করোনা মহামারি কেটে যাক শিক্ষায় সংকট দূর হোক

17

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশে সবচেয়ে বড় সংকটে শিক্ষা ব্যবস্থা। এ সংকট থেকে উত্তরণে বেশকিছু দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রয়াস চালালেও তাতে সফল হয়নি। কারণ খোলার কয়েকদিনের মাথায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যায় ব্যাপক হারে। এ অবস্থা দেখে বাংলাদেশ সরকার সিমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তা আপাতত রোজার আগে আর হচ্ছে না। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের আগেই দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে, পাশাপশি অনলাইনে অফিসিয়ালি একাডেমিক কার্যক্রমও চালু রেখেছে, অথচ ছাত্রাবাস বা হল বন্ধ রেখেছে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে নিঃসন্দেহে। এরমধ্যে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকাবাসীর সাথে শিক্ষার্থীদের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তার অজুহাত তুলে হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে, যা কয়েকদিনের ব্যবধানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-আন্দোলনের চিত্র আমরা গণমাধ্যমে দেখছি। এমনকি তালা ভেঙে হলে প্রবেশের ঘটনাও ঘটছে। এমন ঘটনা দুঃখজনক। এমতাবস্থায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী ১৭ মে থেকে হল খুলে দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত আসে শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে। আর ২৪ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে পাঠদান শুরু হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত সোমবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এমন খবরে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে এটাই স্বাভাবিক। এর আগে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত খুলে দেয়া যায় কিনা তা যাচাই করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দফায় দফায় বাড়িয়ে সর্বশেষ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময়ে দেশের ৫ কোটির অধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ট্রেডিশনাল শিক্ষাসূচি অনুযায়ী চলে আসা শিক্ষাব্যবস্থা হঠাৎ করে হোঁচট খাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন নানাভাবে পড়াশোনা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদ টেলিভিশনে শ্রেণি কার্যক্রম প্রচার আর কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পড়াশোনা করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যেখানে পাবলিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন পাঠদান অতি বেশি দুরূহ মনে হচ্ছে, সেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এটা চিন্তাই করা যায় না। বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা; তাদের না আছে ইন্টারনেট সাপোর্ট, না আছে ল্যাপটপ; স্মার্টফোন থাকলেও নেটওয়ার্কিং ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাব তো আছেই। উপরন্তু অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর পারিবারিক অবস্থা আর্থিক অনটনের মধ্যে যাচ্ছে, যার ফলে উদ্বিগ্নতা আর টানাপড়েনের মধ্যে অনলাইন লেখাপড়ায় মন স্থির এক দুরূহ ব্যাপার। শিক্ষার্থীদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যখন সশরীর শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা নিচ্ছে, অপলাইনে অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাচ্ছেন তখন ছাত্রাবাসও খুলে দিতে হবে। তাদের এ দাবি যৌক্তিক। আশার কথা সরকার ইতোমধ্যে সকল পরীক্ষাও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছে। আমরা আশা করি শিক্ষার্থীরা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মাত্র আর দুমাস ধৈর্যসহকারে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। মনে রাখা চাই, আগে জীবন, এরপর শিক্ষাসহ অন্যসব। অনেকেই মনে করে থাকেন, দেশের সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছে। ক্যাম্পাস খুলে না দিলে শিক্ষার্থীরা সেশনজটসহ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না। এ অবস্থায় আগামী মে মাসে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। টিকার ব্যাপারে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন প্রয়োজনে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরাও আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগেই টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে।