কার্ডধারীদের কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না

29

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সারাদেশে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গত রবিবার থেকে বিক্রি করার কথা থাকলেও ডিলারদেরকে পণ্য প্রদান করা হয়েছে গত মঙ্গলবার থেকে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় কার্ডধারী গ্রাহকরা পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, আমরা লাইনে দাঁড়ানোর পর ডিলারদের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলা হচ্ছে আগামীকাল আসেন।
গ্রাহক রেশমি দেব অভিযোগ করে বলেন, আমি এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু পণ্য শেষ হয়ে যাওয়াতে নাকি আমাকে আজ পণ্য দিতে পারবে না। আগামীকাল আসতে বলছেন। তাহলে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় যে সময় নষ্ট হয়েছে, তার মূল্য দিবে কে?
পণ্য শেষ হওয়ার বিষয়টি ডিলার স্বীকার করেছেন। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ৩৩নং ফিরিঙ্গী বাজার এলাকার ডিলার মো. আলাউদ্দিন বলেন, প্রতিদিন আমাদেরকে ৫০০ জন গ্রাহকের পণ্য প্রদান করা হয়। তার বেশি গ্রাহক আসলে আমরা প্রদান করতে পারি না। তাদেরকে বিনয়ের সাথে পরের দিন এসে পণ্য সংগ্রহ করতে বলি। ৫০০ জন গ্রাহককে পণ্য প্রদান করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। চেষ্টা করি ভোগান্তিবিহীন পণ্য প্রদান করতে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, টিসিবি ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে নগরীর এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে পণ্য রাখা হয়েছে। প্রত্যেক ডিলারকে ৫০০ জন কার্ডধারীর পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
পণ্য কম প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু পূর্বদেশকে বলেন, আজকে ৩৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ডিলারদের পণ্য দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের কৌটায় আরও অতিরিক্ত ৮জন ডিলারকে পণ্য দিয়েছি। সুতরাং, নগরীর ৪৫ জন ডিলারকে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পণ্য ঘাটতি হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, একজন ডিলার টিসিবির একাউন্টে টাকা জমা দেয়ার পর জেলা প্রশাসন থেকে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ¯িøপ নিয়ে আসলে আমরা পণ্য দিয়ে দিচ্ছি। ৫০০ গ্রাহকের সমপরিমাণ তেল, চিনি ও মসুর ডাল প্রদান করা হচ্ছে। অনেক সময় ডিলাররা আমাদেরকে জেলা প্রশাসনের সরবরাহ করা ডিও দিতে দেরি করে ফেলেন। তাই তাদেরকে সময়মত পণ্য প্রদান করা সম্ভব হয় না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং টিসিবি’র সমন্বয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এ সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী পূর্বদেশকে বলেন, কার্ডধারী প্রতিজনকে এ দফায় একবার পণ্য প্রদান করা হবে। আগামী মাসে এ কার্যক্রম শুরু হলে তারা পুনরায় আবার নিতে পারবেন। আমরা প্রতি ডিলারকে প্রতিদিন ৫০০ গ্রাহকের পণ্য একসাথে প্রদান করব। তারা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ডধারীদেরকে সরবরাহ করবেন।
তিনি আরও বলেন, একজন উপকারভোগী ৪০৫ টাকার ২ কেজি ডাল, ২ লিটার তেল এবং এক কেজি চিনি কিনতে পারবেন। এভাবে সারাদেশের এক কোটি গরীব গ্রাহক সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারবে। এতে আমাদের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠনে এগিয়ে যাব আমরা। আমি আশা করবো আগামী দেড় বছর অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টিসিবি’র পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে সরকার।
জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৩ লাখ ৯৬৩ জন। আর প্রতি উপকারভোগীকে এই দফায় সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও এক কেজি চিনি বিক্রি করা হবে। এখানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, আর প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা ও মসুর ডাল ৬৫ টাকা দরে বিক্রি করবে টিসিবি।
জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে পর্যাপ্ত টিসিবি’র পণ্য মজুদ রয়েছে। ডিলারদেরকেও ঠিকমত পণ্য দেয়া হচ্ছে। আমরা নিয়মিত এসব তদারকি করছি।
ডিলারদের ডিও প্রদানে দেরি করা হয় কেন, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, টিসিবি’র নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার তিনদিন পর পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। আমরা ডিলারদের টাকা জমা হয়েছে কি না তা যাচাইবাছাই করার পর ডিও প্রদান করি। তারপর তারা পণ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনসহ পুরো চট্টগ্রাম জেলায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২ জন উপকারভোগী টিসিবি পণ্য ক্রয়ের সুবিধা পাচ্ছেন।