করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে প্রয়োজন জনগণের দায়িত্বশীল আচরণ

10

রতন কুমার তুরী

করোনা ভাইরাস আবারও ধীরে ধীরে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠছে। এখনই যদি আমরা এ বিষয়ে অধিক সতর্ক না হই তাহলে করোনা পরিস্থিতি যেকোনো সময় ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে।
করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিতে না দিতেই শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, যে ঢেউয়ের আঘাত বাংলাদেশেও এসে পৌঁছেছে। আর তাই দিনে দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু। প্রথম ঢেউয়ের শেষের দিকে বাংলাদেশে করোনা প্রায় কমে আসলেও টিকা আবিষ্কার এবং তা প্রয়োগের পর দেশের মানুষের অতি আত্মবিশ্বাস, যেখানে সেখানে স্বদলবলে নির্ভিঘেœ ঘোরাফেরা, করোনার প্রথম ঢেউয়ের মত মাস্ক এবং স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে না চলা ইত্যাদি কারণে মূলতঃ এদেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ইতিমধ্যে অবশ্য বিশেষজ্ঞগণ মতামত দিয়েছেন এভাবে চলতে থাকলে প্রথম ঢেউয়ের চাইতে করোনা, ভাইরাসটি দ্বিতীয় ঢেউয়ে আরো ভয়ংকর রূপধারণ করতে পারেন, ফলে করোনার দ্বিয়ীয় ঢেউ সামাল দেয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনসহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। ভাইরাসটির দ্বিয়ীয় ঢেউ সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে প্রথম দফায় একসপ্তাহের জন্য লকডাউন দিলেও পরবর্তীতে এর সময়সীমা বাড়তে পারে বলে সরকারের একজন উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার এবং মিডিয়াসমূহ প্রতিমুহূর্তেই বলছেন জনগণকে মুখে মাস্ক পরিধান করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য কিন্তু দৃশ্যতঃ আমরা রাস্তা-ঘাটে বের হলেই দেখছি যে,সরকারের বেঁধে দেয়া এসব স্বাস্থ্যবিধি এবং করোনা বিধিনিষেধ দেশের অনেক জনগণই মানছেনা। ফলে দেশে করোনার সংক্রমণ দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মাস্ক পরিধানের মত এই ভাইরাসের জন্য একটি অতি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়টিকেও মানুষ ছেলেখেলায় পরিণত করেছে। কেউ মাস্ক দিচ্ছে থুতনির নিচে, আবার কেউবা মাস্ক হাতে নিয়ে দিব্যি রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অনেকেই আবার মাস্ক ছাড়াই রাস্তা-ঘাট, বাজার এবং বহুল জনসঙ্গম এলাকায় নির্ভিঘেœ ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবিষয়ে কখনও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের ধরে এরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি না মানা এসব অপরিণামদর্শী মানুষেরা বুঝতেই পারছেনা। করোনা দ্বিয়ীয় ঢেউ তাদের এইসব ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে দেশের মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। যে করোনা থেকে এখনও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে, ইটালি, ব্রাজিল, ভারতের মত দেশ বের হয়ে আসতে পারেনি সেখানে বাংলাদেশ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল শুধুমাত্র জনগণের কঠোর স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা কঠোরভাবে মানার কারণে। বর্তমানে করোনার দ্বিয়ীয় ঢেউয়েও যদি জনগণ তাদের এবং তাদের স্বজনদের জীবন বাঁচাতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তাহলে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে দেশে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। এবিষয়ে আমাদের নিজেদের ভালো নিজেদেরকেই বুঝতে হবে। করোনা এমন একটি ভাইরাস আমরা এর আগেও লক্ষ করেছি লাশের সারি দীর্ঘ হতে তেমন একটা সময় নেয়না।
এই ভাইরাস থেকে মৃত্যু ঠেকাতে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা এসমস্ত কিছুর বিকল্প নেই। এবিষয়গুলো আমাদের সবাইকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। প্রকৃতপক্ষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে জনগণের দায়িত্বশীল আচরণের কোনো বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কখনও আমাদের সবার ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের পাহাড়া দিতে পারবেনা। মূলতঃ সেটি সম্ভবও নয়, আর তাই করোনার দ্বিয়ীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে আমাদের সকলকেই একসাথে করোনার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর সবাই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা তেমন একটা কঠিন কাজ হবেনা। প্রকৃতপক্ষে এদেশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় অনেক কিছুই জনগণের মানা নামানার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সরকার যাই সিদ্ধান্ত নিক না কেণো তা যদি দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠী নেনে না চলে তাহলে তাথেকে কোনো ভালো ফলাফলই আশা করা যায়না। তাই জনগণের দায়িত্বশীল আচরণই পারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে আমাদের বাঁচাতে।

লেখক : কলেজ শিক্ষক এবং প্রাবন্ধিক