করোনা সংকটে রাঙ্গুনিয়ায় আটকে রয়েছেন সহস্রাধিক প্রবাসী

43

 

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় কমপক্ষে সহস্রাধিক প্রবাসী আটকা পড়েছেন। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় তারা নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। পুনরায় বিদেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেকে শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছেন। আটকে পড়া প্রবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনের। এছাড়া মালয়েশিয়া, আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীও রয়েছেন। এসব শত শত প্রবাসী এখন চরম অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন। তাদের পরিবারেও চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তাদের ভাগ্য এখন বিমান চলাচলের উপর। এ মাসে বিমান চলাচল না হলে এসব প্রবাসীরা দেশে পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারা বিদেশ থেকে যা অর্থ এনেছেন সব শেষ। এখন চলছে দেনা করে। আবার এসব প্রবাসীদের অর্থ দিচ্ছে না এলাকার তাদের আত্মীয়স্বজন। কারণ তারা বিদেশ যেতে না পারলে দেনার অর্থ শোধ করবে কিভাবে। জানা যায়, এসব প্রবাসীরা ২০১৯ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রূয়ারি ও মার্চে দেশে ছুটি কাটাতে আসেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ শুরু হলে তারা দেশে আটকা পড়েন। বর্তমানে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। অনেকে দেশে থাকা অবস্থায় চাকরিও হারিয়েছেন। যারা ব্যবসায় জড়িত তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়ে পথে বসার উপক্রম। আর এসব প্রবাসী বিদেশ যেতে না পারলে অর্থনেতিক সংকটে পড়বে দেশ। তাদের প্রেরিত রেমিটেন্স থেকে দেশ বঞ্চিত হবে। রাঙ্গুনিয়ায় শত শত প্রবাসী বেকার হয়ে অনিশ্চিত জীবন যাপন করবে।
দেশে আটকাপড়া চন্দ্রঘোনা পাটান পাড়া গ্রামের সৌদি আরব থেকে আসা মো. ছৈয়দুল হক জানান, করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার ৪/৫ দিন আগে দেশে আসি। তখন দেশের পরিস্থিতি এরকম ছিল না। আমার ছুটি আরো ১ মাস আগে শেষ হয়েছে। কিন্তু মার্চে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আর ফিরতে পারছি না। ভিসার মেয়াদও শেষ। আমি এখন চরম বেকাদায়। আর্থিকভাবে এখন আমি শূন্যের কোটায়। আদৌ আমি সৌদি আরবে যেতে পারব কিনা দুঃচিন্তাই আছি। আমার মত শত শত প্রবাসী আটকা পড়ে আছেন। এখন আত্মীয়-স্বজনরা আগের মত খোঁজখবর নিচ্ছে না।
সৌদি আরব থেকে স্বপরিবারে আসা চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার মো. মুছা করোনার আগে দেশে আসেন। তারা সেখানে খুবই স্বচ্ছল পরিবার। দেশেও বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। ভিসার মেয়াদ শেষ সবার। এখন বিমান চালু না হওয়ায় ফিরতে পারছেন না নিজ কর্মস্থলে। সৌদিআরবে নিজস্ব দোকান রয়েছে। ওখানে কর্মচারীও রয়েছেন। সব মিলিয়ে চরম বেকাদায়। ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে এ পরিবারে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তিনি বলেন, আমরা ফিরতে না পারলে আমার কি যে ক্ষতি হবে বলে শেষ করা যাবে না। আর দেশ বঞ্চিত হবে বড় ধরনের রেমিটেন্স থেকে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের আবদুল ছত্তার জানান, সেখানে আমার বিশাল সবজির দোকান রয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতিতে আমার কর্মস্থলে ফিরতে পারছি না। ভিসার মেয়াদও শেষ। আমার ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। সেখানে আমার অধীনে অনেক কর্মচারীও আছে। এভাবে হবে জানলে দেশে আসতাম না। সবজি ব্যবসার বড় ধরনের ক্ষতি অনেক আগে হয়েছে। বিমান কখন চলবে তাও বলতে পারছি না। উত্তর রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের বান্দাজার পাড়ার মো. মুছা জানান, আমি কুয়েত থেকে করোনা ভাইরাস শুরুর ১ মাস আগে দেশে আসি। ৩ মাস ছুটি ছিল। এখন ছুটি শেষ। নিজ কর্মস্থলের মালিকের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়েছে অনেকবার। তিনি দ্রুত চলে আসার তাগিদ দিচ্ছেন। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় নিজ কর্মস্থলে আদৌ ফিরতে পারবো কিনা এখন একেবারেই অনিশ্চিত।
বেসরকারি এনজিও সংগঠন অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ইপসার গবেষণায় দেখা যায়, অভিবাসী বিদেশ থেকে আসার সময় সঙ্গে করে যে পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসেছিলেন তা শেষ হয়ে গেছে ৬০ শতাংশ অভিবাসীর। অনেক অভিবাসী এখন আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার বা ঋণ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই মহামারি কোভিড-১৯ তাদেরকে চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তা রিকোভারি হবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।