করোনা কালে থামেনি শিশু নির্যাতন কঠোর আইনি পদক্ষেপ জরুরি

52

বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেও শিশুদের প্রতিসহিংসতা বন্ধ হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষেত্র বিশেষে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন ঘরবন্দী জীবন নারী ও শিশুর জন্য যেন আরো দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে। এ নির্যাতন কোন কোন ক্ষেত্রে পারিবারিকভাবে, কোন কোন ক্ষেত্রে সামাজিক ভাবে বা কমিউনিটিতে আবার কেউ বা সহিংসতার শিকার হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। শিশু শ্রম আইন গতভাবে নিষিদ্ধ হলেও কার্যত বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ সম্প্রতি সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুরে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মুন্নাপাশি (১২) ও জগৎনুনিয়া (১৩) নামের দুই শিশুকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে গাছের সঙ্গে বেঁধে কয়েক জন মিলে মার ধর করে। আহত অবস্থায় মুন্না ও জগৎকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার কথা। শুধু কমলগঞ্জেনয় এভাবে সারাদেশে প্রতিনিয়ত কোমল মতি শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোথাও কোথাও মানুষরূপী পশুদের পৈশাচিকতায় একের পর এক শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে সমাজ-রাষ্ট্রের করণীয় ঠিককরতে হবে। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। অথচ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং অপরাধীদের সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। এর আগে আমরা দেখেছি চুরির অভিযোগে মো. সামিউল আলম ওরফে রাজন নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করে মানুষরূপী কিছু জানোয়ার। এ ঘটনার পর পর রাকিব নামে আরেক শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মোটর সাইকেলে হাওয়া দেয়ার যন্ত্রের নল রাকিবের মলদ্বার দিয়ে প্রবেশ করিয়ে বাতাস ছেড়ে দেয় নির্যাত করা। মলদ্বার দিয়ে প্রচÐ বেগে হাওয়া প্রবেশ করার এক পর্যায়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে রাকিব মারা যায়। কী বীভৎসতা! মানুষকী ভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে ? এ ঘটনার রেশ না কাটতেই বরগুনায় রবিউল নামের আরেক শিশু নির্মমতার শিকার হয়। মাছ চুরির অভিযোগে ১১ বছর বয়সী এ শিশুটিকে তার এক প্রতিবেশী পিটিয়ে হত্যা করে পুকুরে লাশ ফেলে দেয়। এমন পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতার মধ্যেই আমাদের বসবাস! মানবিক মূল্য বোধের এ কেমন অবক্ষয়! সভ্য যুগে এ কেমন অসভ্যতা! বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের মত মহামারি যখন এমন অধঃপতিত ও অবক্ষয় যুক্ত সমাজ দেখতে চাইনা। এমন ঘটনাগুলো প্রমাণ করে দেশে শিশুদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এরজন্য অনেক কারণ দায়ী। তার মধ্যে সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়, বিরোধ-শত্রুতা, ব্যক্তি স্বার্থপরতা ও লোভ-লালসা বৃদ্ধি ইত্যাদি অন্যতম। সমাজ ও পরিবারে শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরে আনতে হবে। মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ ও মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে হবে। শিশু নির্যাতন ও শিশুহত্যা রোধকরতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাও সচেতনতা ছাড়া এটা করা কঠিন। পাশাপাশি শিশু নির্যাতন ও হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। ইতিবাচক বিষয় হলো, শিশুর অধিকার বাস্তবায়নে দেশে আইন গত উন্নয়ন অনেক হয়েছে। শিশুশ্রম বন্ধে প্রণয়ন করা হয়েছে আইন। শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরসনে করা হয়েছে শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন। রয়েছে এ বিষয়ে নীতি মালাও। শিশুদের রক্ষাকবচ এ আইনটির যথাযথ প্রয়োগ জরুরি।