কষ্ট পাচ্ছি, লজ্জা লাগছে

17

 

তদন্ত হবার আগেই মারামারি কাটাকাটি শুরু করলেন! না জেনে না বুঝে জোশের বশে আল্লাহ’র বানানো মানুষকে রক্তাক্ত করছেন! না বুঝে লাফিয়ে উঠা এদেশের মানুষের স্বভাব। এজন্য এদেশের মানুষকে নিয়ে যে কেউ সহজে খেলতে পারে। হিন্দুরা মসজিদ ও মাজারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভক্তি ভরে প্রণাম করে। ভক্তি ওঁদের সহজাত। অনেক বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি হিন্দু ছিল এবং আছে। কারো মধ্যে কোনদিন কটাক্ষ করার মানসিকতা দেখিনি। আমার অক্ষরজ্ঞান হিন্দু শিক্ষকের কাছে। আমার আব্বার ব্যবসা চালাতেন এক হিন্দু ম্যানেজার। প্রায় ২৬ বছর তিনি আমাদের দোকানে ছিলেন। আমরা সব ভাই বাসায় না আসা পর্যন্ত তিনি ভাত খেতেন না। মুসলিম হাই স্কুলে পড়ার সময় সম্ভবত: ক্লাস সেভেনের বছর, হয়ত ১৯৮৯ সনে কোরআন অবমাননার প্রতিবাদ স্বরূপ আমাদের স্কুল থেকে সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে মিছিল বের করা হয়।তিনি স্যাটানিক ভার্সেস নামক একটি বই লিখেন। প্রথমে আমরা জানতাম রুশদী একজন ইহুদি। পরে জেনেছি- তিনি মুসলিম। তখন একটু অবাক হয়েছিলাম। বড় ভাইকে বিস্ময়ের কথা জানালে তিনি একটা কথা বলেন, যা আমি আজও ভুলিনি। তিনি বলেন, ‘মুসলমানের ছেলেরাই কেবল নিজের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে আজেবাজে কথা বলার দুঃসাহস দেখায়।
অন্য ধর্মের ছেলেরা নিজেদের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে অসম্মানজনক কথা বলে না।’ তিনি ইতিহাস থেকে সালমান রুশদী ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের নাম বলেন। এঁরা সবাই ছিল জন্মগতভাবে মুসলিমের সন্তান। নামগুলি দেশ বিদেশ উভয় স্থানের ছিল। এতগুলো নাম এই মুহূর্তে মনে নাই। তবে পুরুষ মহিলা উভয়ই ছিল। যাই হোক, বেশি কথা বলাটাও এদেশে বিপদ। এতটুকু বলব- কষ্ট পাচ্ছি, লজ্জা লাগছে। রাসুলে পাক (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো মু’আহিদ (তথা ইসলামী রাষ্ট্রের চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক)-কে অত্যাচার করবে অথবা তার কোনো হক নষ্ট করবে কিংবা তার সামর্থ্যরে বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে অথবা মনের একান্ত ইচ্ছা ছাড়া তার কোনো সম্পদ নিয়ে নেবে, তাহলে জেনে রেখো, আমি তার বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন তর্ককারী হব।’ অর্থাৎ তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করব (আবু দাউদ শরিফ, ২/৪৩৩) ভেবে দেখেন, আপনি মুসলিম। অথচ কেয়ামতের মাঠে হুজুর (স.) আপনার বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ’র দরবারে নালিশ করছেন। উম্মত ও মুসলমান হওয়া এত সহজ নয়।