করোনায়ও থামেনি বন্দরের কার্যক্রম, বেড়েছে প্রবৃদ্ধি

24

করোনা মহামারিতে পৃথিবীর অনেক কিছু থেমে গেলেও একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। করোনার ঢেউ মোকাবেলা করে সপ্তাহের ২৪ ঘন্টা বন্দরের অপারেশন কার্যক্রম সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরে গত বছরের চেয়ে এ বছর কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিং এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরে কোনো জাহাজ জট কিংবা কন্টেইনার জট নেই।
তাছাড়া করোনার এই পরিস্থিতিতেও দ্রুততম সময়ে আমদানী পণ্য খালাসের মাধ্যমে আমদানীকারকরা বন্দরের কার্যক্রম আরো নির্বিঘ্ন রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফল বহির্বিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে।
আজ রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব বর্ষের এই গৌরবময় সময়ে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছরও চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনাড়ম্বরভাবে পালন করা হচ্ছে। একইভাবে গতবছরও করোনার কারণে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দিবসটি পালিত হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেশের আমদানী ও রপ্তানীর ৯২ শতাংশেরও অধিক পণ্য এবং ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করে থাকে চট্টগ্রাম। বিশ্বব্যাপি করোনা পরিস্থিতিতেও ২০২০ সালে এই বন্দর ২৮ লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডেল করেছে। আর একই সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৬৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬৯ টিইইউস এবং কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪০২ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০২১ সালের মার্চ মাসে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৭৬টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৬ টিইইউস এবং কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ কোটি ১০ লক্ষ ৪২ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন। কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডিলিং এ প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭.৭% এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং এ ২.৭%।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক বন্দরেরই কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হলেও চট্টগ্রাম বন্দর সপ্তাহে ২৪ ঘন্টা চালু ছিল। আর করোনার বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা এবং বন্দরের অপারেশন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়কালে প্রায় ডেলিভারি শূন্য অবস্থা হতে অত্যন্ত অল্প সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বিগত বছরে বন্দরের যত সফলতার মধ্যে রয়েছে- বন্দরের বহির্নোঙ্গরে শূন্য পাইরেসী (দস্যুতা), লয়েড লিস্টে ৬ ধাপ এগিয়ে ৬৪ হতে ৫৮ তে উন্নীত হওয়া, পরীক্ষমূলকভাবে ভারতের কলকাতা বন্দর হতে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য ট্রানজিট (পণ্য পরিবহন) চালু। এ সকল সফলতার কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মূল্যায়নে পরিকল্পনা কমিশন চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্ব ও ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরকে অনূকরণীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্তব্য করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান বলেন, করোনা সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছেন। বন্দর ব্যবহারকারী সকল স্টেকহোল্ডারদের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের গৃহিত নানা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বর্তমানে বন্দর অভ্যন্তরে কোনো জাহাজ জট বা কন্টেইনার জট নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চট্টগ্রাম বন্দরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তার জন্য বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডেলিং অপারেটর, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বিকডা, শিপিং এজেন্টগণ, শ্রমিকবৃন্দ, বন্দর ব্যবহারকারী ও স্টেকহোল্ডাদের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম বন্দর ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় ৯৮তম অবস্থান নিয়ে নিজের স্বীকৃতি অর্জন করে। মাত্র ১১ বছরে ৪০ ধাপ এগিয়ে ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের এই অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন। তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। ইতোমধ্যে পতেঙ্গা লালদিয়াচর এলাকায় বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ৫২ একর ভূমি উদ্বার করা হয়েছে। এ এলাকায় বন্দর সুবিধাদি বৃদ্ধির বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে।