করোনা : চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ১১.৫৬ শতাংশ সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা জাতীয় কারিগরি কমিটির ৬ পরামর্শ

11

নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা অনুপাতে শনাক্তের এই হার ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তবে এ সময় করোনা আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত রবিবার চট্টগ্রামে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রামে অ্যান্টিজেন টেস্টসহ ১০টি ল্যাবে ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন নগরীর বাসিন্দা। একজন কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৯২ হাজার ২২৬ জন। বাকিরা বিভিন্ন উপজেলার।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে মোট ১ হাজার ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩৪ জন নগরের বাসিন্দা। আর বিভিন্ন উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬২৮ জনের।
চট্টগ্রামের ন্যায় দেশের অন্যান্য জেলায় আবারও করোনা সংক্রমণ দ্রæত গতিতে বাড়ছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫৯৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ১৫ সপ্তাহের সর্বোচ্চ। দৈনিক শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে ১৬৩ জন বেশি; শনিবার ৪৩৩ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ ৪ মার্চ এর বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল এক দিনে, সেদিন ৬০৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
করোনা ভাইরাসের নতুন ধরণ ওমিক্রমণের দাপট কমলে ফেব্রæয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে ২৬ মার্চ তা একশর নিচে নেমে এসেছিল। সংক্রমণ কমার ধারায় গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছিল ৪ জনে। তবে গত ২২ মের পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। ১১ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা গত ১২ জুন আবার একশ ছাড়িয়ে যায়। এক সপ্তাহের মাথায় তা পৌঁছালো ছয়শর কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রবিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ওই ৫৯৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত এক দিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেড়ে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের দিন ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ছিল। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর আসেনি। ফলে মৃত্যুর মোট সংখ্যা আগের মতই ২৯ হাজার ১৩১ জন রয়েছে।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের নতুন একটি ঢেউয়ে প্রবেশ করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমণের হার দীর্ঘ সময় ধরে এক শতাংশের নিচে থাকার পর হঠাৎ করে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চীনের সাংহাই, উত্তর কোরিয়া এবং ভারতে যে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, সেই অমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সরকারি সংস্থা আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন জানান, বাংলাদেশেও সেই নতুন করে একটা সংক্রমণের ঢেউয়ে প্রবেশ করলো। তবে এটা এখনো গুচ্ছ সংক্রমণ পর্যায়ে আছে। তিনি আশংকা করছেন যে, আগামি দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রমণ আরো অনেক বাড়বে। আমরা জানি না যে এটা নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট কিনা, তবে মনে হচ্ছে যে এটা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটা উপ-ভ্যারিয়েন্ট বিএ৪ বিএ৫ দ্বারা হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা বা সংক্রমণ কমানোর অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রয়েছে। অতিরিক্ত ভয়ের কে নো কারণ নেই।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়তি থাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় কারিগরি কমিটি ১৪ জুন বৈঠক করে সরকারকে ছয়টি বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো। এর মধ্যে রয়েছে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং জনসমাগম বর্জন করা।
এই কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, অতি অল্প সময়ে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। নতুনভাবে সাবধানতা অবলম্বনের এখনই সময়। তিনটি জিনিস যদি আমরা অবলম্বন করি তাহলে এক রকম ফলাফল পাবো। আর তিনটি জিনিস অবলম্বন না করলে আরেক রকম ফলাফল পাবো। একটি হলো আবারো স্বাস্থ্যবিধি মানা, যারা করোনা টিকা নিয়েছে তাদের বুস্টার নেয়া, আর যারা বুস্টার নিয়েছে তাদের সতর্ক থাকা।
জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন জানান, এটাই তাদেরকে কিছুটা স্বস্তি রাখছে। কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসলো কিনা সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। সেটার সংক্রমণ কেমন হবে সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। এটা এখনই বলে দেয়া যাবে না তবে এখনো পর্যন্ত মৃত্যু দেখা যায়নি, এটা একটা স্বস্তির জায়গা।