কারফিউতেও শ্রীলঙ্কায় থামছে না সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিক্ষোভের আগুনে দাউ দাউ জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। কারফিউতেও থামছে না সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে তার অফিস ঘিরে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। এমপিদের পালানো ঠেকাতে দেশটির বিমানবন্দরে যাওয়া এবং আসার সড়কগুলোতে লাঠি এবং রড নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। একদিনের সহিংস বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দেশটিতে একজন সংসদ সদস্যসহ সাত জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটিতে গতকাল বুধবারও কারফিউ জারি ছিল। তবে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে সামরিক শাসন জারির আশঙ্কা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে।
এদিকে জনরোষের মুখে পড়ে দেশটির একটি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন সোমবার পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও তার পরিবারের সদস্যরা।
নতুন সরকার গঠনের আহব্বান
চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিতে নতুন সরকার গঠনের আহব্বান জানিয়ছেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায় রাজাপাকসে নাগরিকদের শান্ত হওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন।
এর আগে অর্থনৈতিক সংকটকে কেন্দ্র করে গত সোমবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সরকার সমর্থকরা হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। আর দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে।
শ্রীলঙ্কা বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে। পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় দেশটি ওষুধ এবং জ্বালানিসহ জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আমদানি করতে পারছে না। এর আগে দেশটি অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ নেয়। ভৌগলিক কৌশলগত দিক থেকে ২২ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশটির ওপর ভারত ও চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
এদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট নাগরিকদের সহিংসতা বন্ধের আহব্বান জানানোর পাশপাশি তিনি পুলিশ ওসেনাবাহিনীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার এবং জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিক্ষোভ-সহিংসতা দমনে নৌ, বিমান ও সেনাবাহিনীকে গুলির নির্দেশ দিয়েছে।
এক টুইটে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনঃস্থাপন এবং অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সাংবিধানিক আদেশে সম্ভাব্য সবকিছু করা হবে।
দেশটির পুলিশ মঙ্গলবার বলেছে, সোমবারের সহিংসতায় আট জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৩০ জনের বেশি। এ ছাড়া ৮৫টির মতো আগুন হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতাসীন এক এমপি, প্রাদেশিক সভার এক চেয়ারম্যান, পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক এবং এক সার্জেন্ট রয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা ৪৭টি গাড়ি এবং ৩৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়া ৪১টি গাড়ি এবং ৬৫টি বাড়ি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া গাড়ির অধিকাংশই সাবেক মন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের।
এ ছাড়া মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দল সামাজি জানা বালাবউইগেয়ায়ার (এসজেবি) সংসদ সদস্যরা। তবে দলটি শর্ত দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হবে।

শ্রীলঙ্কার পাশেই ভারত
সোমবার রাজাপক্ষেদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। দেশজুড়ে সংঘর্ষের ছবি। এই পরিস্থিতিতে কি প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াবে ভারত? সেনা পাঠাবে কলম্বোয়? এমন গুঞ্জন ক্রমশই জোরাল হচ্ছিল মঙ্গলবার থেকে। কিন্তু গতকাল বুধবারই শ্রীলঙ্কার ভারতীয় দূতাবাসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ভারত যে শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্র, স্থায়িত্ব ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে পুরোপুরি পাশে রয়েছে, তাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধে থেকেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে রাজাপক্ষে ও অন্যান্য রাজনীতিবিদরা প্রাণ বাঁচাতে দেশছাড়া হয়ে আশ্রয় নিতে পারেন ভারতে। ভারতীয় দূতাবাস এই গুঞ্জনও উড়িয়ে দিয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত সব সময়ই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কার জনতার কল্যাণের পক্ষে থাকবে।