করোনার বন্ধেই বিয়ে হয়ে গেল ১০ ছাত্রীর

7

আসহাব আরমান

নগরীর ষোলশহর হোসেন আহমদ চৌধুরী সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদা খানম মিলি। সবকিছু ঠিক থাকলে মিলির ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তবে সেটি আর হয়ে উঠেনি। করোনার বন্ধে বিয়ে যায় মিলির। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পরিবর্তে এখন সংসার নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছে মিলি। শুধু মিলি নয়; করোনার এই বন্ধে প্রতিষ্ঠানটির ১০ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৮ জন এবং এসএসসি পরীক্ষার্থী ২ জন। ফলে আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের অংশ নেয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭২ জন। এদের মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ১৪৯ জন শিক্ষার্থীর। বাকি ২৩ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি। এই শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন ছাত্রী এবং ১২ জন ছাত্র। ১২ ছাত্রীর মানবিক বিভাগের ৮ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একজনের করোনার বন্ধে বিয়ে হয়ে যায়। অন্যদিকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ২ জনের বিয়ে হয়ে যায়।
হোসেন আহমদ চৌধুরী সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এস এম এহসান উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি বস্তি এলাকায় অবস্থিত। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নি¤œবিত্ত পরিবারের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যায়। অনেক শিক্ষার্থী গার্মেন্টসে চাকরি নিয়ে নেয়। কিছু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। আমরা এখনও ১০ জন বিয়ে হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে ফরম পূরণের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পরিবারে যোগাযোগ করেছি। এরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে রেজিস্ট্রেশনকৃত শিক্ষার্থী ছিল ১ লক্ষ ৯ হাজার ৬৬ জন। এই পর্যন্ত অনিয়মিতসহ ফরম পূরণ করেছে ১ লক্ষ ৫০০ জন। এখনও ফরম করেনি প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। এ বছর চট্টগ্রামে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে ২৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে ১ লক্ষ ৬১ হাজার শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ পূর্বদেশকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। এছাড়া অনেক গরিব পরিবারের শিক্ষার্থী লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে পারে না। অনেক ছাত্রীর বিয়ে গেছে যায়। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করে না। তবে এ বছর হয়তো করোনা কারণে ফরম পূরণ না করা বা ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, এই পর্যন্ত চট্টগ্রামে বোর্ডের অধীনে ১ লক্ষ ৫০০ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। এর মধ্যে দুই হাজারের মতো অনিয়মিত শিক্ষার্থী থাকতে পারে। এই সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়তে পারে।