কর্ণফুলী ড্রাইডকের নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী ড্রাইডক লিমিটেডসহ আশপাশের সকল স্থাপনার কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ৭ দিনের মধ্যে নদী রক্ষা কমিশনে প্রতিবেদন জমা দিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীসহ অন্যান্য নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধার এর দখল ও দূষণ’ সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভা শেষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী ড্রাইডকের বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ টিম করা হবে। সেই টিম নির্ধারণ করবে সেখানে কী হয়েছে এবং কীভাবে নদী উদ্ধার করা হবে। ততদিন কাজ বন্ধ থাকবে। এর আগে গত মঙ্গলবার কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা ও তৃতীয় সেতু অংশ পরিদর্শন শেষে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান নদী দখল নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ নদী শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয় সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি এ নদীর তীরে যে বন্দর তার মাধ্যমে হয়। দখল যে হয়েছে সেগুলো অবমুক্ত করতে হবে।
কর্ণফুলী ড্রাইডকের প্রায় সব অংশই নদীর মধ্যে অবস্থিত। এই ফিশারিঘাট (চাক্তাই ভেড়া মার্কেটের বিপরীতে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত নতুন ফিশারি ঘাট), এখানে যে বরফকল সবই নদীর ভেতর ছিল। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। এখানে অনেক সরকারি সংস্থা আছে। সিটি করপোরেশন, সিডিএ, বন্দর, জেলা প্রশাসনের চোখের সামনে একটা নদী কী করে দখল করে ফেলল। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, আনোয়ারার বদলাপুর মৌজায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া এবং ব্যক্তি মালিকানা থেকে কেনা ৩০ একর জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে কর্ণফুলী ড্রাইডক।
এদিকে গতকাল বুধবার (৯ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চাক্তাই খালের মোহনায় কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। এতে স্থানীয় সাম্পান মাঝিরা একাত্মতা প্রকাশ করেন।
নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা এই ধর্মঘট পালন করছি। মঙ্গলবার নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, হালদার মোহনা থেকে বঙ্গোপসাগরের কর্ণফুলীর মোহনা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকায় তিন হাজারের বেশি অবৈধ দখলদার কর্ণফুলী নদী দখল করে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা এই দখলের সঙ্গে জড়িত। এসব অসাধু চক্র প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে প্রভাব বিস্তার করার কারণেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই কর্ণফুলী তার স্বাভাবিক গতি প্রবাহ হারাবে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য দিলরুবা খানম, পরিবেশ সংগঠক নেছার আহমেদ খান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাফর আহমদ, সহ-সভাপতি লোকমান দয়াল, সদস্য মিজানুর রহমান, সংগঠক আরমান হায়দার, সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।