রিজার্ভের টাকা মানুষের জন্য খরচ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

15

পূর্বদেশ অনলাইন
রিজার্ভের টাকা নিয়ে বসে থাকলে হবে না উল্লেখ করে তা দেশের মানুষের জন্য খরচ করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৪ নভেম্বর) ৫৯টি জেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে পর দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ শপথ অনুষ্ঠান হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি যে বর্তমানে একটা কথা আসছে রিজার্ভ, রিজার্ভ, রিজার্ভ, রিজার্ভ নাই। রিজার্ভের টাকা নাকি সব চুরি হয়ে গেছে। আমরা ৯৬ সালে যখন ক্ষমতা আসি তার আগে বিএনপি ছিল। রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বা ৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ছিল। এই ৫ বিলিয়ন রিজার্ভ থেকে আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি উঠাতে পারি। এই কারণে রিজার্ভের টাকা তো সব সময় খরচ হতে থাকে, এটা রোলিং করে। কারণ করোনার সময় যোগাযোগ বন্ধ, আমদানি, রপ্তানি বন্ধ, যেতেও পারে না আসতেও পারে না। এই অবস্থা ছিল কোনো আমদানি হয়নি, এই কারণেই কিন্তু রিজার্ভ জমা হয়। যখন করোনা শেষ হয়ে যায় তখন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, ইন্ডাস্ট্রিজ তৈরির ক্ষেত্রে এমনকি চাষবাসের জন্য যে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিনে নিয়ে আসা, সেগুলোর জন্য আমাদের টাকা খরচ করতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা আমরা যে ভ্যাকসিন কিনে এনেছি, দেখেছেন যখন ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে তখনই আমি ১২শ কোটি টাকা জমা দিয়ে দিয়েছি যেটাই সফল হয় আমি আগে নেবো। আমার দেশের মানুষকে বাঁচাব। শুধু ভ্যাকসিন দিলে তো হয় না ভ্যাকসিন দিতে সিরিঞ্জ লাগে, অনেক কিছুই লাগে। প্লেন পাঠিয়ে বিদেশ থেকে আনিয়েছি। তাতে টাকা খরচ হয়নি, টাকা তো খরচ করতে হয়েছে। এভাবে কিন্তু আমরা এ টাকা ব্যবহার করেছি মানুষের কল্যাণে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা যেতে পারেনি শুরু হলো ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, তারপরে স্যাংশন। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম সারাবিশ্বে বেড়ে গেছে। চাল, গম, জ্বালানি, ভোজ্যতেল সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে শুধু জিনিসের দাম বেড়েছে তা নয়, তার সাথে পরিবহন খরচ, ২শ ডলারে আমরা যে গম কিনতাম সেটা এখন ৫শ ডলারে কিনতে হয়। কিন্তু আমরা তো আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট দিতে পারি না। যেখানে যত দামই লাগুক আমরা কিন্তু কিনে নিয়ে আসছি, মানুষকে দিচ্ছি। ৫০ লাখ মানুষের কাছে মাত্র ১৫ টাকায় আমরা চাল সরবরাহ করছি আর যারা একেবারেই অপারগ তাদেরকে তো বিনাপয়সায় খাবার দিচ্ছি। বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। ৮ বিলিয়ন ডলার আমরা আলাদাভাবে বিনিয়োগ করেছি। বিমান সব ঝরঝরে অবস্থা ছিল, সব থেকে আধুনিক বিমান আমরা কিনেছি। এখানে কিন্তু আমরা রিজার্ভের টাকা দিয়েই করেছি অন্যের টাকা ধার নিইনি। কারণ সেখানে ধার নিলে সুদসহ শোধ দিতে হতো । বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই নিয়ে কিনেছি. এখন বিমান আমাদের টাকা শোধ দিচ্ছে দুই পার্সেন্ট ইন্টারেস্টসহ আমরা টাকা ফেরত পাচ্ছি । আমাদের রপ্তানি সেখানেও আমরা প্রণোদনা দিচ্ছি, সেখানে আমরা টাকা দিচ্ছি । রপ্তানি থেকে আমাদের লোকই লাভবান হচ্ছে। এভাবে আমরা ৮ বিলিয়ন খরচ করেছি এবং এখন যেমন অতি বেশি মূল্য দিয়ে খাদ্য কিনতে হচ্ছে, তেল, গ্যাস কিনতে হচ্ছে। ভোজ্য তেল জ্বালানি তেল গম, ভুট্টা সবই আনতে হচ্ছে। টাকা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। এখানে আমার দেশের মানুষের জন্য খরচ করতে হবে। আজকে যারা এটা নিয়ে কথা বলেন যে রিজার্ভ গেল কোথায়, তাদের জন্য একটু বলতে চাই, বিএনপির নেতা তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে কেন? কারণ অর্থপাচার মামলায় সাজা হয়েছে। আর এই অর্থ পাচার মামলা কিন্তু আমাদের আবিষ্কার না, এটা করেছে আমেরিকা এবং আমেরিকার লোকজন এফবিআই বাংলাদেশে এসে তার নামে সাক্ষী দিয়ে গেছে এবং সেই মানিলন্ডারিং কেসে তার সাত বছরের সাজা এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আসামি একটি দলের নেতা হয় কী করে। এই গ্রেনেড হামলা নিয়েও তারা অপপ্রচার চালিয়েছে। এদের চরিত্র অপপ্রচার চালানো। এখানে মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয়। খালেদা জিয়া, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে ট্রাস্ট করে সেখানে ফান্ড পেয়েছে, বিদেশ থেকে টাকা এসেছে। একটা টাকা কোনো এতিম পায়নি, কেউ পায়নি। সব টাকা তার ব্যাংকে জমা। সেই কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা আর সেই মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। তারপরেই তো তার বোন আসছে আমার কাছে ভাই আসছে বোনের স্বামী আসছে তাদের অনুরোধে তার সাজাটা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে আমি তার বাসায় থাকতে দিয়েছি। কিন্তু এখানে আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমার মা-বাবা ভাই সব হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত এটাই স্পষ্ট। গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আমাদের নেতাকর্মী হত্যায় তারেক, খালেদা জিয়া সব জড়িত। আমরা কিন্তু মানুষের ওপর প্রতিশোধ নিতে যাইনি। ২০০১ সালের পর আমাদের নেতাকর্মীরা যেভাবে নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওভাবে কিন্তু আমরা কারো ওপর নির্যাতন করিনি। আমি তাকে যেখানে এভাবে সুযোগ দিয়েছি অথচ তিনি কীভাবে আচরণ করেছেন আমার সঙ্গে। তার ছেলে কোকো যে টাকা পাচার করেছিল, কোকোর টাকা কিন্তু আমরা কিছু অংশ ফেরত আনতে পেরেছি। তারেক টাকা পাচার করেছে, কোকো মারা গেছে, তারেকের সাজা হয়েছে, তারাই আবার অর্থ পাচারের কথা বলে কোনো মুখে। মারা যাওয়ার পর আমি সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলাম। দুঃখের কথা বলে যাই, সবকিছু ভুলে সন্তান হারা মা ঠিক আছে আমি যাই, একটা সান্ত্বনা দিয়ে আসি। আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না দরজা বন্ধ। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাকে কত অপমান করেছেন আপনারা ভেবে দেখেন। তারপরও আমি তার প্রতি দয়া দেখিয়েছি, তার বাড়িতে তাকে থাকতে দিয়েছি কারণ আমরা তো তাদের মতো অত ছোট মন নিয়ে আসেনি। এরা নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ থাকতে গত দুই বছর প্রায় সব রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কর্মসূচিতে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি সরাসরি কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেছেন তিনি। বিশেষ করে, গত কয়েকদিনে তিনি বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া তিনি ঢাকার বাইরেও কর্মসূচিতে সরাসরি যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ বাক্য পাঠ করান। এ সময় তিনি প্রায় এক ঘণ্টার মতো বক্তব্য দেন। চেয়ারম্যানদের শপথ অনুষ্ঠানে দীর্ঘ বক্তব্য দেওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেক দীর্ঘ বক্তৃতা দিলাম। কারণ অনেকদিন পরে পেলাম তো। বন্দিখানায়ই তো ছিলাম করোনার সময়ে। প্রায় দুই-আড়াই বছর ওই ভিডিও কনফারেন্সে বাকসো বন্দি। ২০০৭ সালে ছিলাম আসল জেলে। সেই জেল ছিল ছোট। আর করোনার সময় ছিলাম বড় জেলে। কিন্তু সুবিধা এইটুকু– অন্তত ‍ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই সুবাদে ভিডিও কনফারেন্স করতে পেরেছি। আজকে একটু মুক্তভাবে আসতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে।’ এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।