কাপ্তাইয়ে লিচুর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

44

মো. নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই

চলতি মৌসুমে কাপ্তাইয়ে লিচুর বাম্পার ফলন ও সঠিক মূল্য পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। লিচু চাষ করে উপজেলার প্রান্তিক চাষীদের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এতে অনেকের লিচু চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সৃজিত লিচু বাগানে গেলেই থোকায় থোকায় লিচু নজরে আসবে। মিষ্টি ও রসালো স্বাদের বিভিন্ন জাতের লিচুর সমাহার রয়েছে বাগান গুলোতে। এসব বাগানে বোম্বাই, কালিপুরী, চায়না-থ্রি এবং দেশী লিচুর সমারোহে ছেয়ে গেছে বাগান গুলো। ৩ জুন কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গা ইউনিয়নাধীন সাফছড়ি, আগুনিয়াছড়া, বটতল, পাগলীপাড়া সহ আশপাশের লিচুবাগানে গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের বাগান থেকে সংগ্রহ করা লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে প্রস্তুত করছে চাষীরা। প্রতিদিন এই এলাকা থেকে ৪-৫ টি ট্রাকভর্তি লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বলে চাষীরা জানায়। বেশীর ভাগ গাছের লিচুই মোটামুটি পরিপক্ক হয়েছে। তবে এখনো কিছু গাছের লিচু কাঁচা রয়েছে। বাগান মালিক ও চাষীদের আশা, অল্প সময়ে অবশিষ্ট লিচু পরিপক্ক হয়ে লাল রং ধারণ করবে।
কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা সাফছড়ি সড়কের পাশের লিচু বাগানের মালিক চাষী সুজন তনচংগ্যা জানান, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষ করে ভালোই চলছে তার সংসার। চলতি মৌসুমে তার বাগানে লিচুর ব্যাপক ফলন হওয়া এবং মোটামুটি বাজার মূল্য পাওয়ায় তিনি লাভবান হওয়ার আশা করছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে প্রতি ১শ বোম্বাই, কালিপুরী লিচুর দাম ১শ থেকে ১শ ২০ টাকা, চায়না-থ্রি ১শ ৮০ থেকে ২শ এবং দেশী লিচুর দাম ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে তার বাগানে উৎপাদিত লিচু বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়না বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে লিচু সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। চলতি বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক লিচু গাছেই নস্ট হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান। ওয়াগ্গা পাগলীমুখ পাড়ার আরেক সফল লিচু চাষী টোফেল তনচংগার সাথে আলাপকালে তিনি জানায়, লিচুর ভালো ফলন হলেও সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পানির সমস্যায় ভুগছেন তারা। বিশেষ করে পাহাড়ের উচুঁতে গড়ে ওঠা বাগান গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি দিতে পারলে ফলন আরো ভালো পাওয়া যেত। চলতি মৌসুমে তার বাগানে বেশ কয়েকটি গাছে লিচুর ভালো ফলন পাওয়া গেলেও অপর কিছু গাছে ভালো ফলন আসেনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। টোফেল আরো জানায়, পাহাড়ের কৃষকদের যদি সরকার কর্তৃক উন্নত মানের কিছু কৃষি সরঞ্জাম দেওয়া হয়, এতে স্থানীয় কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে।
প্রসঙ্গত, কাপ্তাইয়ের বেশির ভাগ পাহাড়ী জমি কৃষিনির্ভর। ফলে চাষিরা পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমী ফল উৎপাদন করে দিনদিন সাফল্য পাচ্ছে। বিশেষ করে মৌসুমী ফল লিচু। যা স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। ভিটামিন-সি যুক্ত এই মৌসুমী ফলটি কমবেশী সবার কাছে জনপ্রিয়। কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকার কৃষকেরা এই মৌসুমী ফল চাষ করে থাকে। তারা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করছে এই লিচু। ফলে কেবল মৌসুমী ফলের চাষাবাদ করেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। এবিষয়ে কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ব্লকের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেহ জানান, পাহাড়ী অঞ্চলের কৃষকেরা অনেক পরিশ্রমী। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য তারা অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমিও সবসময় চেষ্টা করি, তাদের কৃষিকাজে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করার জন্য। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উদ্যোগে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন চাষীদের মৌসুমী ফল চাষে উদ্বুদ্ধ ও সহযোগীতা করা হয়। যার ফলে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত এই মৌসুমী ফল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। তাছাড়া এবার কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন লিচুবাগানে ভালো ফলন এসেছে। আমি মনে করি, এতে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা বেশী লাভবান হচ্ছে।