করোনা-ক্রান্তিকাল, তবু অনন্ত জাগে…

19

দিলীপ কুমার বড়ুয়া

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের তীব্র সংক্রমণ ও মৃত্যুুর পরিসংখ্যানে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্ববাসী। ভ্যাকসিন প্রয়োগ, লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপের পরেও দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। মৃত্যুহার উর্ধ্বমুখী থাকায় সংকট আরো দ্রুতলয়ে বাড়ছে । মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ নিয়ে এরই মধ্যে চিকিৎসা এবং জরুরি সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো। কোভিডের নতুন ঢেউ, জীবাণুর নতুন চেহারা এবং ভ্যারিয়েন্টগুলোর উপস্থিতি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিজ্ঞানীদের কপালে। করোনায় আক্রান্তের ঊর্ধ্বমুখী সংখ্যার সাথে মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে তিন বার মিউটেট (ই.১.৬১৮) করা এই ভাইরাসের স্ট্রেন বেঙ্গল স্ট্রেন। করোনার এই নতুন স্ট্রেন নাকি সমস্ত রকম ইমিউনিটির বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম। জনপদ এখন বিবর্ণ, হাসপাতাল থমথমে, শ্মশানে লাশের দীর্ঘ শবযাত্রা, চিতার আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে, পরিত্রাণ খুঁজতে গবেষণাগারগুলো অবিরাম কাজ করে চলেছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নতুন স্ট্রেন। এক জনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে দ্রæত ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে ভাইরাসের এই রূপ অন্যান্য নতুন রূপের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। সেটাই আতঙ্কের কারণ। তারা মানবদেহে পরগাছা হিসাবে বেঁচে থেকে বংশবৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।
করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্টের দুশ্চিন্তা এখন সবাইকে তাড়া করছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে ভারতের ট্রিপল মিউট্যান্ট। যা ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রিপল মিউট্যান্ট স্ট্রেন এর উৎপত্তি ভারতে হওয়ায়, বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা আরও বেশি। এই পরিবর্তিত মিউট্যান্ট করোনা ভাইরাস ভারতে এক বিচিত্র রূপ নিয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্রসহ ১০ টি প্রদেশে অস্তিত্ব মিলেছে ডাবল মিউট্যান্ট- বি ওয়ান সিক্স ওয়ান সেভেনের। আবার এর মধ্যে ট্রিপল মিউট্যান্ট (ই.১.৬১৮) থাবা বসিয়েছে প্রবল ভাবে। দেশটির বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর কারণেই ভারতে সংক্রমণ- মৃত্যু বেড়ে ব্রাজিলকে ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল ঠিক করতে জিনোম সিকোয়েন্সিং জরুরি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও অধিক পরিমাণে জিনোম সিকোয়েন্সিং করার উপদেশ দিয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য বাংলাদেশে অধিক পরিমাণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করা উচিত। জিনোম সিকোয়েন্সিং নতুন মিউটেশন শনাক্ত করতে সক্ষম এবং ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতেও সহযোগিতা করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যুক্তরাজ্য ভ্যারিয়েন্ট ও মার্চ মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির কথা উঠে আসে আইসিডিডিআরবি গবেষণায়। এই দুই স্ট্রেইনই আগের ধরনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নয়া স্ট্রেনের দাপটেই বিশ্বজুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ। তিনবার মিউটেশন করে এই স্ট্রেন এখন অপ্রতিরোধ্য। এমন কি ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও এই স্ট্রেন থেকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী সুপার প্রডাররা। অর্থাৎ বহু মানুষ আছেন যাদের করোনা হয়েছে অথচ উপসর্গহীন। তারাই যখন ভিড়ে মিশছেন, বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন, সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাদের থেকেই। একদিকে যখন বিশ্ববাসী ভ্যাকসিন প্রায় পেয়ে যাওয়ার মুখে ঠিক তখনই এই সংক্রমণ বাড়ছে মারাত্মক হারে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, “বিশ্বজুড়ে উদ্বেগজনক ভাবে কোভিড -১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে।” তিনি বলেন, “এই মহামারি সময়ে আমরা সংক্রমণের সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছি। কিছু দেশ যারা আগে কোভিডের সংক্রমণ কিছুটা এড়াতে সক্ষম হয়েছিল, সেই জায়গাগুলিতেও এখন সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
ভাইরাসের রূপান্তরের অদৃশ্য ভাষা নিয়ে মুখর বিশ্বের সংবাদমাধ্যম। এ ভাইরাসের ভয়াবহতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এখন মানুষ শুধু জনবিচ্ছিন্নই, নিজের ঘরেই অন্তরীণ। থমকে গেছে সভ্যতার চতুর্থ ধাপে এগিয়ে যাওয়া বিশ্ব । সবাই ভীত-বিহ্বল, উদভ্রান্ত। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের নিষ্ঠুর বাস্তবতা মানুষকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। কিন্তু এখন প্রতিমুহূর্তে বদলে যাচ্ছে চিরচেনা পৃথিবীর অবয়ব। এ দুর্দমনীয় অণুজীবের করালগ্রাসের প্রভাবে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন বিপন্ন, বিষাদগ্রস্ত। আমরা যে মানবিক সংকটের সম্মুখীন এর প্রভাব অনেক গভীরে তা অনুধাবনযোগ্য । এজন্য সভ্যতার গতি শুধু স্থবির হয়েই যাবে না বরং পিছিয়ে দেবে কয়েক দশক।
পৃথিবী এখন প্রযুক্তির উদ্ভাবনশীলতায় পুরোপুরি বিজ্ঞানমুখী। আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে আমরা স্বার্থান্ধ হয়েছি এবং বিজ্ঞান আমাদের দর্পিত করেছে। কোভিড ভাইরাস যাদের শরীরে নিরাপদ ঘর-সংসার করার কথা সেই ভাইরাস এবার স্তন্যপায়ী পশুর শরীর ছেড়ে স্বচ্ছন্দ বসবাস গড়ে তুলেছে মানুষের শরীরে । মনুষ্য শরীরে তাদের থাকবার কথা না। এ মহামারি আমাদের কাছে নতুন নয়। মহামারি আমাদের ছাড়েনি যুগ যুগ ধরে । বসন্ত, টিবি, ফ্লু, ম্যালেরিয়া, প্লেগ, হাম, কলেরা, মার্গ, সার্স, ইবোলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত যত মানুষ অস্ত্রাঘাতে মারা গেছে, তার অনেক বেশি মারা গেছে অচেনা সংক্রামক রোগে। অচেনা, অজানা জীবাণু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে, পশুসমাজ থেকে মানবসমাজে ব্যাধির স্বচ্ছন্দ চলাচল আর বিন্যাস করেছে সহজে । পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যাধির প্রকোপ; শান্তি আর স্বস্তিতে বেঁচে থাকবার যাবতীয় উপাদানগুলো ক্রমশ বিলীয়মান। দর্পে আবিষ্ট এই মানবজাতি আর সভ্যতাকে প্রকৃতির রুদ্ররোষের মৃদু ঝটকায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরজীবী নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে নিমেষে।
বছর ঘুরে সেই অদমনীয় ভাইরাসকে আটকানোর উপায় এখনও আমাদের অধরা। সুতরাং যারা ভাবছেন, এ করোনাকে নিয়ে মাথাব্যথার কিছু নেই, তাঁদের জন্য অনেক দুঃস্বপ্ন অপেক্ষা করে আছে। করোনা ভাইরাসকে এখন সঙ্গে নিয়েই আমাদের জীবনযাপন করতে হবে। করোনা এই পৃথিবীতে কতদিন থাকবে তা অনুধাবন করা খুবই দুষ্কর। বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি এখন ভয়ঙ্কর সংকটের মুখে। মানুষের কাজ বন্ধ, আয়ও বন্ধ। জীবনমানের নিম্নগতিতে মানুষ অসহায়। বহু প্রতিষ্ঠান মুখথুবড়ে পড়ার সম্ভাবনা। কর্মহীন হয়েছে অগণন মানুষ। অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রার মান দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে।
এমন এক অবস্থায় সারা দেশজুড়ে লকডাউন-এর সরকারি সিদ্ধান্ত ও ঘোষণা, যা করোনার আগ্রাসন রোধ করার ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় বলে বিবেচিত। আপাতত সত্যি এর কোনও বিকল্প নেই। লকডাউন -এর মধ্যে ও সড়কে যান চলাচল রয়েছে । ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিংমলে এখন মানুষের সরব উপস্থিতি। সামাজিক দূরত্ব মানারও বালাই নেই। স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ হিসেবে ন্যূনতম মাস্কও ব্যবহার করতে চাচ্ছেন না অনেকে। দেশে করোনার সংক্রমণ না কমলেও জনজীবন বিপন্ন । প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা। প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতিকেও মানুষ আমলে নিচ্ছে না, স্বাভাবিক ভাবতে শুরু করেছে। এতে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে। মানুষ ঘরে থাকার পরিবর্তে রাস্তায় নেমে গেছে। যেন সবকিছু স্বাভাবিক। এ ধরনের জীবনযাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার করোনার সংক্রমণ রোধে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন । ধাপে ধাপে লকডাউন বাড়ানো হচ্ছে। ফলে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়েছে । বিপন্ন হয়ে পড়েছে খেটেখাওয়া দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষের জীবন-জীবিকা।
এ প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হউক, এ বিপদের মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন। সমাজের প্রতিটি মানুষের সম্বিৎ ফিরুক। শুভবুদ্ধির প্রয়োজন কেবল অতিমারির মোকাবিলায় নহে, রাজনীতি এবং সমাজের কালব্যাধির বিরুদ্ধেও। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্র্ণ হলো সব ধরনের জনসমাগম ও চলাচল নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করা যথেষ্ট নয় এবং চলমান ঢিলেঢালা লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কঠোর পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে আগামীতে দেশে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। অবশ্যম্ভাবী বিপজ্জনক পরিস্থিতি রুখতে জনগণের মাঝে সাবধানতা তৈরি করা জরুরি, তাই বাংলাদেশে বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টগুলো সম্পর্কে জনগণকে সম্যকভাবে অবগত করা প্রয়োজন। এর ফলে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা বাড়বে এবং সরকার সহজে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো কার্যকর করতে পারবে।
এত কিছুর পরও নেতিবাচক এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হতাশায় ডুবে যাওয়ার মতো কিছুই হয়নি। প্রাণঘাতী এই অণুজীব আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে মানুষ কতটা অসহায়। এই অণুজীব ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য স্বজনকে । হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা পায়নি কত লোক । বিভিন্ন অঙ্গনের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের ঋদ্ধ আলোর মানুষগুলোকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে করোনা অজানা গন্তব্যে। জাতির যে কোন সঙ্কটে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেয়া সমাজ, সংস্কৃতির আলো ছড়ানো মানুষগুলো যারা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন রচনা করেছেন করোনা তাঁদের বাঁচতে দেয়নি। একজনের মৃত্যু শোকের আবহ না যেতেই আরেক প্রিয়জনের করোনা সংক্রমণের দুঃসংবাদ আমাদের বিধ্বস্ত করছে নিরন্তর । উপর্যুপরি মৃত্যুর বিভীষিকা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। সারাজীবন যাদের ঘিরে ছিল অসংখ্য গুণগ্রাহী তারা নিঃশব্দে হাসপাতালে নিঃসঙ্গ যাত্রা করেছেন অসীম পানে । কারও সঙ্গে দেখা হয়নি। শেষ কথাটি বলা হয়নি।
করোনাভাইরাস ঘিরে আজ আমরা যে বাস্তবতার সম্মুখীন, তা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের কাছে এক ভয়ানক অদ্ভুত সময়। লকডাউন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং ইত্যাদি অচেনা শব্দবন্ধগুলোই এখন সব থেকে চর্চিত বিষয় আমাদের রোজকার অভিধানে। আমাদের চেনা পৃথিবী আজ বদলে গিয়েছে পুরোপুরি। এই পৃথিবী কলেরা মহামারি দেখেছে। প্লেগ দেখেছে। ¯প্যানিশ ফ্লু দেখেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মৃত্যু মিছিল থেমে গিয়ে নতুন শুরু দেখেছে এই পৃথিবী। একই রকম ভাবে এই করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত, দিশাহারা সময় অতিক্রম করে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরব আবার আমরা। অর্থনৈতিক বিপর্যয় হয়তো কয়েক বছর বাদে কাটিয়ে উঠবে গোটা পৃথিবী। আমরা যারা এই দুঃসময় প্রত্যক্ষ করলাম, তাদের জীবনে, যাপনে, মননে, চিন্তনে কি এই অভিজ্ঞতা কোনও প্রভাব রেখে যাবে? করোনা নেহাতই একটি ঘটনা, যা অতিক্রম করে আমরা ফিরে যাব আমাদের অতীত জীবনে। অথবা দ্বিতীয়ত, এই দুঃসময় থেকে আমরা খুঁজে পেতে পারি এক নতুন বোধ, এক নতুন উপলব্ধি। আর তার আলোকে আমরা কিছুটা বদলে নিতে পারি আমাদের ভবিষ্যৎযাপন। এই বর্তমান পরিস্থিতি আসলে সমগ্র মানব সমাজকে আয়নার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেই আয়নায় তাকিয়ে নিজেদের সংশোধন করার এটাই আদর্শ সময়।
আমাদের বিশ্বাস, এই ভয়াবহ দুঃসময় কাটিয়ে ফের দ্রুত চেনা ছন্দে ফিরবে পৃথিবী। আমরা শুধুই হতাশা এবং বিষণ্ন তাকে আঁকড়ে ফের সেই আগের আমরা হয়েই পথে নামবনা। এই ভয়াবহ দুঃসময়কে আমরা নতুন ভাবে বাঁচতে শেখার সময় হিসেবে জীবনপঞ্জীতে লিপিবদ্ধ করবো। এ সঙ্কটকাল আমাদের সামনে আত্মসমীক্ষার আয়না ধরেছে । এই সময়কে ঘিরে আমাদের বোধ এবং উপলব্ধিকে আমরা যদি আমাদের পরবর্তী জীবনে কাজে লাগাতে পারি, তা হলে মানুষ হিসাবেই উত্তরণ ঘটবে আমাদের। তাই এই সময় হেরে যাওয়ার সময় নয়, বরং আমাদের আগামী বহু লড়াই জিতে যাওয়ার প্রয়োজনীয় উপায় খুঁজে নেয়ার সময়। সময় আজ আমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে হাজির হয়েছে, আর আমরা যদি তার থেকে শিখে নিতে পারি আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার কৌশল, তা হলে এই সময় পেরিয়ে গেলে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াব জয়ী মানুষ হিসাবে। এ প্রত্যাশায় বুক বেঁধে সম্মুখ পানে চলছি রবীন্দ্রনাথকে সাথে নিয়ে -আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।/তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…। সেই শান্তি, সেই আনন্দ যেন আবার নতুন করে জেগে উঠে এ ধরিত্রীতে। প্রত্যাশা করছি অতি দ্রুত এই আঁধার কেটে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে আর অটুট থাকবে মানুষের প্রতি মানুষের বন্ধন, মানবিকতার আলোয় উদ্ভাসিত হবে চারপাশ।

লেখক : কলামিস্ট, রেজিস্ট্রার, ইউএসটিসি