করোনা মোকাবিলায় বিশ্বনেতা হয়ে উঠছে চীন?

45

কম্বোডিয়ায় করোনা ভাইরাস পরীক্ষার সামগ্রী পাঠিয়েছে চীন। প্লেন বোঝাই করে ইতালি ও ফ্রান্সে পাঠিয়েছে ভেন্টিলেটর, মাস্ক ও চিকিৎসাকর্মী। ইরান ও ইরাকে মোতায়েন করেছে চিকিৎসাকর্মী। বাংলাদেশসহ ফিলিপাইন, স্পেন এবং আরও কয়েকটি দেশকে দিয়েছে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। গত কয়েক সপ্তাহে এসব উদ্যোগের পাশাপাশি স্বস্তি দেওয়ার মতো কথা বলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে তিনি বলেছেন, ‘ঝড়ের পরেই ওঠে সূর্যালোক’। আরও বলেছেন, মহামারি ঠেকাতে দুই দেশের সহযোগিতা ও বিনিময় জোরালো করা প্রয়োজন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, ধীরে ধীরে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার বিশ্বনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে চীন।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত দেশটিতে সবচেয়ে বেশি প্রায় আশি হাজার আক্রান্ত ও প্রায় তিন হাজার দুইশ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে গত কয়েক সপ্তাহে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে বেইজিং। উহানে গত বুধবার নতুন করে একজনও আক্রান্ত হয়নি। গার্ডিয়ান লিখেছে, বিশ্বে যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হয়ে উঠছে এবং চীনা প্রভাব কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে, তখন জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ধীরে ধীরে বিশ্বের নেতা হয়ে উঠছে বেইজিং।
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে সরকারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে চীনা নাগরিকেরা। তথ্যের অপর্যাপ্ততা ও ভাইরাস মোকাবিলার ধীরগতির পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে চীনা নেতৃত্ব। তবে সঙ্গরোধ (কোয়ারেন্টিন) ও সামাজিক শিষ্টাচার (সোশ্যাল ডিসটেন্স) প্রক্রিয়া জোরালো করার পর পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। গত সপ্তাহে ভাইরাস ঠেকানোয় প্রায় পূর্ণ সফলতার দাবি করেছে বেইজিং। অন্য দেশগুলোকে ভাইরাস মোকাবিলায় চীনের দেওয়া সহায়ক ভূমিকার প্রশংসা করেছে দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম।
সিডনির লোয়ে ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কূটনীতিক নাতাশা কাসেম বলেন, ‘এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি চীনা কর্মকর্তারা এবং রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করছে মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বকে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি চীনের অভ্যন্তরের প্রচারণা ম্যাকানিজম ইতিহাসের পুনর্লিখন করতে সক্ষম কিন্তু আমরা এখন দেখতে পারছি বাইরের দুনিয়ায়ও এখন তা সক্রিয় হচ্ছে। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে চীনের জয় পুনর্লিখিত হয়েছে আর দেশটির কর্তৃপক্ষ বাইরের দেশেও সেই বার্তা পাঠানোর জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মানবিক প্রচেষ্টা সত্যি হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মনোযোগ পাওয়ার দাবি রাখে। এই সপ্তাহে ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে চীনের ‘বৈশ্বিক ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভের’ আওতায় একটি ‘হেলথ সিল্ক রোড’ প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা বলে সমালোচনা করে বিভিন্ন দেশ।
জার্মান মার্শাল ফান্ডের সিনিয়র ভিজিটিং ফেলো নোয়াহ বারকিন বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ও অন্য দেশগুলোকে চীনের সহায়তা দেওয়া নিয়ে ভুল কিছু নেই। বিশেষ করে নিজ দেশে তারা ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু এটাও স্পষ্ট যে (বেইজিং) এই সহায়তাকে প্রচারণার উপকরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে’। নোয়াহ বারকিনের মতে, ইতালির মতো দেশগুলোকে সহায়তা দিতে চেয়ে বেইজিং ইউরোপীয় দেশগুলোর পরস্পরের প্রতি অসহযোগিতামূলক পরিস্থিতিকে সামনে আনতে চাইছে। বারকিন বলেন, ‘ট্রাম্প যখন ইউরোপের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তখন চীন উদার, নিঃস্বার্থ বন্ধু’।
চীনের উদ্যোগ কাজে আসছে বলেও মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগি দি মাইয়ো ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। এতে দেখা গেছে, চীন থেকে চিকিৎসা কর্মী ও সরঞ্জাম নিয়ে প্লেন আসছে। ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, এ ধরনের সহায়তা পাঠানো প্রথম দেশ চীন। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুসিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ‘ভাই ও বন্ধু শি জিন পিংকে’ বিশ্বাস করেন। তিনি বলেন, ‘একমাত্র যে দেশ আমাদের সহায়তা করতে পারে সেটি হলো চীন।