কারণ জানতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি

8

কক্সবাজার প্রতিনিধি

উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের কারণ জানতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা সদস্য রয়েছেন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত রবিবারের আগুনে বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুটি বøকে অধিকাংশ ঘর পুড়ে যায়।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, অগ্নিকান্ডে দুই হাজার শেল্টার সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এতে ১২ হাজার রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি হারায়। গতকাল সকাল থেকে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করবে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপি রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। তিনি জানান, অগ্নিকান্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করা হচ্ছে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের স্থায়ী শেল্টার করে দেয়া হবে। তবে অগ্নিকান্ডে নিখোঁজ কিংবা হতাহতের কোনো ঘটনা নেই।
আইওএম এর কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ জানান, গতকাল সকাল থেকে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী তাবু দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ৫টি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। অগ্নিকান্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করার কাজও চলছে।
অপরদিকে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পাঠানো এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, উখিয়ার ১৬নং শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে ৪৬৭টি বসতি ভস্মীভূত হয়েছে। এছাড়া ভাঙচুরসহ নানাভাবে নষ্ট হয়েছে আরো ১২০টি বসতি। সব মিলে ৫৮৭টি বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বসতিতে থাকা সব ধরনের জিনিসপত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অগ্নিকান্ডের পর এনজিও ও প্রশাসন সমন্বিতভাবে অনুসন্ধানে ক্ষয়ক্ষতির এক চিত্র দাঁড় করেন। এই তথ্য মতে, অগ্নিকান্ডে ১৬নং ক্যাম্পের চারটি ব্লকে আগুন ছড়িয়ে যায়। এতে ব্লক বি ১-এ ১৯০টি রোহিঙ্গা ও তিনটি স্থানীয় বসতি পুড়ে গেছে। ব্লক বি ২-এ ৯৫টি রোহিঙ্গা ও পাঁচটি স্থানীয়, ব্লক বি ৩-এ ১৩৪টি রোহিঙ্গা ও একটি স্থানীয় এবং ব্লক সি-এ ৪০টি রোহিঙ্গা ও একটি স্থানীয় বসতি পুড়ে গেছে। তাদের অনুসন্ধানে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ও কারণ খুঁজে বের করা হয়েছে। এক রোহিঙ্গা বসতির চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত।
ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে ৮ নম্বর এপিবিএন’র অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান জানান, বøক বি ১-এর আবু ছৈয়দের বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত। আবু ছৈয়দের স্ত্রী লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে গেলে ঘরের বেড়ায় আগুন লেগে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানান, আগুনে পুড়ে ঘরহারা রোহিঙ্গাদের পাশ্ববর্তী লার্নিং সেন্টার, মাদ্রাসা, মক্তব, ওমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। এনজিও সংস্থাগুলো তাদের জরুরি খাবার সরবরাহ করেছে।