করোনার নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে

8

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এখন বাংলাদেশে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার অধিকাংশ জেলায় চলছে লকডাউন। রেড এলার্টে রয়েছে আরো নতুন নতুন জেলা। গত মঙ্গলবারের সংবাদপত্রে চট্টগ্রামে নতুনভাবে সংক্রমণের খবর ছাপানো হয়েছে। সোমবার মন্ত্রী সভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে সংক্রমিত এলাকা লকডাউন করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ধরনের ভযাবহ পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ আরো দীর্ঘ হবে-এটা বলাইবাহুল্য। শিক্ষামন্ত্রী দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো কথা ঘোষণা দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ১ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন। তবে অভিজ্ঞমহলের ধারণা করোনার যে উর্ধ্বগামী তাতে এ ছুটি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে যেভাবেই হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১ জুলাই হোক কিংবা তারও পর খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দীর্ঘ বন্ধের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়ার পরিবেশ কি আদৌ অব্যাহত আছে? অবকাঠামোগুলোর হালহকিকত কী অবস্থায় আছে এনিয়ে কোন তদারকি কী সত্যিকার অর্থে হচ্ছে ?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা হলে পাঠদানের জন্য কতটা প্রস্তুত এবং সেখানে কী বাস্তবতা বিরাজ করছে, তা নিয়ে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক ধারাবাহিক স্বচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। গত সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর হালহকিকত ছাপানো হয়। পত্রিকাটির পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৫ মাস ধরে বন্ধ থাকার কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, চট্টগ্রামের নগর থেকে মফস্বল এলাকার কিন্ডারগার্টেনসহ অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেগুলোয় শিক্ষাদানের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটি চলে গেছে ঠিকাদারের দখলে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে গুদামঘর হিসাবে, কোথাও বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ, কোথাওবা বসছে বখাটেদের আড্ডাখানা।
এক কথায়, জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেশের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও একইরকম। কোথাও প্রতিষ্ঠানের ভবনের ভেতরেই চলছে পশুপালন। কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে পণ্যের গুদাম, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বসবাস করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। এমনও দেখা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে চলছে সবজির চাষ। ধুলার আস্তর পড়েছে আসবাবপত্রে, ব্যবহার না করায় নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বৈদ্যুতিক বাতি ও ফ্যান। দীর্ঘদিন পরিষ্কার কার্যক্রম না থাকায় শ্রেণিকক্ষের ভেতর সৃষ্টি হয়েছে নোংরা, পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ। অবশ্য ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানেই যে বেহাল দশা বিরাজ করছে, তা নয়। মূলত যেসব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে যাননি এবং তাদের দায়িত্ব পালন করেননি, অথবা জেলা শিক্ষা অফিস বা থানা শিক্ষা অফিস থেকে তদারকি সঠিকভাবে না হওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানেই উপরোল্লিখিত অবস্থা দেখা গেছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সরকারি, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তো নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়ে আসছেন। শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও পরিবেশের প্রতি নজর রাখা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যদি প্রতিষ্ঠানসমুহ অবকাঠামোগত পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়ে অবশ্যই এর দায়দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের উপর পড়ে। এছাড়া, জেলা, থানা বা উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ ক্ষেত্রে কি কোন দায় নেই? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস নিয়মিত খোলা রাখা হলে স্থাপনা ও আসবাবপত্রসহ সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত নিঃসন্দেহে।
আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোসহ পুরো পরিবেশের যে বেহাল দশার কথা বলা হলো, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকসমাজ ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা তার দায় এড়াতে পারেন না। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন উচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠদানের উপযোগী করে পুনঃপ্রস্তুত করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে খুলবে, সেটা প্রশ্ন নয়; প্রশ্ন হচ্ছে, সেগুলো খোলার আগেই শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থী যাতে কোনরকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গিয়ে ঝুঁকিতে না পড়ে-এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।