কাপ্তাইয়ে সড়কের ওপর পাহাড়ধসে নিহত ২

30

অবিরাম প্রবল বর্ষণে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে চলন্ত একটি সিএনজি ট্যাক্সির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাপ্তাই চন্দ্রঘোনার রাইখালীর কারিগর পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন অটল বড়–য়া (৫০) ও সুইলা অং মং মারমা (৪২)। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, রাউজান থেকে বাঙালহালিয়া যাওয়ার পথে রাইখালী-বাঙালহালিয়া সড়কের কারিগর পাড়া এলাকায় হঠাৎ ট্যাক্সির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ওই দুই যাত্রী মারা যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় লাশ দুটি উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নুরুল আলম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গেছে পুলিশ। এর আগে ৮ জুলাই একই উপজেলার কলাবাগান এলাকার মালি কলোনিতে ঘরের ওপর পাহাড়ধসে তাহমিনা বেগম (২৫) ও উজ্জ্বল মল্লিক (৩) নামে দুইজনের মৃত্যু হয়।
টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি সড়কে মাটিধসের কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভারি যানবাহন চলাচল, বাঘাইছড়িতে পানিবন্দী দুই হাজার মানুষ। টানা বর্ষণের ফলে সড়কের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দূরপাল্লার সকল ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বান্দরবান সড়ক, খাগড়াছড়ি সড়ক ও রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের অনেক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কের অনেক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এসব ভাঙ্গনরোধে জেলা প্রশাসন ও সড়ক-জনপথ বিভঅগ মেরামতের কাজ করছে।
রাঙামাটি শহরের পাবলিক হেলথ, ভেদভেদী, আসামবস্তি, তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজারসহ বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধসের খবর পাওয়া গেছে। তবে পাহাড়ধসে বাড়িঘরের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। জানমালের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। এদিকে কাপ্তাই লেকে পানির প্রবল শ্রোতে সকল প্রকার লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিদারুণ কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
এদিকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের ১৪ মাইল এলাকায় একাংশ ধসে যাওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়েছে সড়কটি। প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা না করলে যেকোন সময় সড়কটি বিলীন হয়ে যেতে পারে। রাঙামাটি সড়ক বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা বলেন, সবকটি সড়ক ঝুঁকির মুখে আছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের ১৪ মাইল এলাকায় সড়কের একাংশ ধসে যাওয়ায় সড়ক দুটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তারা কাজ করছে।
জেলা প্রশাসনের তত্তা¡বধানে একটি জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা রাখা হয়েছে। ১০ উপজেলার সকল ধরনের খবরা-খবর আসবে কন্ট্রোল রুমে। এছাড়াও জেলা প্রশাসক নিজেই পাহাড়ধসের সকল ঘটনা সরেজমিনে গিয়ে মনিটরিং করছেন। ঝুঁকিপূর্ণদের ঘরে ঘরে গিয়ে জেলা প্রশাসক তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। যে সব আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন রয়েছেন তাদের খাবার ব্যবস্থা করেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, রাঙামাটি শহরের মধ্যে পাহাড়ধসের বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে শহরের মধ্যে ছোট খাটো কিছু পাহাড়ধস হয়েছে। পূর্বে থেকেই সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। এবার জনগণকে ব্যাপক সতর্ক করা হয়েছে। যেন বৃষ্টি নামার সাথে সাথে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়। ঠিক সে কাজটিই করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় সড়ক ধসে ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানে দ্রæত কাজ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাঘাইছড়িতে বন্যায় প্লাবিত এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপজেলা প্রশাসনের লোকজন সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। আশ্রিয়তদের যা যা দরকার জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তা পাঠিয়েছি। খাদ্যের কোন অভাব নাই।
এদিকে টানা বর্ষণের ফলে বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, নানিয়াচর ও সদর উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, বন্যার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিদিন দু’বেলা করে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
অপরদিকে জেলার প্রত্যন্ত দুর্গম উপজেলা বাঘাইছড়িতে প্রায় পাঁচশ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কেজি করে চাল, ডাল, লবণসহ অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান হাবিব জিতু বলেন, বর্তমানে ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এর মধ্যে ৫-৬শ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। বাকিরা তাদের নিকটতম আত্মীয়ম্বজনদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।