কাজ শেষের আগেই ব্যয় অনুমোদন

37

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ পর্যায়ে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন বায়েজিদ লিংক রোড প্রকল্পের কাজ। সড়কটির প্রথম প্যাকেজের কিছু কাজের পরিবর্তন আসাতে সেটা প্রস্তাব আকারে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠেছে। গতকাল বুধবার ব্যয় না বাড়িয়ে ১১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
সূত্র মতে, সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার সড়কটি চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস সড়ক। চার লেনের সড়কটিতে ১২টি কালভার্ট ও ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজে সড়ক, কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সড়কটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও গত দুই বছর ধরে গাড়ি চলাচল করছে। এ অবস্থার মধ্যে প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজের কাজে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। ব্যয় না বাড়লেও কাজের পরিবর্তনে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি এটি অনুমোদন দিয়েছে।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডের ব্যয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় বাড়েনি, কিছু ইন্টারনাল আইটেম পরিবর্তন হয়েছে। সেটা অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পের এ প্যাকেজের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ এ প্যাকেজে ছিল। অন্য প্যাকেজের কাজ পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে জটিলতায় আটকে আছে। আশা করছি, সেটাও দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
১৯৯৭ সালে ৪০ কোটি টাকায় ছয় দশমিক চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রোডটি বাস্তবায়নের প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। দুই লেনের সেই প্রকল্পের আওতায় একটি ওভার ব্রিজ নির্মাণের পর প্রকল্পটি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় ছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে নতুন আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দফায় সংশোধন করে ৩২০ কোটি টাকায় ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ও বায়েজিদ বোস্তামী রোডের সাথে সংযোগ করে রোডটিকে চার লেনে উন্নীত করা হয়। রোডের কাজ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার পর পুরনো ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও নতুন ওভার ব্রিজটির কাজ শেষ করা যায়নি। ওভার ব্রিজটি নিয়ে রেলওয়ের সাথে সিডিএ’র বিরোধ তৈরি হয়। রেললাইনের উপর ওভার ব্রিজটির উচ্চতা নিয়ে তৈরি জটিলতার মধ্যে একটি গার্ডার ধসের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে সড়কটি নির্মাণের ক্ষেত্রে পাহাড় কাটতে হয়েছে সিডিএকে। পরিবেশের অনুমোদনের অতিরিক্ত পাহাড় কাটায় সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে পাহাড় ধসের মতো ঘটনায় দুই দফায় সড়কটি বন্ধ করলেও আবার খুলে দিতে বাধ্য হয় সিডিএ। সর্বশেষ পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধায় পাহাড় কাটতে না পারাতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সড়কটির কিছু অংশ। এখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি পায়নি সিডিএ। যদিও সড়ক প্রকল্পটির ৯২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় বাকি কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
বায়েজিদ লিংক রোডের বাকি কাজ সম্পন্ন করতে গতবছর সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। এতে ৩২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে প্রকল্প ব্যয় ৩৫২ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশন এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়েছে। সিডিএ বর্ধিত ৩২ কোটি টাকা জিওবি থেকে নিতে চেয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এই টাকা জিওবি থেকে দিতে আপত্তি জানিয়ে সিডিএ’র নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় করতে বলেছে। বাড়তি টাকা আদায়ে সিডিএ সড়কটিকে টোলের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তেরও অনুমোদন দিয়েছে।