করোনার ভয়াবহ বিস্তার ঘরেও ঝুঁকিতে শিশুরা

29

রাহুল দাশ নয়ন

পাঁচ মাস বয়সী শিশু আনাসের শরীরে তীব্র জ্বর। চারদিনেও জ্বর না কমায় দিনমজুর বাবা তড়িঘড়ি করে শিশুটিকে নিয়ে যান হাসপাতালে। চিকিৎসক শিশুটির উপসর্গ দেখেই করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন। বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষা করলে ওই শিশুর রিপোর্ট পজেটিভ আসে। মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা যেখানে সুস্থ আছেন সেখানে একমাত্র শিশুটি করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সবাই হতবাক। শিশুটি এখন বাঁশখালী হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছে।-জানালেন শিশু আনাসের পিতা জলদী মিয়া বাজারের বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন।
শিশু আনাসের মতো এভাবেই প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য শিশু। গত তিনদিনে (২৫-২৮ জুলাই পর্যন্ত) চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ০-১০ বছর বয়সী ৭২ জন শিশু। একই সময়ে ১১-২০ বছর বয়সী কিশোর রোগীর সংখ্যা ২২৬ জন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত একমাস বয়সী আরেক শিশুকে ভর্তি করানো হয়েছে। ঘরে থাকার পরেও করোনা আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক বলেই মন্তব্য করেছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ মেজবাউল হক পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঘরে থাকা বয়স্করা সতর্ক থাকলে শিশুরা নিরাপদ থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতো বলেছে মা আক্রান্ত হলেও বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে। এক্ষেত্রে হাত ধুয়ে বাচ্চাদের ধরতে হবে। তবে করোনার কারণে অন্যান্য বয়সী রোগীরা যত সমস্যায় পড়ে শিশুরা তেমন সমস্যায় পড়ে না। শিশুদের মধ্যে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাটা বেশি। এরপরেও সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোটা জরুরি।’
সূত্র জানায়, চমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিয়মিত শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। প্রতিদিনই ২০-৩০ জন শিশু রোগী ভর্তি হয় এই ওয়ার্ডে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সেপটিসেমিয়া, লিউকেমিয়া, ব্রনকিউলাইটিস, অ্যাজমাসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও অনেকের মধ্যে করোনার উপসর্গ আছে। যে কারণে পরীক্ষার পর করোনা নিশ্চিত হয়ে অনেক শিশুকে করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্টার ডা. চন্দ্রিমা বড়–য়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘হাসপাতালে কিডনি রোগে ভর্তি থাকলেও দেখা যাচ্ছে অনেকের করোনার উপসর্গ আছে। পরীক্ষা করলেই পজেটিভ আসছে। এমন অনেক শিশুকে আমরা প্রতিদিনই সাধারণ ওয়ার্ড থেকে করোনা ইউনিটে পাঠাচ্ছি। প্রতিদিনই করোনা রোগের উপসর্গ পরিবর্তন হচ্ছে। অথচ গত বছর আমরা এতবেশি শিশু রোগী পাইনি। মা-বাবা বাইরে যাওয়ার কারণেই শিশুরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ০-১০ বছর বয়সী শিশু আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ১২৫ জন। এরমধ্যে ছেলে শিশু এক হাজার ২১৫ জন ও মেয়ে শিশু ৯১০ জন। আক্রান্তের শতকরা হার ২.৭০ শতাংশ। তবে আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে চারজনের। গত ২৫ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত তিনদিনে শিশু আক্রান্ত হয়েছে ৭২ জন। এরমধ্যে ২৬ জুলাই ২০ জন, ২৭ জুলাই ৩২ জন ও ২৮ জুলাই ২০ জন শিশু করোনা আক্রান্ত হয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের ৪ এপ্রিল থেকে ১১-২০ বছর বয়সী কিশোর আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার একজন। আক্রান্তের হার ৭.৬৫ শতাংশ। মারা গেছেন ৯ জন কিশোর।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী পূর্বদেশকে বলেন, ‘করোনায় শিশু আক্রান্তের হার বাড়ছে। এরমধ্যে একেবারে মাস বয়সী শিশুও আছে। যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। পরিবারের লোকজন ঘর থেকে বের হওয়ার কারণেই শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। ঘর ছেড়ে বের হলে সন্তানরা বিপদে পড়ছে এ বিষয়টি অন্তত মাথায় রেখে মা-বাবার উচিত ঘর ছেড়ে বের না হওয়া।’