‘করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি সরকারি উদ্যোগ ও আমাদের করণীয়’

18

 

করোনা প্রায় নিয়ন্ত্রণে। এতে সরকারের পদক্ষেপ সময়োচিত। এখন কর্মচাঞ্চল্যতা এসেছে। তবে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভীতিকর। চাল, ডাল, তৈল, আটা, ময়দা, চিনি, মাছ-মাংস সকল ধরনের সেবা কর্মের স্কোর বোর্ডের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে দেখুন না দ্রব্যমূল্যকে ঠ্যাক দেয়া দুরূহ হয়ে ওঠেছে। ডলার এর মূল্য হু হু করে গগনচুম্বি। ডলারের বর্তমান মূল্য ৯০ টাকা গড়িয়েছে। অর্থাৎ সেঞ্চুরি করতে মাত্র ১০ রান বাকী। এ ঊর্ধ্বগতির জন্য অর্থনীতিতে চরম ধাক্কা লেগেছে। ব্যাংকে এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন রিজার্ভে হাত পড়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ইস্পিত লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে না। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেড়েই চলেছে। এ লক্ষন ভালো না। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। এর লাগাম ধরে রাখা চাই। সত্যবাদী কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক সাহেবের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেেছ, দাম বেড়েছে। এর পশ্চাতে তাঁর যুক্তি খাদ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দামের ওপর নির্ভরশীল তাঁর ভাস্য “খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ কিনা সেটা আমরা বলছি না কিন্তু আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে।” চালের দাম একটু বেশি হলেও চাল নিয়ে অস্থিরতা নেই। তিনি অর্থনীতির চাহিদা সরবরাহ সূত্রের উল্লেখ করে এও বলেন, ‘পণ্যের চাহিদা যদি বেশি হয় এবং সেই তুলনায় যদি সরবরাহ কম থাকে তা হলে পণ্যের দাম কিছুটা বাড়বেই। তবে টাকার সরবরাহের আধিক্যতার কারণে ও মূল্যস্তর বাড়তে পারে। এ অবস্থঅয় ও অর্থনীতিকে একটা ব্যালেন্স আনা যায় যদি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। আমাদের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে আমদানি করা সম্ভব হয়। আমাদের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে আমদানিকে নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে উৎসাহী করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এখন চলছে ডলার সংকট। এ সংকট টা মাথায় রেখে কিভাবে ডলার সংরক্ষণ করা যায় এ ব্যাপারে বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। শুধু ভারতের যাওয়াতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার অপচয় হয়। এ পরিস্থিতির জন্য কঠোর হওয়া বাঞ্চনীয়।
আমরা স্বাধীনতা লাভ করার পর পঞ্চাশ বছর বা অর্থশত বছর পার করেছি। ভূমি বিবেচনায় বাংলাদেশ অতি ক্ষুদ্র দেশ। জনসংখ্যার বিবেচনা এটি ছোট দেশ নয়। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এ মানুষগুলো যদি দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা যায় তাহলে দরিদ্রতার পিঞ্জিরা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে পারবো A county is said to be poor because its people are poor একটা দেশ কে গরীব বলা যায় কারণ এর মানুষগুলো গরীব। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া আমাদের ফরজ কর্ম। অ্যাটচি অনুমতি শর্তের ওপর নির্ভর করে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন।
প্রথমত: শক্তি/এনার্জি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগ। এক কালের লোডশেডিং এর বাংলাদেশ আজ উদ্ধৃত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে এখন প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এরপর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেকগুণ কমে আসবে, অতি সাম্প্রতিকালে আমাদের দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবিশ্বাস্য উন্নতি হয়েছে। এটা বিনিয়োগ ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করবে, আশা করা যায়।
দ্বিতীয়ত : বিশাল জনগোষ্ঠিকে দক্ষ মানব সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে উৎপাদনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। মানুষে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়তে হবে চিকিৎসাখাতকে এবং স্বাস্থ্যসেবা সুলভ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। মানব সম্পদকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে না পারলে উন্নয়নের গতি ধরে রাখা যাবে না।
তৃতীয়ত : সুষ্ঠু, স্থিতিশীল ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যথেষ্ট তদারকির আবশ্যক আছে।
চতুর্থত : আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জন্য স্বদেশী বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে নতুন বিনিয়োগ কাঠামো গড়ে তুলো কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্থ করতে হবে।
পঞ্চমত: অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুতের নিমিত্তে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার।
ষষ্ঠ : আমরা আজ ঘোষণা করে যাচ্ছি আমাদের মাথাপিছু আয় ২২০০ ডলার। কিন্তু এরপর ও বলতে হয় আমাদের দেশে ধনী দরিদ্র এ দু’ইয়ের মাঝে বিস্তর ব্যবধান। এ ব্যবধান দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
সপ্তম : উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে ভবিষ্যৎ ভিশন নির্ধারণ করতে হবে।
অষ্টম : দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনসহ প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সম্পর্কের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। কোন সামরিক জোট এড়িয়ে চলতে হবে। একটা দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, আর্থসামাজিক কাঠামো সবল, আয়ের বৈষম্য দূরকরণ, বিনিয়োগ গুণনীয়ক মানব উন্নয়নসূচক, উন্নয়নশীলতার সূচক, শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য সেবা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারসাম্য অর্জন, বেকারত্বের অবসান করে কর্মসংস্থঅন, আধুনিক প্রযুক্তিগত শিক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচক বৃদ্ধি উচ্চতর মজুরি দরিদ্রসীমার পরাকাষ্ঠা থেকে বের হওয়া শিল্পায়ন ব্যবস্থাতে সহায়তা করা খাদ্যে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বীয় উৎপাদনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করা। পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে খাদ্যে স্বনির্ভরতা যদি অর্জন করতে পারি মূল্য স্ফিতীকে স্থিরাবস্থায় রাখা সম্ভব পার্শ্ববর্তী ভারত গরু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সে সুবাদে এদেশে প্রচুর গুরুর খামার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের চাহিদা তুলনায় গরুর সরবরাহ পর্যাপ্ত এর সাথে দুগ্ধ সরবরাহ বেড়েছে তাছাড়া ছাগলের খামার মুরগির খামার ইত্যাদিতে আমরা স্বয়ংসম্পূণ। এখন সরকারের উচিত হবে, পিয়াজ, রসুন, আদা বিভিন্ন মসলাদ্রব্য উৎপাদনে উদ্যোগী হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ যা আমাদের উৎপাদন হবে তাতে উচ্চ আমদানি শুল্ক ধার্য্য করতে হবে। যাতে দেশের কৃষক ন্যায্য মূল্য পায়। চিন্তা করতে হবে আমাদের নিজেদের জন্য নিজস্ব ১৮ কোটি মানুষের বাজার তো রয়েছে বাংলাদেশে ভূমি অত্যন্ত উর্বর আমাদের মাটির বৈশিষ্ট হচ্ছে এমটিতে সবরকমের শষ্য এবং ফলমূল উৎপাদন করা সম্ভব। ২০২০ সালের অর্থনৈতিক সমিক্ষা অনুসারে কৃষিতে জিডিপির অবদান ১৩.৩৫%। দেশের মোট শ্রম শক্তি ৪০.৪ শতাংশ কৃষিখাতে নিয়োজিত। এক্ষেত্রে সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এক্ষেত্রে প্রধান ৩টি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য হয়। (১) দরিদ্র বিমোচন (২) ক্ষুধামুক্তি (৩) গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এজেন্য পল্লী ঋণনীতি প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের খাদ্য উৎপাদন যদি বৃদ্ধি পায় তবে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে একটা ভারসাম্য প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীল সহনীয় মূল্যস্তর প্রতিষ্ঠিত হবে। অর্থনীতির সূত্র তাই বলে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নেহাৎ খোঁড়া যুক্তিতে পরিণত হবে। অর্থনীতির একজন ছাত্র হিসেবে আমি এটাই মনে করি। কৃষিখাতকে উৎসাহিত করার জন্য কৃষিঋণে সুদের হার ৯% হতে নামিয়ে ৮% করা হয়। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। এতদ্ব্যাপারে পরবর্তীতে বিস্তারিত নিবন্ধ লেখার আশা রাখি।

লেখক: কলামিস্ট