কর্ণফুলী নদী ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কমিটি

8

নিজস্ব প্রতিবেদক

এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গুদামে অগ্নিকান্ডের ফলে দূষিত পানি গিয়ে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। দূষণের ফলে নদীর একটি এলাকায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ কারণে নদীর পানি মৎস্য ও জলজ প্রাণীর অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। নদীর দুইটি পয়েন্টের পানি পরীক্ষা করে গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরীক্ষায় জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর ইছানগর এলাকায় প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ০.৭৯ মিলিগ্রাম। বাংলাবাজার ঘাটে অক্সিজেনের মাত্রা পাওয়া যায় প্রতি লিটারে ১.২১ মিলিগ্রাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের (ডিও) মাত্রা ৬ এর নিচে হলে তা জলজ প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক।
গত সোমবার ইছানগরে এস আলমের চিনিকলের গুদামে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত পানির সঙ্গে কারখানায় থাকা পোড়া চিনি ও অন্যান্য উপাদান মিশে সেগুলো নদীতে পড়ে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এ দূষণের ফলে নদীর জলজ উদ্ভিদ হুমকির মুখে পড়বে। তবে এটি র্দীঘস্থায়ী না হলেও ক্ষতি সারতে মাসও লেগে যেতে পারে।
পানিতে দ্রবীভ‚ত অক্সিজেন জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপ‚র্ণ। জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভ‚ত অক্সিজেনের পরিমাণ অবশ্যই ৪ দশমিক ৫ থেকে ৭ মাত্রায় থাকতে হবে। তা না হলে জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকা সম্ভব না। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর চিনি কারখানা এলাকায় নদীর পয়েন্টে পানির ক্ষারতার পরিমাণ ৩ দশমিক ১ মিলিগ্রাম আর বাংলাবাজার পয়েন্টে ৩ দশমিক ৬৮ মিলিগ্রাম। যা নদীর পানির পিএইচ বা আম্লীয়ের পরিমাণ ছয় থেকে সাতের মধ্যে থাকতে হয়। এর কম হলে পানিকে আম্লীয় এবং বেশি হলে ক্ষারীয় বলা হয়। এসব পয়েন্টে জৈব রসায়নিক অক্সিজেন বা বিওডির পরিমাণ ৩০ মিলিগ্রাম ।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপপরিচালক কামরুল হাসান বলেন, দুর্ঘটনার পর কর্ণফুলী নদীর তিনটি পয়েন্টের পানি সংগ্রহ করে পরিক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। ৪৮ ঘন্টা পযর্বেক্ষণের পর পানিতে ন্যূনতম মানের চেয়ে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) কম পাওয়া গেছে। তাছাড়া পানিতে অম্লীয়(পিএইচ) স্বাভাবিকের চেয়ে কম ছিল। এমন পরিস্থিতিতে জলজপ্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ ইদ্রিস আলী বলেন, কারখানার তরল বর্জ্য নদীতে মিশে মূলত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা পড়ছে। এসব মাছ খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার সম্ভবনা আছে। নদীর এ ক্ষত সারতে মাসখানেক সময়ও লেগে যেতে পারে। তবে আশার খবর হলো, কর্ণফুলীর নিজস্ব ক্ষমতার কারণে এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রকৃতির গায়ে আচড় দিতে সময়ক্ষেপণ করি না। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছি। কারখানা পুড়ে যাওয়ার জন্য আমাদের হাহাকার। কিন্তু প্রকৃতি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। যে যার মত কর্ণফুলী নদীকে দূষণ করছি।
ক্ষতি নির্ধারণে সাত সদস্যের কমিটি গঠন : এস আলম চিনি কারখানার অগ্নিদুর্ঘটনার কারণে কর্ণফুলী নদীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নির্ধারণে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পরিবেশের মহাপরিচালক বরাবর জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে কমিটি প্রয়োজনে নতুন কাউকে সংযুক্ত করতে পারবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (অতিঃ দায়িত্ব) হিল্লোল বিশ্বাসকে আহব্বায়ক এবং চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারকে সদস্য সচিব করা হয়। বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফুল হক এবং পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের উপপরিচালক কামরুল হাসান।