কর্মকর্তার দপ্তরে তালা দিল কর্মচারী!

11

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘ব্যক্তিগত তদবির’ না রাখায় হিসাব নিয়ামক দফতরের দরজায় লাথি, কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি এবং সর্বশেষ ওই দফতরে তালা লাগিয়ে তান্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শহীদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবরে এ অভিযোগ দেন হিসাব নিয়ামক দফতরের বেতন ও ভাতা শাখার ৯ কর্মকর্তা।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শহীদ তার পছন্দের ৩ কর্মচারীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে চিকিৎসা লোন প্রদান করতে হিসাব নিয়ামক দফতরে চাপ দিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু হিসাব নিয়ামক শাখা তাকে সিরিয়ালি লোন প্রদান করা হবে বলে জানান। একই তদবির নিয়ে তিনি সমিতির সভাপতিকেও চাপ দেন। কিন্তু তিনিও সাফ জানিয়ে দেন, এ ধরনের অন্যায় তদবির তিনি করতে পারবেন না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার দিন মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় হিসাব নিয়ামক দফতরে গিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই দরজায় পরপর লাথি মারতে থাকেন। এরপর উপস্থিত সবাইকে গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং একপর্যায়ে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, ২০১৮ সালে কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন শহীদ। শুরু থেকে সমিতির জন্য কাজ না করে ব্যক্তিগত কাজ ও তদবির নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। প্রভাব খাটিয়ে নিজের অস্থায়ী চাকরি স্থায়ী করার পাশাপাশি আদায় করে নেন পদোন্নতি। নিজের পছন্দমতো দফতরে বদলিও হয়ে যান খুব দ্রæত সময়ে। এসব কিছুর মধ্যে নিজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরাদ্দ নেন একটি কোয়ার্টারও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মচারী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ২০১৯ সালে তৎকালীন রেজিস্ট্রার নুর মোহাম্মদসহ দফতরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে অশালীন আচরণ করেন। এ ঘটনায় রেজিস্ট্রার নুর মোহাম্মদ অভিযোগ দায়ের করতে গেলে কর্মচারী সমিতির বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসেনের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রারের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পান শহীদ। এছাড়া তৎকালীন আরেক ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও তৃতীয় শ্রেণির সেল প্রধান মো. শাহ আলমের অফিসেও ব্যক্তিগত তদবির নিয়ে অশালীন আচরণ করেন বলে জানা যায়। এরকম আরও অনেক উগ্র আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বেশ সমালোচিত তিনি।
এ বিষয়ে কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত তদবির নিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের হিসাব নিয়ামক দফতরে তালা লাগানোর বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ঘটনায় উপাচার্য বরাবর করা অভিযোগের অনুলিপি আমি পেয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হবে। সেখানে বিষয়টি উত্থাপন করে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে এরআগেও বেশ কিছু মৌখিক অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চবি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ দিছে, দরজায় তালা লাগানো ছাড়া বাকিসব মিথ্যা। আমি দুইমাস আগে তাদের বিরুদ্ধে প্রধান হিসাব নিয়ামকের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তিনি অভিযোগটি উপ-হিসাব নিয়ামক ইফতেখার উদ্দিন মো. আলমগীরকে দিলে দুইমাসেও কোনও সুরাহা হয়নি। আমার দেওয়া অভিযোগ ঢাকতে তারা এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে। অভিযোগকারী নয়জনের মধ্যে চারজন জানেনও না কি অভিযোগ দিচ্ছে। ঘটনার দিন আমি বেতন ও ভাতা শাখায় গিয়ে আমার অভিযোগ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কারও অফিস করার দরকার নেই বলে তালা লাগিয়ে দিই। পরে রেজিস্ট্রার স্যার এসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেওয়ায় আমি তালা খুলে দিই।’
তিনি আরও বলেন, আমি যাদের চিকিৎসা লোন নিতে সুপারিশ করেছি তারা সবাই মরণাপন্নরোগী। অথচ এখন যারা লোন নিচ্ছে তারা অনেকেই চিকিৎসা লোন নিয়ে মোটরসাইকেল কিনেছে। আমি তিন বছরে মাত্র ১০ জনের জন্য তদবির নিয়ে গেছি অথচ আমার সভাপতি মাসে পাঁচজনের তদবির নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার দিন তিনি অন্য একটা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলেই ফোনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূইয়াকে দেন। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, এটা কর্মচারীদের নিজেদের সমস্যা। তারা ঠুনকো বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছে। আমি শোনার সঙ্গে সঙ্গে শহীদকে ফোন দিই এবং সে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। বিষয়টি দ্রæত সমাধান হয়ে যাবে।