কাউখালীতে অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

14

এম.কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

রাঙামাটির কাউখালীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে অবাধ ব্যবসা। ইছামতি খাল ও পাহাড়ি ছড়া থেকে এসব বালু উত্তোলন করে দেদারছে বিক্রি করছে কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের সিন্ডিকেট। এতে ভাঙছে খালের পাড়, ঘটছে পাহাড় ধসের ঘটনা। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। জড়িতদের মধ্যে আবার ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিও রয়েছেন। সম্প্রতি এমন অভিযোগে উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ডায়ালংপাড়া এলাকায় পরিচালিত এক অভিযানে বিপুল পরিমাণ তিনটি অবৈধ বালুর স্তুপ সন্ধান পেয়েছে কাউখালী উপজেলা প্রশাসন। অবৈধভাবে উত্তোলন করা সব বালু সঙ্গে সঙ্গে জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে দিয়ে ওই এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দেওয়া নওশাদ ইকবাল মনির ও তার বাবা সুলতান আহম্মদ রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা ও চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সীমান্তবর্তী বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ডায়লং পাড়ার প্রবেশমুখসহ এ এলাকায় পাহাড়, খাল ও ছড়ার পাড় কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে অবাধে ব্যবসা করছিলেন।
তাদের এমন অবাধ কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগ বাবা-ছেলের অবাধ বালু উত্তোলনের কারণে অনেক বাসিন্দার জমিসহ খাল ভেঙে যাচ্ছে। বেহাল দশায় এলাকার রাস্তা। ডায়লংপাড়া এলাকার এক সিএনজি চালক নিচাউ মারমা বলেন, প্রতিদিন বালুভর্তি ট্রাক আসা-যাওয়া করার কারণে এলাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। আগে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মিয়া বলেন, সুলতান ও মনির বাপ-ছেলে দু’জনই বড় বড় নেতা। দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে অনেক বছর ধরে এ ধরনের অবৈধকাজ করে আসছিলেন। তারা দোশাল্যাপাড়া ও ডায়লংপাড়া এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন ৩০টির অধিক ট্রাকে করে বালু নিয়ে যায়। এতে আমাদের জমিসহ খাল ভেঙে যাচ্ছে। অনেক অসুবিধার মধ্যে আছি। একই এলাকার পাইকিউ মারমা বলেন, আমার জমির পাশে বালু উত্তোলনের কাজ করা হয়। এতে আমার জমি ভেঙে যাচ্ছে। অনেকবার মানা করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এলাকাবাসী মাহবুব আলম বলেন, কয়েক বছর যাবৎ খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বাপ-ছেলে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
উপজেলার বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়ন পরিষদের ডায়লং এলাকার ৭নং ওয়ার্ড সদস্য পালিত বাসু বলেন, ঐখানে শুধু মনির ও তার বাবা খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে না। তারা সবে এক বছর হচ্ছে বালু উত্তোলনের কাজ করছে। ৭-৮ বছর আগে থেকে সেখানে অনেকে বালু উত্তোলন করছিল। তখন তো কেউ কিছু বলেনি। নওশাদ ইকবাল মনির বলেন, এখানে শুধু আমি না। এখান থেকে এর আগে অনেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল। এমনকি বেতবুনিয়ার আমতলাতে যে খাল থেকে অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করা হয়নি। বালু উত্তোলনের জন্য যন্ত্রপাতি ও মেশিন কিনতে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বিষয়টি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরাসরি ঘটনাস্থল গিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অবৈধভাবে তিনটি বড় আকারের বালুর স্তুপ সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলো জব্দ করে নিলামে বিক্রির পর টাকা রাজস্ব কোষাগারে জমা করা হয়েছে। ওই এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।