কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’

51

দুই মাসের অধিক সময় ধরে নিশ্চুপ থাকার পর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ইতিমধ্যে মঞ্চের নেতারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। নিয়মিত সভা করছেন নিজেদের মধ্যে। বড় আকারের কর্মসূচির পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। সংঘাত এড়িয়ে কিভাবে কর্মসূচি পালন করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। আর এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নেতারা।
আত্মপ্রকাশের পর থেকে নিরব থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তি মঞ্চের আহব্বায়ক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্র্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, মাঝখানে কোনো গ্যাপ নেই। জাতীয় মুক্তি মঞ্চ যে আদর্শ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হয়েছে, তা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কর্মকান্ড অব্যাহত আছে। রাজনীতির অর্থ এই নয় যে, রাস্তায় মারামারি করা, মাঠে কিংবা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা। রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো আমরা কি চাই, আর জনগণ কি চায় তা সমন্বয় করে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। আমরা বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি।
কর্নেল অলি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠার পর স্বাভাবিকভাবে যথানিয়মে বিনা আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটবে। আগামীতে যে কোনো সময় প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে। সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের কর্মকান্ডে কোনো বিরতি নেই, এটি গতিশীল। চট্টগ্রামে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মিটিং আছে। শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে আমরা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।
গত জুনের শেষ দিকে বিএনপি জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে আরেকটি জোট। কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন দলের এ জোটে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, খেলাফত মজলিস এবং ন্যাশনাল মুভমেন্টও রয়েছে। গত ২৭ জুন সংবাদ সম্মেলন করে নবগঠিত ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন আহবায়ক অলি আহমদ। এসময় মধ্যবর্তী নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ মোট ১৮টি দফা তুলে ধরেন অলি আহমদ। জনগণকে ঘর থেকে বের করে আনা এবং সরকার যে ভুল পথে আছে সেটা বুঝানোই জাতীয় ঐক্য মঞ্চের মূল কাজ হবে বলে জানানো হয়।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের তিনদিন পর ১ জুলাই চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় মুক্তি মঞ্চ। এসময় চট্টগ্রাম থেকেই জাতীয় মুক্তি মঞ্চের আত্মপ্রকাশ ঘটে বলে জানান কর্নেল অলি। অবশ্য এরপর আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও জাতীয় মুক্তি মঞ্চের আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
জোটের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তি মঞ্চের শরিক দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা পরবর্তী প্রোগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটাকে আমরা বলবো জনসম্পৃক্ত প্রোগ্রাম। কোন জায়গায় করবো, কিভাবে করবো, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। আমাদের প্রধান দুটি দাবি; একটি নতুন নির্বাচন চাই, অন্যটি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে কোনো কার্যক্রম না থাকা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, এরমধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে মানসিকভাবে সবাই ব্যস্ত। আমরা আনন্দিত, বিএনপি ডেঙ্গু নিয়ে কিছু প্রোগ্রাম করেছে। বিশ দলীয় জোটের ব্যানারে না হলেও বিএনপি নিজস্বভাবে অনেক বড় বড় প্রোগ্রাম করেছে। সফল কর্মকান্ডের জন্য বিএনপিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আবার শোকের মাস আগস্ট গেল। শোকের মাসে অনেক কিছু করার যায় না বা অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে।
বিএনপির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে আছে ২০ দলীয় জোট। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে এই জোটের বাইরে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দল নিয়ে বিএনপি গঠন করে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টভুক্ত হয়ে নির্বাচন করলেও জোটের শরিকরা ভোটে যায় ২০ দলীয় জোটগতভাবে। নির্বাচনের আগে-পরে দুই জোটই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানায়। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে প্রথম দিকে ফল প্রত্যাখ্যানও করে তারা। তবে পরে দুই জোট থেকেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। কেউ শপথ নিলে দল থেকে বহিষ্কার করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় দল থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়াতে বিএনপির নির্বাচিত পাঁচ সংসদ সদস্যও শপথ নেন। ভোটের আগে-পরে দুই জোটই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেও এ পর্যন্ত তেমন জোরদার কোনো কর্মসূচিই দেখা যায়নি। বর্তমানে অনেকটা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় বিএনপি। এরমধ্যে সরকার পতন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করার দৃড় সংকল্প নিয়ে হাজির হয় ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’।
এদিকে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে জাতীয় মুক্তি মঞ্চের নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে যাচ্ছেন। গতকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় একটি সভা হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে একটি সভা আহব্বান করা হয়েছে। এসব সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় মুক্তি মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন বলে জানান জোটের আহবায়ক কর্নেল অলি আহমেদ।