করোনা : ভয়ংকর পরিস্থিতি চীনে

25

পূর্বদেশ ডেস্ক

বর্তমানে করোনায় ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে। এখন সেখানে প্রতিদিন মৃত্যু প্রায় ৯ হাজারের কাছাকাছি। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এ মৃত্যু ছিল দৈনিক ৫ হাজার। সংক্রমণ পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় মৃত্যু এখন আগের ধারণার দ্বিগুণের কাছে পৌঁছে গেছে।
চলতি বছরের নভেম্বর থেকে চীনে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছিল; নিয়মিত শনাক্তকরণ পরীক্ষা, উপসর্গবিহীন রোগীর সংখ্যা প্রকাশ বন্ধসহ বেইজিং তার ‘শূন্য কোভিড’ নীতি থেকে সরে আসায় পরিস্থিতি এখন আরও নাজুক আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভের মুখে চীন তাদের কঠোর কোভিড বিধিনিষেধ শিথিল করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যটকদের জন্য কোয়ারেন্টিন বিধিমালা বাতিল করার মতো পদক্ষেপও। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ চীনের করোনার সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। গত সোমবার বিদেশফেরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের বিধি বাতিলের ঘোষণা দেয় চীন। ঘোষণা অনুযায়ী, ৮ জানুয়ারি থেকে এ বিধি আর কার্যকর থাকবে না। এই ঘোষণা আসার পর থেকে বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। করোনার সংক্রমণ যাতে বাড়তে না পারে, সে জন্য ভারত ও জাপান সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের ওপর নতুন কোভিড বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের করোনার সংক্রমণ ঘিরে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তাই তাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে। মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানও চীনে নতুন করে সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। অস্ট্রেলিয়ার সংক্রমণ রোগবিশেষজ্ঞ ডমিনিক ড্রয়ার বলেন, ‘কোভিড তথ্য নিয়ে চীনের স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ মুহূর্তে দেশটিতে করোনার কোন ধরন বেশি ছড়াচ্ছে, তা আমরা জানতে পারছি না। করোনার টিকা এই ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর কি না, এ তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না।’
ডমিনিক ড্রয়ার আরও বলেন, চীন শূন্য করোনা নীতির বিষয়টি দ্রæত পরিবর্তন করে বিধিমালা পুরোপুরি শিথিল করে দিয়েছে। তাই সেখানে সংক্রমণ দ্রæত ছড়িয়েছে। তবে চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় মাত্র তিনজন মারা গেছেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির ধারণা, চীনে এখনো ১০ লাখের বেশি করোনা রোগী রয়েছেন। এয়ারফিনিটির প্রধান লুইস বেøয়ার বলেন, কোভিড-১৯-এ মৃত্যু হওয়া ব্যক্তির রেকর্ড বদলে ফেলেছে চীন। কেবল করোনা শনাক্তের পর শ্বাসকষ্টে বা নিউমোনিয়ায় কেউ মারা গেলে তার করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলে হিসাব করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্যের অভাবে চীনের করোনার তীব্রতার বিষয়টি ফুটে উঠছে না। তবে সেখানকার চিকিৎসকেরা সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার কথা বলছেন। বেইজিংভিত্তিক চিকিৎসক হাওয়ার্ড বার্নস্টাইন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বেড়েছে। অনেক হাসপাতালের আইসিইউ ভরে গেছে।
চীনের এ পরিস্থিতির কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিজস্ব প্রতিরোধব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। গত মঙ্গলবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর থেকে চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস চীনকে করোনার তথ্য দিতে বলেছেন। দেশটিতে বর্তমানে করোনার কোন ধরন ছড়াচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করতে এ তথ্য জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ২১ ডিসেম্বর গেব্রেয়াসুস এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অপরদিকে প্রতিদিন কোভিডে ৯ হাজারের কাছাকাছি মৃত্যু হচ্ছে বলে অনুমান করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্য তথ্য প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটি।
রয়টার্স জানিয়েছে, চীনে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে এ পর্যন্ত কোভিডে এক কোটি ৮৬ লাখ লোক আক্রান্ত আর মৃত্যু এক লাখে পৌঁছেছে বলে এয়ারফিনিটি তাদের বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে ধারণা দিয়েছে। জানুয়ারির ১৩ তারিখে সংক্রমণ তার প্রথম চূড়ায় পৌঁছাবে, সেসময় চীনে প্রতিদিন ৩৭ লাখ কোভিডে আক্রান্ত হবে বলেও অনুমান এ ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের। তাদের এই মূল্যায়নের সঙ্গে চীনা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ব্যাপক গরমিল দেখা যাচ্ছে।
বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসার দায় এড়াতে কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে অসংখ্য পিসিআর শনাক্তকরণ পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার পর চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দেশটিতে এখন প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতির কথা জানাচ্ছে।
এয়ারফিনিটির অনুমান, চীনে কোভিডে মৃত্যু চূড়ায় পৌঁছাবে ১৩ জানুয়ারি, সেসময় প্রতিদিন ২৫ হাজার মৃত্যু দেখবে দেশটি, আর ডিসেম্বর থেকে সে পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যুও পৌঁছাবে ৫ লাখ ৮৪ হাজারে।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই চীন তাদের কোভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞায় বড় ধরনের বদল আনে। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশটি করোনাভাইরাসে মাত্র ১০ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে। তাদের নতুন সংজ্ঞায়, কেবল তারাই কোভিডে মৃত বলে গণ্য হবেন, যাদের মৃত্যু হবে করোনাভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টে। কোভিডে আক্রান্ত কেউ যদি অন্য কোনো অসুখে মারা যান, তাহলে তার নাম কোভিডে মৃত্যু তালিকায় যুক্ত হবে না।
মহামারী শুরুর পর বুধবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে চীনে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪৬। আর এয়ারফিনিটির অনুমান, আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে চীনজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যু পৌঁছাবে ১৭ লাখে।