করোনা চিকিৎসায় প্রতারণা জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

26

করোনা মহামারীতে সারা বিশ্বের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো যখন নিরাময় সাধনায় ব্যস্ত তখন আমাদের দেশের চিকিৎসক নামধারী কিছু ব্যক্তি ও চিকিৎসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত কিছু ধুর্ত, প্রতারকের অমানবিক কান্ডজ্ঞান দেখে বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বের সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও এ জঘন্য চিকিৎসা প্রতারণার গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করছে। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অর্জিত ভাবমুর্তিকে আঘাত করেছে। বিদেশে বাঙলাদেশের শ্রমবাজানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা লক্ষ করে আসছি, বৈশ্বিক মহামারী করেনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার রুগ্ন অবস্থা প্রকাশ পায়। চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রি ও মাস্ক কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমগুলেঅতে প্রকাম হতে থাকে।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশার পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসাসেবা খাত যে জনগণকে জিম্মি করে গলায় ছুরি ধরে টাকা কামানোর ক্ষেত্র, সে সংক্রান্ত নানা খবরাখবরও আসছে প্রতিনিয়ত। উদ্বেগের বিষয়, দেশে করোনা মহামারীর আবির্ভাবের পরপর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো মানুষের স্বাভাবিক চিকিৎসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তবে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল আগবাড়িয়ে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়ার কথা আমরা জানতে পারি। যার মধ্যে রিজেন্ট, জেকেজি অন্যতম। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল করোনাভাইরাস চিকিৎসায় যুক্ত হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় নানা চালচাতুরিতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল তৈরি করেছে প্রতারণার জাল। কোনো ধরনের পরীক্ষা না করে, সংগ্রহ করা করোনা টেস্টের নমুনা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে কাউকে পজিটিভ আবার কাউকে নেগেটিভের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া শুরু করে। আবার বড় একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও কলেজ সরকারি অনুমতি নেই এমন কিট বৗবহার করে অ্যান্টিবডি টেস্ট করাচ্ছে। এধরণের প্রতারণার বড় হোতাদের মধ্যে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ করিম ও জেকেজির চেয়ারম্যান এবং এমডি ডা. সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরীসহ সাহাবুদ্দিন মেডিক্যালের একজন সহকারী পরিচালক ও একজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাহেদ করিম ও আরিফকে গ্রেফতারের পর তাদের দীর্ঘদিনের প্রতারণা ও অসাধূ ব্যবসার যে চিত্র ফুটে উঠছে, তাতে ধারণা করা যায়, এদের পেছনে আরো বড় বড় শক্তির মদদ রয়েছে। আশার কথা, দেরিতে হলেও সরকার এসব প্রতারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে, এখন গ্রেফতাকৃত অপরাধী এবং তাদের মদদ দাতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। একইসাথে করোনা পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া কিছু বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন স্থানে শাখা খুলে করোনা পরীক্ষা নিয়ে নানা নয়ছয়, ভুতুড়ে বিল তৈরি ও আদায়, এমনকি সরকারের অনুমোদন ছাড়াই অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মতো গুরুতর অভিযোগও পাওয়া স্বাস্থ্যের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ সেবাদানের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।। অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য রোগীপ্রতি ২৫শ’ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে সেখানে, অনুমোদনহীন অ্যান্টিবডি পরীক্ষাকে প্রতারণা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া ডাক্তারদের বেতন বাকি রাখা, অসুস্থ হওয়ার পরও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে না দিয়ে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করাসহ আরও অনেক অভিযোগও পাওয়া গেছে। এত অপকর্ম-প্রতারণাকারী এসব হাসপাতালটিরও সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের মতো হালনাগাদ লাইসেন্স নেই। আমরা মনে করি, করোনা প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের তো বটেই, সব হাসপাতাল-ক্লিনিকেরই লাইসেন্সসহ অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রæত কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। এ কঠিন সময়ের শুরু থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে মানুষ চিকিৎসা পায়নি, কিছু হাসপাতালের কাছে তো মারাত্মক প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোর বেশিরভাগেই মানসম্মত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরকেন্দ্রিক নানা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যাদের অঙ্গুলি হেলনে তাদের স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে নেয়া হয় নানা সিদ্ধান্ত। শুধু তাই নয়, মেডিকেলে ভর্তি, ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ-বদলি-পদায়ন ইত্যাদিতেও হয় বড় ধরনের লেনদেন। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাদাতারাও অধিদফতরের যোগসাজশে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের স্বাস্থ্য ঠিক করা আগে জরুরি। সরকার এখন যে মনোযোগ দিয়েছে-তা অব্যাহত রেখে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এর চরম খেসারত দেশ ও জাতিকে দিতে হতে পারে।