কলড্রপে ৩ গুণ ক্ষতিপূরণ

22

পূর্বদেশ ডেস্ক

একই অপারেটরের দুটি মোবাইল নম্বরের মধ্যে প্রতিটি কলড্রপের জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহকরা; আর কলড্রপের পরিমাণ জানতে পাবেন এসএমএসে। মোবাইল অপারেটরদের গতকাল সোমবার এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। আগামি ১ অক্টোবর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই নির্দেশনা আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করেছে বিটিআরসি; যাতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ জানান, অন নেট কলড্রপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের আর্থিক এবং মানসিক ক্ষতি বিবেচনায় ক্ষতিপূরণ হিসাবে দৈনিক ১ম ও ২য় কল ড্রপের ক্ষেত্রে প্রতিটি কল ড্রপের জন্য ৩টি করে পালস (প্রতি কলড্রপের জন্য ৩০ সেকেন্ড) টকটাইম দিতে হবে। পরবর্তী ৩য় থেকে ৭ম কলড্রপের প্রতিটি কল ড্রপের জন্য ৪টি পালস বা ৪০ সেকেন্ড করে গ্রাহককে টকটাইম ফেরৎ দিতে হবে বলে জানান তিনি।
নাসিম পারভেজ বলেন, অন-নেট বা একই অপারেটরের ভয়েস কল ড্রপের ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অফ-নেট বা ভিন্ন অপারেটরের কলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বা তার পদ্ধতি কী হবে, সেটা নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে বলে জানান তিনি।
কলড্রপের ক্ষতিপূরণ কীভাবে দিতে হবে, সেই বিষয়ে তিনটি শর্তও টেলিকম অপারেটরদের দিয়েছে বিটিআরসি।
শর্তগুলো হচ্ছে-
১। কল ড্রপের ফলে ফেরতপ্রাপ্ত টকটাইম পরবর্তী দিনের প্রথম কল (০০:০০ ঘণ্টা) থেকেই ব্যবহারযোগ্য হবে অর্থাৎ, ফেরত প্রাপ্ত টকটাইম সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার হওয়ার আগে গ্রাহকের একাউন্ট হতে কল বাবদ কোনো টাকা কাটা যাবে না।
২। কল ড্রপের ফলে ফেরতকৃত টকটাইমের বিষয়ে গ্রাহককে এসএমএস-এর মাধ্যমে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে।
৩। কোনো অপারেটর চাইলে কল ড্রপ সংঘটিত হওয়ার পর ওই দিন থেকেই কল মিনিট ফেরত দিতে পারবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী ইউএসএসডি কোডের মাধ্যমে গ্রাহক কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে জানিয়ে নাসিম পারভেজ বলেন, ‘জবাবদিহিতা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে সকল মোবাইল অপারেটর অভিন্ন ইউএসএসডি কোডের (*১২১*৭৬৫#) মাধ্যমে একজন গ্রাহক পূর্ববর্তী দিন বা সপ্তাহ বা মাসিক অন-নেট কলড্রপের পরিমাণ জানতে পারবে’। খবর বিডিনিউজের
মোবাইল অপারেটরগুলোর কলড্রপ নিয়ে গ্রাহকদের অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। ২০১৬ সালে সংসদেও তা নিয়ে সমালোচনা ওঠার পর কলড্রপের হিসাব কষতে শুরু করে বিটিআরসি।
কলড্রপ ঠেকাতে ২০১৬ সাল থেকে বিটিআরসির নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে নাসিম পারভেজ জানান, এতদিন কোনো অপারেটরকে প্রথম কলড্রপের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দিত না। গ্রাহকের যত কলড্রপ হত, তার প্রায় ৬৫ শতাংশই হয় প্রথম কলড্রপ। প্রথম থেকে ৭ম বার পর্যন্ত কলড্রপ হয় ৯৮ শতাংশের বেশি।
কলড্রপের বিষয়ে সিদ্ধান্তকে টেলিকম খাতে জনগণের জন্য নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে নতুন ‘মাইলফলক’ হিসাবে অভিহিত করেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘তুমি আমাকে সেবা দেওয়ার কথা ছিল, দাও নাই। মানসিক যন্ত্রণা, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কথা শেষ করতে না পারার বিষয় এখানে আছে। সেবা পাওয়া আমার অধিকার সেটা দাও নাই। সেই অধিকার রক্ষায় আমরা নতুন মাইলফলক তৈরি করলাম’।
কলড্রপকে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল হিসেবে চিহ্নিত করে মন্ত্রী বলেন, বিটিআরসি তা হতে দেবে না।
কলড্রপের ক্ষতিপূরণ টেলিকম অপারেটরদের নেটওয়ার্ক সেবা বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে কি-না, সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করেছিলেন এক সাংবাদিক। সে প্রসঙ্গ টেনে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘সেবার মান তাদেরকে বাড়াতেই হবে। তারা সেবার মান না বাড়াতে পারলে, তার জন্য গ্রাহকরা ভুগতে পারে না। কারণ, ক্ষতিপূরণ তো আমার দরকার নাই, আমি চাই সঠিক সেবা’।
সংবাদ সম্মেলনে কলড্রপের হিসাব তুলে ধরতে গিয়ে টেলিটক ছাড়া বাকিদের হিসাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। সে বিষয়ে এক প্রশ্নে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘টেলিটককে একইভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাদের তথ্য আমরা নিইনি, এটা ঠিক না। তথ্য নিয়েছি, কিন্তু প্রেজেন্টেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি’।