কলেজ ফেলে ওরা চলে যায় পাশের হোটেল!

31

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাকলিয়ায় কলেজের পাশে গড়ে ওঠা একটি আবাসিক হোটেলকে নিয়ে অভিযোগ ওঠেছে। বাকলিয়া শহীদ এনএমএমজে (নুর হোসেন-ডা. মিলন-মোজাম্মেল-জেহাদ) ডিগ্রি কলেজের পাশেই উক্ত হোটেল ‘জিএম প্যালেস’ এর অবস্থান। অভিযোগ, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীরা অবাধে যাতায়াত করে ওই হোটেলে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বিষয়টি অধ্যক্ষের নজরে আনলে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন কলেজের শিক্ষার্থীরা হোটেলের সামনে জড়ো হয়ে জটলা পাকায়, আড্ডা দেয়, খোশগল্পে মিলিত হয়। কলেজ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের একটা অংশ হোটেলে নিয়মিত যাতায়াত করে। কেউ কেউ তাদের প্রেমিক-প্রেমিকাকে নিয়ে হোটেলে উঠে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। বেশ কিছুদিন ধরে এ বিষয়টি চোখে পড়ায় তারা অধ্যক্ষকে তা অবহিত করে।
বাকলিয়া শহীদ বশরুজ্জামান চত্বর এলাকায় গেলে এর সত্যতা মেলে। দেখা গেল উক্ত হোটেলের সামনে শিক্ষার্থীরা আড্ডা দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ কলেজ থেকে বের হয়ে হোটেলেও ঢুকে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি জানান, ‘কলেজের এক শিক্ষার্থী তার প্রেমিককে নিয়ে হোটেলে উঠে। স্থানীয়রা তা প্রিন্সিপালকে জানায়। কিন্তু এখনও হোটেলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’
সাকিব নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এখানে পড়ালেখা করতে এসেছি। কিন্তু কলেজের সামনে একটা আবাসিক হোটেল থাকার কারণে এলাকা ও কলেজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’
একটি সিসিটিভি ফুটেজ এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। ভিডিওটি গত ৩১ মে দুপুর ১২টার দিকের। ফুটেজে প্রেমিককে সাথে নিয়ে এপ্রোন পরিহিত এক কলেজ ছাত্রীকে হোটেল রুমে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ঠিক এ ফুটেজের মত বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ আছে প্রতিবেদকের হাতে। যেখানে হোটেলের সামনে ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে গত রবিবার জিএম প্যালেসের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন বাকলিয়া শহীদ এনএমএমজে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক। এতে বলা হয়, ‘কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উত্তর পাশে কলেজগামী সড়কের মুখে জিএম প্যালেস নামে একটি আবাসিক হোটেল গড়ে উঠে। উক্ত আবাসিক হোটেলটি কলেজের সম্মুখে হওয়ায়, উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েরা ওই হোটেলে আনাগোনার কারণে এলাকার শান্তি, শৃঙ্খলা, পরিবেশ ও অত্র কলেজের ভাবমুর্তি নষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অত্র এলাকার পরিবেশ রক্ষার্থে এই আবাসিক হোটেলের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক পূর্বদেশকে বলেন, ‘অনেক ছাত্র-ছাত্রী আমাকে বলেছে জিএম প্যালেস হোটেলটিতে দিনের বেলায় শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়া করছে। একই অভিযোগ স্থানীয়রাও জানিয়েছেন। পরে বিষয়টি নিয়ে কলেজ কমিটির সাথে আলোচনা করি। তারা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দিলে তা করি। আমি চাইবো প্রশাসন যেন হোটেলটির বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
তবে জিএম প্যালেস হোটেলের মালিক মো. জিয়া এসবের অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার হোটেলে কোন অনৈতিক কর্মকান্ড চলে না। এরকম কিছু নেই এখানে। তবে শিক্ষার্থীরা সবসময় হোটেলের সামনে ভিড় করে থাকে।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন বলেন, ‘কলেজের সীমানার মধ্যে যদি কোন হোটেল হত তবে আমি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম। এখন এটা যখন সীমানার বাইরে আর এলাকার শান্তি, শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে সেক্ষেত্রে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করা হবে। উনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা কার্যকর করা হবে।’