কারচুপি করে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হতে পারে

21

রাজাকারের তালিকায় ত্রুটির কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভাবতে পারিনি। ওরা (অন্যান্য সরকার) ৩০ বছর বছর ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় থাকার সময় হয়তোবা সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রক্ষিত কাগজপত্র কারচুপি করে রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিখে রাখতে পারে। এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। সেই কারণে ভুলটা হয়ে গেছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’
গতকাল বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে তিনি এই দুঃখ প্রকাশ করেন।জেলা শহরের বিজয় মেলা মাঠে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই সমাবেশের আয়োজন করে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
মন্ত্রী বলেন, ‘দুই-চারজন মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় তারা দুঃখ পেয়েছেন। আমার নাম এই তালিকায় এলে যেমন কষ্ট পেতাম, তালিকায় তাদের নাম আসায় একই কষ্ট পাচ্ছি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম থাকলে আমরা অচিরেই যাচাই-বাছাই করে সেই নামগুলো প্রত্যাহার করে নেবো। তবে রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের নাম থাকবেই। পরবর্তীতে যে তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেগুলো জেলা প্রশাসক কার্যালয় বা ইউএনও কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। পরবর্তীতে আর যেন ভুল না হয়, আমরা সেভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করবো।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘এই তালিকায় ইচ্ছাকৃত ভুল ছিল না। রাজাকারদের তালিকায় যাদের নাম ছিল, তা সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল। এ কারণে যাচাই-বাছাই না করেই তালিকা প্রকাশ করায় আমরা এই হোঁচট খেয়েছি। কাজ করতে গেলে ভুল তো হতেই পারে। ৬৪ জেলার ৪৬০টি উপজেলার যে সম্পূরক তালিকা আসবে, পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। ত্রæটিপূর্ণ তালিকা মন্ত্রণালয়ের নিজ উদ্যোগে সংশোধন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জানি আমি বোল্লার (মৌমাছি) চাকে হাত দিয়েছি। রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের তালিকা প্রকাশ করেছি। সঙ্গত কারণেই একটা বিশেষ শ্রেণি ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ৪৮ বছর পরে রাজাকারদের তালিকা করার কী দরকার? তারা তো বলবেনই। কারণ, তাদের আঁতে ঘা লাগে। কী করে তারা বুঝলেন যে তাদের দলেই রাজাকার আছে। তারা (বিএনপি) বলছে, ষড়যন্ত্র করে তাদের নাম নাকি লিখে দেওয়া হয়েছে। কোনও কিছু হলেই তারা শুধু ষড়যন্ত্র দেখে। এট তাদের মুখস্থ কথা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তালিকা সবে শুরু হয়েছে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করছি, আমাদের একটু ভুল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কিছু লোক কিংবা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের নাম রাজাকারদের তালিকায় এসে গেছে। এ ঘটনায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও আমি বিষয়টি জানিয়েছি।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আজ নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস ভুলতে বসেছে। আমাদের বই-পুস্তকেও তা ঠিকমতো উল্লেখ নেই। বারবার আমি দাবি করে এসেছি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা উল্লেখ করলেই চলবে না। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের ঘটনা না জানলে নতুন প্রজন্ম তা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ১৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি করে দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি বাড়ির জন্য ১৬ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও সভাপতি এবং যার নামে বরাদ্দ হবে তিনি সদস্য হবেন। এতে টাকা-পয়সা এদিক সেদিক হবে না। এছাড়া উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে কমিটিতে সদস্য রাখা হবে। মানিকগঞ্জেও ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ১৬ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। আগামী ফেব্রূয়ারি মাস থেকে এই প্রকল্প শুরু হবে।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন জেলা কমান্ডার তোবারক হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান হানজালা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ প্রমুখ।