কর্ণফুলী গ্যাসের ৩১ কর্মকর্তার নথি দুদকে

394

বিধি না মেনে নিয়োগের অভিযোগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর ৩১ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথি তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালে ‘সহকারি ব্যবস্থাপক’ পদে এ নিয়োগ দেয় চট্টগ্রামে গ্যাসের রাষ্ট্রীয় সংস্থা কেজিডিসিএল।
অভিযোগ উঠেছে, অনুমোদিত পদ না থাকার পরেও স্বজনপ্রীতি এবং প্রভাব কাটিয়ে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এদিকে ৩১ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নথি তলবে কর্ণফুলী গ্যাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নথি তলব করা কর্মকর্তাদের তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার ভাই এবং পেট্রোবাংলার এক পরিচালকের ছেলেও।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্ণফুলী গ্যাস। বিজ্ঞপ্তিতে সহকারি ব্যবস্থাপক পদের জন্যও আবেদন চাওয়া হয়। ওই নিয়োগে বিধি না মেনে ও অনুমোদিত পদ না থাকার পরেও সহকারি ব্যবস্থাপক পদে ৩২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রায় ৮ বছর বিষয়টি দুদকের নজরে আসে। এরপর অনুসন্ধানে নামে দুদক। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ বিষয়ে কেজিডিসিএলকে চিঠি দেয় দুদক। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় নথি দুদককে প্রদান করে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ৩২ জনের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মীর আসিফ রেজার অ্যাডমিন ক্যাডারে চাকরি হলে তিনি সহকারি ব্যবস্থাপকের পদ ছেড়ে যান। বর্তমানে সহকারি ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৩১ জনের নথি জমা পড়ে দুদকে।
কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপক (পার্সোনেল) মো. আজিজুল হক স্বাক্ষরিত ওই তালিকায় রয়েছেন- মো. বেলাল উদ্দিন, মো. সোহেল মৃধা, মো. আশরাফ আলী, মো. মনজুর রহমান, সুলতান আহম্মেদ, মো. আবদুল আজিজ, মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী, বাসুদেব বিশ্বাস, মো. মাহবুবুল আলম, মাহমুদা সুলতানা, সো. সাখাওয়াত হোসেন, মুহাম্মদ তৈয়বুল ইসলাম, আবদুল মুমিন, মো. মোবারক হোসেন, মো. জাকির হোসেন, মো. হাবিবুর রহমান, ফুয়াদ আউয়াল চৌধুরী, মো. আসাদ উজ জামান, রেবেকা সুলতানা, মো. গোলাম শাহজাহান, শাহিদা আকতার, রাজিয়া সুলতানা মুনমুন, মনোষা রাণী অধিকারী, মো. মনির হোসেন, মো. রাফিউজ্জামান, এ কে এম তোফাজ্জল হোসেন, আবদুল মালেক, মুহা. আবদুর রহিম, মো. সারওয়ার জামান, মো. রফিকুল ইসলাম ও আশিকুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল। লিখিত পরীক্ষায় প্রায় এক হাজারের মতো আবেদনকারী অংশ নেন। পরে মেধাবী অনেককে বাদ দিয়ে প্রভাব কাটিয়ে বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পান দুদক। দুদকের অনুসন্ধান তালিকার ৩১ জনের মধ্যে পেট্রোবাংলার বর্তমান এক পরিচালকের ছেলে ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার ভাইও রয়েছে। এই ৩১ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ-ব্যবস্থাপকও হয়েছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে থাকা ৩১ কর্মকর্তার মধ্যে ৪ জন কর্ণফুলী গ্যাসের ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে পদায়িত রয়েছেন। অন্যরা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তর, কোম্পানি সেক্রেটারিয়েট ডিভিশন, আইন শাখা, বোর্ড শাখা, জনসংযোগ, পার্সোনেল, অ্যাডমিন, এইচআরডি, পরিবহন, বৈদেশিক ক্রয়, ইন্স্যুরেন্স, স্থানীয় ক্রয়, ভাÐার শাখায় পদায়িত আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেজিডিসিএল এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই নিয়োগে সহকারি ব্যবস্থাপক পদে ২০ জন নিয়োগের জন্য বোর্ডের অনুমোদন ছিল। কিন্তু তখনকার নিয়োগ কমিটি প্রভাব কাটিয়ে ৩২ জনকে নিয়োগ দেয়। তন্মধ্যে কম নাম্বার পাওয়া এমন কয়েকজনকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
আরেক সহকারি প্রকৌশলী ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমরাও ওই সময় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয় দুই বছর পর ২০১৩ সালে। সহকারি ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগে কোন নিয়মই মানা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএল এর প্রধান কার্যালয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদারের সঙ্গে। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘যে নিয়োগ নিয়ে কথা উঠেছে, সেটি অনেক পুরোনো, আমার সময়ের নয়। এ নিয়ে দুদক একটি চিঠি দিয়েছিল। আমি সেটা পার্সোনেল শাখায় মার্ক করে দিয়েছি।’ ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুদক সবার নথি নিয়ে গেছে। কারা কারা ছিল আমি জানি না।’