করোনার পেছনে ডেঙ্গুর বাসা

12

ফারুক আবদুল্লাহ

সারাবিশ্বে যখন মহামারী করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ঠিক সেই সময় ডেঙ্গু ও সাধারণ জ্বরসহ অন্যান্য রোগেরও প্রাদুর্ভাব ছিল। তখন করোনার ভয়ে এসব রোগ চাপা পড়ে যায়। তবে চলতি বছরের জুন থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। ফলে করোনার সাথে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গুও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়ায়।
চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) মোট ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৭০ জন। তবে এই পর্যন্ত উক্ত হাসপাতালে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। একইভাবে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ডেঙ্গু রোগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুইসহ সর্বমোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৬ জন, নারী ১৯ এবং ১২ জন শিশু।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে ডেঙ্গু জ্বর আছে। কখনো কমে আবার কখনো বাড়ে। কিন্তু এ বছর অনেক বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে ডেঙ্গু আতঙ্ক হওয়ার মত নয়, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ডেঙ্গুতে সুস্থতার হার বেশি এবং মৃত্যুর হার বেশ কম।
গত ২৩ মে চমেক হাসপাতালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন ২ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ জন। এই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৭০ জন রোগী। তবে ডেঙ্গুতে কোন রোগীর মৃত্যু হয়নি।
একইভাবে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গতকাল বৃহস্পতিবার ২ জন জনসহ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৬, নারী ১৯ এবং শিশু রোগী রয়েছেন ১২ জন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৯০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ১৯৭ ডেঙ্গু রোগী। নতুন করে যে ১৯০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকাতেই ১৪৯ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন।
জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ হাজার ৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৯৫৭ জন। আর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯৮৩ রোগী।
আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি হওয়া ১৮ হাজার ৭ জনের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন, আগস্টে ৭ হাজার ৬৯৮ জন এবং এ মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৫১ জন। এছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে জুলাইয়ে ১২ জন, আগস্টে ৩৪ জন এবং ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-প্রচন্ড জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, বমি, শরীরে লাল র‌্যাশ ওঠা, মাংসপেশিতে ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে এ চিকিৎসকের পরামর্শ হচ্ছে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে, ঘর ও আশপাশের যেকোনো পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে হবে; ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করতে হবে, রাতে বা দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে, মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করতে হবে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, পুরোদেশেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। করোনার কারণে ডেঙ্গু রোগীর খবর চাপা পড়ে গেছে। জুন থেকে করোনার সাথে সাথে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। তবে আতঙ্কের কোন কারণ নেই। করোনার মত ডেঙ্গু রোগেও শরীরে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। সেই সাথে আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন রাখতে হবে।