কালারপুল সেতুতে গতি ফিরবে দুই উপজেলাবাসীর জীবনযাত্রায়

30

আবেদ আমিরী, পটিয়া

বার্জ্যরে আঘাতে ২০০৭ সালে বেইলি সেতু বিধ্বস্ত হওয়ার ১৫ বছর পর নির্মিত কালারপুল সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে আগামিকাল সোমবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন করবেন। এ সেতু উদ্বোধন হলে শিকলবাহা খালের পূর্ব তীরসহ পটিয়ার চারটি ইউনিয়নে অবস্থিত প্রায় অর্ধশত ভারী শিল্প কারখানার স্থবিরতা কেটে যাবে। পাশাপাশি সাতটি ইউনিয়নের লোকজনের জীবন যাত্রায় ফিরবে গতি। এর সুফল পাবে বোয়ালখালী উপজেলার শিল্পকারখানার মালিক ও বাসিন্দারা। বোয়ালখালীর শিল্পকারখানার মালামাল ও লোকজন কালুরঘাট সেতুর ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছে করলে এ সেতু ব্যবহার করতে পারবেন।
২০০৭ সালে বেইলী সেতু বিধ্বস্তের সাত বছর পর ২০১৪ সালের ৯ মার্চ উন্মুক্ত করা হয় আরো একটি বেইলি সেতু। যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতুটির উদ্বোধনের পরপরই জনসাধারণের চলাচালের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কিন্তু এক বছরও স্থায়ী হয়নি সেতুটি। নির্মাণ কাজে নানা অনিয়মের কারণে সাত মাসের মাথায় আবারো ভেঙে পড়ে সেতুর একাংশ। এরপর পটিয়া আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরীর চেষ্টায় ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এবার গার্ডার সেতু নির্মিত হয়। নব নির্মিত ওই গার্ডার সেতু আগামিকাল ৭ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। এরপর সেতুটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, এ সেতু পটিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বাসিন্দা, কলকারখানা ও বোয়ালখালীবাসীর জন্য স্বর্ণদ্বারে পরিণত হয়েছে। এ সেতু পটিয়া ও বোয়ালখালীর জন্য খুবই জরুরি ছিলো। আমাদের বহু চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ সেতু নির্মিত হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর পর একেক সময় একেক সমস্যা দেখা দেয়। সব প্রতিক‚লতাকে জয় করে অবশেষে সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্নেহ করেন, তাই আমার আবদার রাখতেই তিনি নিজেই এ সেতুর উদ্বোধন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে এস আলম কোল্ডরোল মিলের মালবাহী একটি বার্জ্যরে ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই অশুভ পিছু লেগে ছিল। ওই সেতুর কারণে গত ১৫ বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কালারপুল সেতুর উপর নির্ভরশীল পটিয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, বয়স্ক জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীসহ সাধারণ লোকজনদের। নদী পথে পার হতে গিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। সেতুর কারণে ওই অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতা বেড়েছে। সেতুর বিধ্বস্ত হওয়ার দিন প্রতিবাদী জনতা-পুলিশ অবস্থা সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠলে সড়ক বিভাগসহ ১/১১ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে পিলার সেতু নির্মাণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। সরকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ওইদিন লোকজন আন্দোলন স্থগিত করে। কিন্তু পরবর্তীতে কতিপয় মহলের যোগসাজশে সেতু পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কালক্ষেপণ করায় সেতু নির্মাণে দীর্ঘ সূত্রিতা তৈরি হয়।
পরবর্তীতে ১/১১ সরকারের পরিবর্তনের পর পশ্চিম পটিয়া-আনোয়ারা আসনের প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবু এমপি ও পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী পিলার সেতু নির্মাণের জন্য তদবির শুরু করেন। এরই প্রেক্ষিতে সড়ক বিভাগ চব্বিশ কোটি টাকার একটি ডিপিপি তৈরি করে। পরে নির্মাণ ব্যয় ২৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। কিন্তু ওই সেতুতে বিদেশিরা অর্থায়নে আগ্রহ না দেখানোয় সেতু নির্মাণের বিষয়টি আবারো ঝুলে যায়। দুই এমপি গার্ডার সেতুর বদলে আপাতত বেইলি সেতু নির্মাণের জন্য জোর তদবির চালানোর ফলে সরকার পৌনে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। সে মতে ৫ কোটি টাকায় নির্মিত বেইলি সেতু ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উন্মুক্ত করেন। বেইলি সেতু উদ্বোধনের সাত মাসের মাথায় তা আবারো পানির স্রোতে ভেঙে পড়ে। এরপর পটিয়া আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরীর একান্ত চেষ্টায় গার্ডার সেতু পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু ঠিকাদার প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না করায় তা চলতে থাকে ঢিমেতালে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় বছর বেশি সময় পার করে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। সেতুটি সোমবার উদ্বোধন করার পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
এবিষয়ে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, সেতুর কাজ শেষ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই সেতুটি খুলে দেয়া হবে।