কর্ণফুলী তীরের কয়লা ডিপোটি এখনও সরেনি

17

রাহুল দাশ নয়ন

কর্ণফুলী নদীর তীরের বিপজ্জনক কয়লা ডিপোটি ২০ দিনেও সরেনি। সেখানে এখনও বিপুল পরিমাণ কয়লা মজুত রাখা হয়েছে। অথচ গত ৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে অবৈধ কয়লা ডিপোটি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অভিযানের সময় সেখানে ১১ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুত ছিল। কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটার ব্রিজঘাটের কয়লা ডিপোটি সরিয়ে না নেয়ায় মানুষের মধ্যে কৌতুহল বেড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এক যুবলীগ নেতা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কয়লা ডিপোটি সরাচ্ছেন না।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তীরের কয়লা ডিপোটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সেটি সরিয়ে নিতে এক মাসের সময় দেয়া হয়েছিল।’ সাত দিনের সময় দেয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখবো।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সাহারা এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন কয়লা ডিপোটিতে শ্রমিকরা কাজ করছেন। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সূর্যের তাপে কয়লা ডিপোটিতে যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে। কর্ণফুলী নদীর খুব কাছে হওয়ায় জোয়ারের পানিতে কয়লাগুলো নদীতে পড়ে নদী দূষণ হবে। এই কয়লা ডিপোটি সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে করা হয়েছে। কয়লা উঠানামার জন্য সেখানে অনুমোদন ছাড়া দুটি জেটিও করা হয়েছে।দীর্ঘদিন যাবত সেখানে কয়লা মজুত করে ব্যবসা চলছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সেই ডিপোতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। তখন রাজু নামে একজন ডিপোটির মালিক বলে জানানো হয়েছিল।
কয়লা ডিপোটির বিষয়ে ব্রিজঘাটের বাসিন্দারা জানান, ডিপোটি যে জায়গায় করা হয়েছে সেই জায়গাটি দখলে রেখেছেন কর্ণফুলীর আনোয়ার সাদাত মোবারক নামে একজন যুবলীগ নেতা। তিনিই অন্যকে দিয়ে এই কয়লা ডিপোটি পরিচালনা করান। বৃষ্টি হলেই এই ডিপোর কয়লা মিশ্রিত কালো পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে নামে।
কয়লা ডিপোটির জায়গার মালিক আনোয়ার সাদাত মোবারক পূর্বদেশকে বলেন, ‘তেমন কিছু হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আপনি যখন ফোন করেছেন আপনার সাথে টেলিফোনে নয়, সাক্ষাতে কথা বলবো।’
সূত্র জানায়, অভিযানের দিন ডিপোটিতে ১১ হাজার মেট্রিকটন কয়লা মজুত ছিল। অভিযানকালে ডিপো ইনচার্জ আল আমিনকে আটক করে এক বছরের কারাদন্ড ও পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। সাত দিনের মধ্যে ডিপো থেকে কয়লাগুলো অপসারণের নির্দেশনা দেয়া হলেও সেটি ২০ দিনেও সরেনি।
সেদিন অভিযানে নেতৃত্বে দেয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত পূর্বদেশকে বলেন, ‘ডিপোটি সরাতে আমরা সাত দিনের সময় দিয়েছিলাম। তারা সরায়নি কেন সে বিষয়টি দেখতে হবে। এখন হয়তো না সরালে দ্বিতীয়বার উচ্ছেদ করা হবে। অবৈধ কয়লা মজুতের বিষয়ে আমাদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বও রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ লাইসেন্স ছাড়াই ডিপোটি অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।’