রি জাতের লিচুর চেয়ে কালীপুরের বিখ্যাত স্থানীয় জাতের লিচুর চাষ বেশি হয়। তবে এবার নতুন বাগান সৃজন তেমন হয়নি। সবগুলো পুরাতন বাগান। বাগানে ফলন ভালো হয়েছে, লিচুর রঙও এসেছে। তবে ফল এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে বাজারে লিচু আসবে। লিচু পরিপক্ষতার পর্যায়ে থাকায় বর্তমান সময়ে যে বৃষ্টি হচ্ছে এতে কোন ক্ষতি হবে না। করোনা পরিস্থিতির উপর লিচু বাজারের ভালো দাম পাওয়া নির্ভর করছে।
কালীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আ.ন.ম শাহদাত আলম পূর্বদেশকে বলেন, কালীপুরের লিচু সারাদেশেই বিখ্যাত। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদাও প্রচুর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এসে এখানকার লিচু কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করে।