কাদের-ফখরুল দুজনের মুখেই হিরো আলম

10

ঢাকা প্রতিনিধি

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপির একজন সংরক্ষিতসহ ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনে উপনির্বাচন হয় গত বুধবার। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। বগুড়া- ৬ আসনে তেমন সুবিধা না করতে পারলেও বগুড়া-৪ এ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়িয়ে ছড়িয়ে যায় এমপি হতে যাচ্ছেন আলোচিত হিরো আলম।
কিন্তু পরে দেখা যায় ওই আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান হিরো আলম। একতারা প্রতীকে ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট পাওয়া হিরো আলম অভিযোগ করেছেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর অভিযোগ খতিয়ে দেখে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এমন কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সদ্য সমাপ্ত ৬ আসনের উপনির্বাচন এবং আলোচিত হিরো আলমকে নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাও। তাদের মুখে হিরো আলমের নাম উচ্চারিত হয়েছে বারংবার।
গতকাল শনিবার ছিল বিএনপির পূর্বঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ। দেশের ৮ সাংগঠনিক বিভাগের মতো রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে শান্তি সমাবেশ নামে পাল্টা কর্মসূচি পালন করে বিভাগীয় শহরগুলোতে।
গতকাল শনিবার বিকেলে কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজন করে শান্তি সমাবেশের। সেই সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, ‘জাতীয় সংসদকে খাটো করতে বিএনপি মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল’। তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বললেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া! হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠল তাঁর। তিনি ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে’।
অন্যদিকে নয়াপল্টনের সমাবেশে বগুড়ার উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিরো আলমের নাম উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ প্রমাণ করেছে সে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাঁর সঙ্গে জিততে হয়। আবদুস সাত্তার (উকিল) পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র নির্বাচনে গেছেন। তাঁকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে। তাঁকে জয়ী করতে তাদের গুম করতে হয় তাঁর প্রতিপক্ষকে’।
বর্তমান সরকারের অধীনে যে কখনোই কোনো নির্বাচন হতে পারে না, তা সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) কথার জোরে, শুধু চাপার জোরে আজকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বারবার মিথ্যা কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়’।
উল্লেখ্য, এর আগেও আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। তখন তার উপর হামলার ঘটনাও ভাইরাল হয়। নানান কারণে ব্যাপক আলোচিত হিরো আলমকে নিয়ে এবার আগ্রহ ছিল বেশি। বিশেষ করে বগুড়ায় তার সমর্থনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও তাকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। প্রতিদিনই গণমাধ্যমজুড়ে তার প্রচার-প্রচারণা এতোটাই আলোচিত ছিল যে, অন্য প্রার্থীদের নিয়ে তেমনটা দেখা যায়নি।